সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
শীতের গল্প

গোসলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

গোসলের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি

গোসলখানা থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করছে "মাগো...বাবাগো...আমারে বাঁচাও ...প্লিজ হেল্প মি..."। কী বিপদ হলো আবার! গোসলখানায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় পাওয়া যায়। তাই দেখে মেয়েরা চিৎকার করতে পারে। কিন্তু একটা ছেলে? তাহলে কী বাথরুমে সাপ ঢুকলো। ভয়ে পেয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম, কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলাম। আরেকজন এসে আমাকে ভয় পেতে নিষেধ করে বলল, "ভাই সতের দিন পর গোসল দিতেছ, ঠাণ্ডা পানির ছ্যাকা নিতে পারতেছ না"।

শীত মানুষ গোসল করবে না এটাই স্বাভাবিক। গোসল করলে চিৎকার করবে এটাও স্বাভাবিক। সেদিন বন্ধু গোসল করে বের হতে হতে বলল, "এই সিজনের শেষ"। জিজ্ঞেস করলাম 'কী'? সে হেসে বলল 'গোসল'। পরে জেনেছিলাম পুরো শীতের সিজনে সে একদিনই গোসল করে!

তিন দিন গোসল না করে রীতিমতো আমি গর্বিত। যাকেই পাচ্ছি বলে বেড়াচ্ছি যে তিন দিন গোসল করিনি। শীতে গোসল করার চেয়ে চুলায় ঝাঁপ দেওয়া সহজ। বাসার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম 'গোসল না করে আমি তিন দিন, তুমি?' উত্তরে কিছু না বলে সে তার হাতের আঙ্গুল গুনছে। এক হাত ইতোমধ্যে শেষ। দ্বিতীয় হাত শুরু করেই সে থেমে উত্তর দিলো 'আট দিন ভাই'। হতাশ হয়ে পড়লাম উত্তর শুনে। এমন মানুষও পৃথিবীতে বাস করে।

তো গোসলহীন সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করার লোভ থেকে যাকে পাই তাকেই জিজ্ঞাসা করি 'ভাই আপনি টানা গোসলহীন কয়দিন কাটিয়েছেন?' আমার এসব প্রশ্নের কারণে ইদানীং অনেক ভদ্রলোকই আমাকে এড়িয়ে চলেন। তো এক ভদ্রলোককে পেলাম যার শরীর থেকে অসহনীয় পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। তাকে ডেকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম, 'আমরা একটা নতুন বডিস্প্রে বাজারে ছাড়তে চাচ্ছি। এ জন্য আমরা জরিপ করছি যে শীতে কী পরিমাণ মানুষ গোসল না করে থাকে। মার্কেট যাচাই করা আরকি। কিছু প্রশ্ন করব কেবল ঠিকঠাক উত্তর দেবেন'। কথা শুনে ভদ্রলোক অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। শুরু হলো আমাদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। শেষ গোসল করেছেন কবে? প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক কিছুক্ষণ মাথা চুলকালেন। তারপর কনফিউশনের সঙ্গেই উত্তর দিলেন, 'এই ধরুন দশ থেকে বারো দিন'।

: শীত! কি?

: প্রচুর ব্যবসা হবে। আচ্ছা গোসল না করে থাকলে সমস্যা হয় না? আমার সমস্যা হয় না! তবে আমার রুমমেটরা সবাই বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে ট্যুরে যাওয়ার নাম করে!

: কেন গোসল করেন না? জলাতঙ্ক হয়েছে? নাহ! তবে জলে কিঞ্চিত আতঙ্ক আছে।

ভদ্রলোককে একটা স্যালুট দিয়ে বাসায় ফিরে দেখলাম আরেক ছোট ভাই মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। ঝগড়ার কারণ সে গোসল করেনি। পুরো ঘটনা এমন যে আন্টি ঘোষণা দিয়েছেন গোসল না করলে ভাত দেবে না! সে আন্টির কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, 'খাবার আগে হাত ধুতে বলা হয়েছে, গোসল করার কথা না'। সারা বছর খাবার আগে ভালো করে হাত ধুতে বলা হবে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে কষ্ট করে হাত পরিষ্কার করে যাওয়ার পর খাবার দেওয়া হবে না এটা অন্যায়! কিন্তু গন্ধ কিসের? নিশ্চয়ই ময়লাওয়ালা ময়লা নিয়ে যায়নি। একটু পর আবিষ্কার করলাম গন্ধের উৎস ময়লার ঝুড়ি না, ঘরপলাতক ছোট ভাইয়ের শরীর! অনেক আইডিয়া দিয়েও বেটাকে বাড়ি থেকে বের না করতে পেরে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম- যেহেতু আন্টি গোসল না করার অপরাধে তাকে খাবার দেয়নি, সেহেতু আমরা গোসল করে গেলেই উনি খাবার দিতে বাধ্য! অতএব আমরা সবাই বাথরুমের সামনে লাইন দিলাম, গোসল করলেই খাবার!

 

সর্বশেষ খবর