৬ অক্টোবর, ২০১৭ ২২:০৫

সীমান্তের জিরো লাইনে এক মাসে ৮০ শিশুর জন্ম, গর্ভবতী ৪শ’

শফিক আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার):

সীমান্তের জিরো লাইনে এক মাসে ৮০ শিশুর জন্ম, গর্ভবতী ৪শ’

নাইক্ষ্যংছড়ি চাকঢালায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া ২ রোহিঙ্গা নবজাতক ও তাদের মা

সীমান্তের জিরো লাইনে ৬টি রোহিঙ্গা শিবিরে এক মাস ৪ দিনে ৮০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। গর্ভবতী অবস্থায় রয়েছে আরো ৪ শত নারী। নো ম্যান্স ল্যান্ডে এক মাসে এত শিশুর জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। সদ্য জন্ম নেয়া এসব শিশু বাংলাদেশ অংশের জিরো লাইনে জন্ম হলেও তারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে এসব শিশুরা কোন দেশের পরিচয়ে পরিচিত হবে তার সঠিক উত্তর কারোর জানা নেই।

তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিগ্রহ ও নানা কারণে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর অবস্থান দীর্ঘদিনের। সীমান্ত ও দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত এসব শরণার্থীদের সন্তান জন্ম নেয়ার প্রবনতাও লক্ষনীয়। কিন্তু সীমান্তের জিরো লাইনে (আন্তর্জাতিক সীমারেখা) গর্ভবতী নারীর আনুপাতিকে হারে এক মাসে ৮০ শিশুর জন্ম বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। আর এই বিরল ইতিহাসের সাক্ষী হল বাংলাদেশ।

গত ২৫ আগষ্ট হতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস ৪ দিনে সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২টি ইউনিয়নের সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থিত ৬টি অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮০ শিশুর জন্ম হয়েছে। নতুন করে জন্মের অপেক্ষায় দিন গুনছে আরো ৪ শত গর্ভবতী নারী। ইতিমধ্যেই সদ্য জন্ম নেয়া এসব শিশু ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনা হয়েছে।

নবাগত রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকলেও জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের কোন সুযোগ নেই। মিয়ানমার সরকার স্বীকৃতি দিক বা না দিক নো ম্যান্স ল্যান্ডে জন্ম নেয়া নবাগত শিশুরা বাংলাদেশের বিধান অনুযায়ী জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা শিশু তথা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই বিবেচিত হবে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ঘুমধুম ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। নো ম্যান্স ল্যান্ডে জন্ম নেয়া ৮০ শিশু রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ তাদেরকে স্বীকৃতি দেবে না।

এদিকে নো ম্যান্স ল্যান্ডে জন্ম নেয়া শিশুদের মায়েরা জানান, পেটে সন্তান ধারণ করে তারা পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয়গ্রহণ করার পর সন্তান প্রসব করেছেন। অনেক গর্ভবতী নারী পাহাড়ের ঢালুতে সন্তান জন্ম দিয়ে মারাও গেছেন। সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারায় তারা আল্লাহ’র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মাথা গোজার স্থায়ী ঠাঁই না হওয়ায় জন্ম নেয়া অধিকাংশ শিশুর এখনো পর্যন্ত নাম রাখা হয়নি।

অপরদিকে এসব শিশুদের নাগরিকত্বের বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক জানান, ক্যাম্পে অনেক গর্ভবতী নারী ছিল এবং সন্তানও জন্ম দিয়েছেন। তারা চিকিৎসা সেবাও যথারীতি পাচ্ছেন। দেশের প্রচলিত নিয়ম ও আইন আছে, সে আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা রয়েছে সেটাই করা হবে।


বিডি প্রতিদিন/৬ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর