সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ট্রাকের গল্প

ইকবাল খন্দকার

ট্রাকের গল্প

স্মৃতিশক্তি যত খারাপই হোক, ছোটবেলায় পড়া ছড়া কবিতা কেউ সহজে ভোলে না। ভুলতে পারে না। যে কারণে আমরা এখনো মনে রেখেছি সেই ছন্দবদ্ধ কথাগুলো-'অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাবো পেড়ে।' তবে একটা ব্যাপার কী জানেন, যখন এ কথাগুলো লেখা হয়েছিল তখন দেশের পরিস্থিতি একদমই শান্ত ছিল। হরতাল অবরোধ ছিল না। যদি এখন লেখা হতো, তাহলে হয়তো কথাগুলো হতে পারত এমন-'অ-তে অবরোধ ঐ চলছে টানা, আ-তে আমজনতা পায় না খানা।' রাস্তাঘাটে যদিও অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব নেই, তবে এটা কিন্তু সত্য, টানা অবরোধ চলছে। আসলে যে মানের অবরোধ হচ্ছে, এর পাশাপাশি কিছু হওয়াটাই বোধহয় স্বাভাবিক। আমার এক বন্ধু বলল, আমি খুব টেনশনে আছি রে দোস্ত। আমি জানতে চাইলাম- টেনশন কী জন্য? বন্ধু বলল- আমাদের বাংলা অভিধানগুলো তো ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়ে গেছে। আমি টেনশন করছি, কারণ আমার মনে হচ্ছে বাংলা অভিধানগুলো আবার সংশোধন করতে হবে। তার মানে বাড়তি ঝামেলা। বাড়তি খরচ। আমি বললাম- বুঝলাম তোর কথা। কিন্তু বাংলা অভিধান কেন সংশোধন করতে হবে, সেটা তো বুঝতে পারছি না। বন্ধু বলল- বর্তমানে বাংলা অভিধানগুলোতে লেখা আছে অবরোধ অর্থ নাকি আটকা থাকা, বন্ধ থাকা ইত্যাদি। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনোই মিল নেই। বরং অবরোধ মানে ব্যাপক খোলামেলা, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম ইত্যাদি। অতএব, 'অবরোধ এর আগের সব অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ বসাতে হবে। এখন থেকে অবরোধ শব্দটার অর্থ হতে পারে- লাখ লাখ গাড়ি অথবা বিরোধী দলের আত্দগোপন। আমার আরেক বন্ধু হাসতে হাসতে কাহিল হয়ে গেল আমার চোখের সামনেই। জিজ্ঞাসা করলাম- কিরে বেটা, অকারণে হাসছিস কেন? বন্ধু আরও কিছুক্ষণ হেসে নিয়ে বলল- অকারণে হাসছি নারে বেটা, অকারণে হাসছি না। হাসির পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। জিজ্ঞেস করলাম- কী কারণ? বন্ধু বলল- হাসির কারণ হচ্ছে অবরোধ। আমি বললাম- অবরোধ কোনো হাসির কারণ হলো? অবরোধ তো ভয়ঙ্কর জিনিস। বন্ধু বলল- আগে ছিল, এখন নেই। যদি থাকত তাহলে আমার চাচা এই কথা বলত না। আমি জানতে চাইলাম- তোর চাচা আবার কী বলল? বন্ধু বলল- আমার চাচাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম চাচা, এই লাগাতার অবরোধ বলে একটা কথা শোনা যায়, এই 'লাগাতার' শব্দটার মানে কী? চাচা বলল- খুবই সহজ অর্থ। যখন কারও মাথার তার ছিঁড়ে যায়, তখন সেই তারটা জোড়া লাগানো জরুরি হয়ে পড়ে। লাগাতার মানে হচ্ছে লাগা তার। মানে তার লাগা। অর্থাৎ ছিঁড়া তার জোড়া লাগা। বন্ধু তখনো খ্যাকখ্যাক করে হাসছে। সে এই কথার মধ্যে কী মজা বা ইঙ্গিত পেয়েছে কে জানে! আমার বাড়িওয়ালা হঠাৎ করেই সেদিন জানিয়ে দিল আগামী তিন মাসের ভাড়া একসঙ্গে দিতে হবে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম- মানে কী! নতুন ভাড়াটিয়ারা দুই তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে ওঠে। আমিও উঠেছিলাম। কিন্তু এখন তো পুরনো হয়ে গেছি। এখন আবার দুই তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম দেব কেন? বাড়িওয়ালা বলল-আজকে বাসা থেকে ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছি, আবার কবে বের হতে পারব কে জানে। শোনেননি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডেকেছে? আমি মেজাজ খারাপ করে বললাম- যারা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামে তারা অবরোধকে ভয় পায় না। অথচ আপনি বাইসাইকেলে চড়ে ভাড়া নিতে আসেন, আপনার অবরোধ নিয়ে এত ভয়? বাড়িওয়ালা দুষ্টু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল- বাইসাইকেল দিয়ে আসলেও তো ঝুঁকি থাকে। যদি অবরোধকারীরা সাইকেলের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়! গতকাল একজন খুব হতাশার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল- এই যে কিছু একটা হলেই অবরোধ ডাকা হচ্ছে, এই অবরোধের শেষ কোথায়? অবরোধের কারণে যে দেশ জাতির ক্ষতি হচ্ছে, এই ক্ষয় ক্ষতির দায় কে নেবে? পাশ থেকে একজন বলল- এই দায় দায়িত্ব যার অর্থাৎ যার কারণে এত কিছু হচ্ছে, সে কিন্তু কখনোই কোনো দায়টায় নেবে না। প্রথমজন খেঁকিয়ে উঠল- কেন নেবে না! নিতেই হবে। আপনি শুধু বলেন কে সে। কার জন্য এই লাগাতার অবরোধ হচ্ছে! পাশের লোকটা বলল- তার নাম বালির ট্রাক।

 

সর্বশেষ খবর