শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

পল্টির রকম সকম

পল্টির রকম সকম

আমার এক বন্ধু অনেক জোড়া জুতোর তলা ক্ষয় করেও যখন চাকরি পেল না, তখন সিদ্ধান্ত নিল চাকরি নয়, বরং অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কী করা যায়, কী করা যায়, ভাবতে ভাবতে সে একটা মুরগির ফার্ম দিল। গতকাল তাকে চিন্তিত দেখে আমিও চিন্তা দ্বারা আক্রান্ত হলাম- কী রে কি হয়েছে? বন্ধু বলল- আর বলিস না দোস্ত। এত টাকা খরচ করে ফার্মের জন্য একটা সাইনবোর্ড বানালাম, অথচ এখন এটা বদলাতে হচ্ছে। আমি কৌতূহল প্রকাশ করলাম, সাইনবোর্ড বদলাতে হবে কেন? ওই দিনও তো দেখে এলাম সাইনবোর্ডটা একদম নতুন। বন্ধু ভারি গলায় বলল- সাইনবোর্ড বদলাতে হবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য। বর্তমানে 'পল্টি' নিয়ে খুব সমালোচনা হচ্ছে জানিস তো! আমার ফার্মের সাইনবোর্ড দেখে অপেক্ষাকৃত স্বল্প শিক্ষিতরা মনে করছে, আমিও বুঝি পল্টির সঙ্গে জড়িত। তাই আগের সাইনবোর্ড পাল্টিয়ে নতুন সাইনবোর্ড লিখব- 'হাইফাই মুরগির ফার্ম।' আমি অতি উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আগের যে সাইনবোর্ডটা দেখে স্বল্প শিক্ষিতরা ভাবত তুই পল্টির সঙ্গে জড়িত, সেখানে কি লেখা ছিল? বন্ধু বলল-হাইফাই 'পল্ট্রি' ফার্ম। এবার বুঝুন অবস্থা! 'পল্টি' নিয়ে কী পরিমাণ আলোচনা সমালোচনা হলে মানুষ 'পল্ট্রি'কে 'পল্টি' মনে করতে পারে। আমি এক মাছওয়ালার কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাছ কিনি। আমি তার পুরনো কাস্টমার হওয়া সত্ত্বেও প্রায়ই আমাকে তার পল্টির শিকার হতে হয়। একদিনের ঘটনা বলি। আমাকে সে নিজ থেকেই ফোন করল, 'স্যার খুব তাজা মাছ আছে। চইলা আসেন স্যার। আমি তাজা মাছের লোভে ১০ মিনিটের মধ্যে বাজারে পৌঁছলাম। গিয়ে দেখি তাজা মাছের বংশও নেই। এমনকি মাছওয়ালাও নেই। মাছওয়ালার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম- তাজা মাছ কই? ছেলে বলল, আব্বায় একটু আগে বেইচ্চা লাইছে। বুঝলাম, বেটা চড়া দাম পেয়ে আমার সঙ্গে পল্টি নিয়েছে। ঘটনা এখানেই শেষ। তবে পল্টিবাজরা কী চমৎকারভাবে অজুহাত দাঁড় করাতে পারে সেটা বোঝাতে আরেকটু বলতে হবে। খানিক বাদে ছেলের বাবা অর্থাৎ পল্টিবাজ মাছওয়ালা এলো। আমি কিছু বলার আগেই সে বলতে লাগল- স্যার, আপনে রে ফোন করার সময়ও মাছগুলা তাজা এবং জীবিত ছিল। কিন্তু বাজারের পাশেই আৎকা একটা ককটেল ফোটার আওয়াজ হইল। মাছগুলা এই আওয়াজ শুইনা হার্ট অ্যাটাক কইরা মারা গেল। যেই মাছের হার্টের প্রবলেম আছে, সেই মাছ তো আপনের জন্য রাখতে পারি না। তাই বেইচ্চা দিছি। আসলে স্যার, মাছগুলা এত অল্প আয়ু নিয়া জন্মাইছিল... আমি পল্টিবাজ মাছওয়ালার ফালতু অযুহাত পুরোটা না শুনেই বিদায় নিলাম। কিন্তু কয় জায়গা থেকে আর বিদায় নেব। সব জায়গায়ই পল্টি। পুরনো কাজের বুয়াটা বদলে এই মাস থেকে নতুন একটা বুয়া নিয়েছিলাম। মাসের চতুর্থ দিনই সে পল্টি নিয়ে বসল। আমার বাসার কাজ ছেড়ে একই বিল্ডিংয়ের সাততলায় কাজ নিল। জিজ্ঞেস করলাম কেন এমন করেছে। সেও তার পল্টিবাজিকে দোষমুক্ত করতে দাঁড় করাল অজুহাত- স্যার, আপনের বাসা তো দুই তলায়। তাই লিফটে ওঠা-ই লাগে না। কিন্তু আমার খুব লিফটে ওঠার শখ। তাই সাততলায় কাজ নিছি। লিফটে ওঠা-নামা করা স্যার বেজায় আরাম। আপনেই কন স্যার, আমি বুয়া বইলা কি আমার শখ-আহ্লাদ থাকতে পারে না?

 

 

সর্বশেষ খবর