সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যাড+মিন্টন

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

ব্যাড+মিন্টন

পাশের ছাদে ব্যাডমিন্টন খেলা হচ্ছে। একশ ওয়াটের চারটা বাল্ব জ্বালিয়ে ঝকমকা করে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকা। নেটের দুই পাশে র‌্যাকেট হাতে নাচছে দুই পরী। বাসার ছাদেই আছি না কহেকাফে চলে এসেছি ভাবছিলাম। মুখে মশা গিয়ে বুঝিয়ে দিল এতক্ষণ হাঁ করেছিলাম। মশা গলায় আটকে যাওয়ায় কেমন চুলকানির মতো হচ্ছে। অনেক কষ্টে কাশি দমানোর চেষ্টা করছি। অবশেষে গগনবিদারী কাশির শব্দে মশা জানের ভয়ে দে ছুট। মেয়ে দুটো খেলা বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বললাম 'অপ্সরীদ্বয়, অমন হাঁ করে তাকিয়ো না, এই মশাটার স্বভাব-চরিত্র সুবিধার না'। মনের কথা পড়তে পেরে কিনা জানি না দুজন একসঙ্গে খিল খিল করে হেসে উঠল। এমন মিষ্টি মধুর হাসি কেউ কোনোদিন শুনেছে বলে মনে হয় না। বাতাসে কেমন ঢেউ কেটে ঢেউ কেটে অন্তর চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। বেশিক্ষণ ছাদে থাকা হলো না। ইতোমধ্যেই অনেক কাজ জমে গেছে হাতে। প্রথম কাজ নানাবাড়ি যাওয়া আটকাতে হবে। সবার না, আমার একার। এ কয়দিন পরীক্ষার কারণে ছাদে আসা হয়নি। নেট টাঙানো ও লাইটিংয়ের অভাবে মনে হলো অনেকদিন ধরেই খেলছে এবং খেলবে।

দ্রুত গেলাম বন্ধুর ফার্মেসিতে। পেটের অপারেশনের আগে একটা স্যালাইন খাওয়ানো হয় রোগীদের। এই স্যালাইনের কাজ হলো আধা ঘণ্টুার মধ্যে পেট ক্লিয়ার করা। বাসার নিচে এসে পুরো স্যালাইন ঢকঢক করে গিলে দিলাম। রাত ১০টায় সবাই নানু

বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আমি বাসার ছাদে, তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের অপেক্ষায় আছি। খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম ছাদে রেখে রেস্টে গেছে হয়তো। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। এবার দুই পরীর সঙ্গে মাঝ বয়সী এক মহিলা যোগ হয়েছেন। আমায় দেখে লাজুক হাসল দুজন একসঙ্গে। এমন হাসলে প্রেমে না ফেঁসে উপায় আছে? কিন্তু তারা তিনজনে খেলবে কী করে? জোড়া মেলারও তো ব্যাপার স্যাপার আছে? এক পাশে আন্টি ও একটি মেয়ে দাঁড়াল, অপর পাশে অপ্সরী। কিন্তু তারা খেলা শুরু করছে না কেন? সুন্দরী মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসল। আন্টির কানে কানে কি জানি বলল। তবে ভাব দেখে স্পষ্ট বোঝা গেল আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে। ইয়েস! তাদের জোড়া পুড়ছে না বিধায় আমাকে নেওয়া হবে। আচ্ছা আমি কি আন্টির দলে খেলব না কোনো সুন্দরীর দলে? বেশি সুন্দরীর দলে খেললে, আমরা জিতে গেলে রীতি অনুযায়ী হ্যান্ডশেক করবে, বেশি আবেগি হলে জড়িয়ে ধরতেও পারে। মোট দুই গেম খেলব। এক গেম আন্টির সঙ্গে খেলব, আন্টিকেও পটাতে হবে। আনটি আমাদের দিকেই এগিয়ে এলেন। উনাদের ছাদ থেকে আমাদের ছাদ তিন চার ফুট দূরে। দুই রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে সুন্দরমতো কথা বলা যায়। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার ভান করলাম।

: এই ছেলে, শোনো।

: জী আন্টি বলুন!

: কয় তলায় থাকো?

: জী আন্টিট, চার তলায়।

: ফ্রি আছো?

: জী আন্টি।

: আমাদের ছাদে আসতে পারবা?

আহ! এই আহ্বানের অপেক্ষায়ই ছিলাম। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি পেছন থেকে দুই সুন্দরী মনে মনে বলছে, 'আমাদের সঙ্গে জয়েন করবে'?

: জী আনটি পারব, এক্ষুণি আসব?

: হ্যাঁ আস, তুমি খুব সুন্দর করে আন্টি বল, লাইক ইট।

আমি মাথা নাড়লাম। কথা বলার সময় নেই। স্পাইডারম্যানের মতো উরেধুরে চারতলা থেকে নিচে নেমে আবার চার তলায় উঠলাম। আমার অপেক্ষায়ই ছিল। তিনজনই এগিয়ে এলো।

: পরিচয় করিয়ে দেই, ওরা দুজন আমার কাজিন। ছোট মামার মেয়ে। কয়েকদিন হলো বেড়াতে আসছে। তুমি যেতেহু আমাকে আন্টি বলেছ, ওরাও তোমার আন্টি।

পেছন থেকে দুজন একসঙ্গে 'হাই আংকেল' বলে হাত নাড়লো। ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে কোনোমতে হাত নাড়লাম, হাই।

: ওই ছাদে থাকতে কথা বলার সুজন না দিয়েই তুমি দৌড় লাগালে, আসলে হয়েছে কি, আমাদের ফেদারটা পড়ে গেছে। তোমাকে বলতে ছাইছিলাম উপরে আসার সময় খুঁজে নিয়ে আসতে। পুরা কথা না শুনেই তুমি চলে এলে। ফেদারটা একটু তুলে দেবে? তোমার ছোট আন্টিরা খেলবে? 'বড় আন্টির' কথায় মনে মনে শুধু দুটি কথাই বলতে পেরেছিলাম, 'আমারে কেউ মাইরালা'...

 

 

 

সর্বশেষ খবর