শিরোনাম
৮ অক্টোবর, ২০১৭ ১৯:৫১

বাবা-মা হত্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করছে রোহিঙ্গা শিশুদের

শফিক আজাদ,উখিয়া(কক্সবাজার):

বাবা-মা হত্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করছে রোহিঙ্গা শিশুদের

সংগৃহীত ছবি

গত ২৮আগস্ট সকাল থেকে যেন তার মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। গ্রামে সেনাবাহিনী হানা দিতে পারে এমন ভয় ছিল আসমাইরার। কিন্তু সে বিষয়টি তার মা এবং বাবাকে বললেও তেমন গুরুত্ব দেননি। 

ওইদিন বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি টহলদল হানা দেয় তাদের বাড়ীতে। ততক্ষণেও সে জানতো না তার নামটি এতিম খাতায় লিখতে হবে। হঠাৎ এক গুলি শব্দ শুনে সে বিস্মিত। দেখতে পান তার মা লতিফা বাড়ীর বারান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে চিৎকার করছে। বাবা মায়ের দিকে এগিয়ে গেলে তাকেও গুলি করে কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় বাবা। তখন বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরে আসার পর আমি আর বাবা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য সীমান্তের কোয়াংছিবন এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সামনে পড়ে যাই আমরা। 

তখন আমাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশু মারা যায়। এতে আমার বাবাও রয়েছে। এমন কথা বলতে না বলতে কেঁদে উঠে শিশু আসমাইরা। সে আশ্রয় নেয় উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার পর অনেক কষ্ট হয় তার সাথে কথা বলতে। পরে সে আরো জানান, তার মা,বাবা তাঁকে খুবই আদর করতো। এখন তাদের মতো কেউ দেখতে পারেনা। আদর করেনা। 

মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীরা লোকজনকে বেপরোয়া হত্যা পাশাপাশি বাড়িঘরে আগুন দেয়। তাদের বাড়ীও পুড়ে দিয়েছে তারা। মিলিটারির গুলিতে চোখের সামনেই প্রাণ হারান তার মা এবং বাবা। এখন আর কেউ নেই। 

মা-বাবা হারানো আসমাইরা কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের পশ্চিমে চাচা মাওলানা হাশিমের ঝুপড়িতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। তারা আগেই পালিয়ে এসেছিলেন। এখন তাদের সঙ্গেই আছে সে। 

শুধু আসমাইরা নয়, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তার মতো প্রায় কয়েক হাজার এতিম শিশু। ক্যাম্পের পথে পথে মানুষের সারি, তাঁবুতে তাঁবুতে শিশুর কান্নার রোল। আর পেছনে পড়ে আছে স্বজন হারানোর দুঃসহ জীবনের গল্প। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ সন্তান। কেউ কেউ মা-বাবা। এসব নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ এখনও নিজের ভিটেমাটিতে ফেরার স্বপ্ন দেখেন।
অথচ এদের সব কিছু বন্দী এখন সীমান্তের কাটা তারের বেড়ায়। আটকে আছে তাদের ভাগ্য। কাদঁছে বিশ্বমানবতা।

বিডিপ্রতিদিন/ ০৮ অক্টোবর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর