সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমরা এখন ঢাকায়

ইকবাল খন্দকার

আমরা এখন ঢাকায়

ঈদের ছুটি শেষ আরও বেশ কদিন আগেই। ছুটি কাটানোর জন্য যারা গ্রামে গিয়েছিলেন তারা এখন ঢাকায়। তবে এরই মধ্যে অনেকের জীবনেই অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। আমার এক প্রতিবেশী ঢাকায় ফিরেছে গতকাল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ছুটি কেমন কেটেছে? প্রতিবেশী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর দিলেন না। বরং আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর বললেন, মাটির টানে গ্রামে গিয়েছিলাম। এবারের যাওয়া সার্থক হয়েছে বলতে পারেন। আমি খুশি হয়ে বললাম, তাহলে তো খুবই ভালো। খুবই ভালো। প্রতিবেশী মৃদু ধমক দিয়ে বললেন, খুশিতে এত গদগদ হয়ে যাওয়ার কিছু নেই। মাটির টানে গ্রামে গিয়েছিলাম আর সেই যাওয়া সার্থক হওয়ার মানে কিন্তু খুব সুখকর কিছু না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। রাস্তা ভাঙা ছিল। সেই ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে রিকশার চাকা গেল বাঁকা হয়ে। আমি ছিটকে পড়লাম রিকশা থেকে। তারপর কাদা মাটিতে মাখামাখি। কিছু মাটি আমার নাকে মুখেও ঢুকেছে। মাটির টান আর কাকে বলে! ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে আরও অনেকেই অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। আমার এক চাচার কথাই ধরা যাক। পরশুদিন ঢাকায় ফিরেই তিনি আমাকে ফোন দিলেন। তার কণ্ঠে রাজ্যের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আমি খানিকটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সমস্যা চাচা? চাচা বললেন, সমস্যা কিনা ঠিক বুঝতে পারতেছি না। তবে মনে হইতেছে সমস্যা। ঢাকা ফেরার সময় গাড়িতে যে ঝাঁকুনিটা লাগছে, সেই ঝাঁকুনিতে মনে হয় দুর্ঘটনা ঘইটা গেছে। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, কী রকম দুর্ঘটনা? চাচা বললেন, ঝাঁকুনির চোটে কিডনি মনে হয় আর আগের জায়গায় নাই। দুই-চাইর আঙ্গুল নিচে নাইমা গিয়া থাকতে পারে। আমি জানতে চাইলাম, আপনার এমন মনে হওয়ার কারণ? চাচা বললেন, কারণ আবার কী মিয়া! যেই ঝাঁকুনি লাগছে, এই ঝাঁকুনিতে আমার নাতির দাঁত পর্যন্ত নইড়া গেছে আর আমার কিডনি নড়তে পারে না? আমি আর কথা বাড়ালাম না। কারণ ইতিমধ্যে আমার বোঝা হয়ে গেছে, চাচার সব ক্ষোভ ভাঙা রাস্তার ওপর। আরেকজনকে পাওয়া গেল, যার সব ক্ষোভ ফিটনেসবিহীন গাড়ির ওপর। ঢাকায় ফেরার পরপরই তার সঙ্গে আমার দেখা। জিজ্ঞেস করলাম, জার্নি কেমন হলো? উত্তর পেলাম, অত্যধিক চমৎকার। মনে হচ্ছিল আমি সেই শৈশবে ফিরে গেছি। আহা শৈশব! স্বপ্নের শৈশব! আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, কী হয়েছে বলেন তো! এবার খেঁকিয়ে উঠল মানুষটা, হেই মিয়া, কী হয় নাই তাই বলেন! ছোটবেলায় দোলনায় উঠছেন? আপনি না উঠলেও আমি উঠছি। তো সেই দোলনা যেইভাবে দোল খাইত, ঠিক একইভাবে দোল খাইছে বাস। নাট বল্টু না থাকলে দোল খাইবো না? এই দোলনা মার্কা বাসগুলো না থাকলে জার্নিটা ভালো হতে পারত। কী হলে কী হতে পারত, সেসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কারণ চিন্তা-ভাবনা করার আরও অনেক সাবজেক্ট আছে। সব সাবজেক্ট বাদ দিয়ে মানিব্যাগের বিষয়টা নিয়েই চিন্তা করা যাক। ঈদের শপিং, সালামি, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে এই যে আপনি আপনার সর্বস্ব খুইয়ে এসেছেন, এদিকে আবার মাসের শেষ, এই অবস্থায় আপনার দিন চলবে কী করে? নতুন মাসের বেতন পেতে তো এখনো বেশ কদিন বাকি। আমার এক বড় ভাই বললেন, এই কদিন একটু শান্তিতে ঘুমুতে পারব। আমি অবাক হলাম, মানিব্যাগে টাকা নেই। অথচ আপনি শান্তিতে ঘুমুতে পারবেন। বুঝলাম না ব্যাপারটা। বড় ভাই বললেন, তোর ভাবীর একটা বদভ্যাস আছে। তক্কে তক্কে থাকে আমি কখন ঘুমুবো। যেই দেখবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, অমনি সে আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা সরাবে। বিষয়টা যেদিন আমি জানতে পারলাম, সেদিন থেকে আমার আর সেভাবে ঘুম হয় না। এক চোখ দিয়ে ঘুমাই, আরেক চোখ দিয়ে মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু যেহেতু এখন মানিব্যাগ খালি, অতএব তাকিয়ে থাকতে হবে না। আরামসে ঘুমুবো। শান্তি, ঘুম শান্তি।

 

সর্বশেষ খবর