সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপন বিরতি

অনামিকা মণ্ডল

বিজ্ঞাপন বিরতি

টিভি বিজ্ঞাপনগুলোর পোস্টমর্টেম করতে করতে মহাসমারোহে উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের প্রোগ্রাম দেখছিলাম। পাশে ছিল ছোট ভাই। আজ তার অভিনীত প্রথম নাটক টিভিতে প্রচারিত হওয়ার কথা। এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজমান। টিভি চ্যানেলও এতবার নাটকের প্রচারণা চালায় নাই, যতটা ও চালিয়েছে। একসপ্তাহ আগে থেকে পাড়া প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধব সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে অমুক দিন অমুক চ্যানেল দেখতেই হবে। স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে ফেসবুক সয়লাব করে ফেলেছে। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল, এই পোস্টগুলোর প্রত্যেকটা ট্যাগ করেছে আমাকে।

যাই হোক, নাটক শুরু। ঘোষণা আসল, শুরু হতে যাচ্ছে অমুক প্রেজেন্টস তমুক নিবেদিত অমুক তমুক লালিত পালিত নাটক পাগল যোগ আমি, পাগলামি। ছোট ভাইয়ের উৎসাহ ছিল দেখার মতো যেন বাউন্ডারি লাইন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিত ছয় হওয়া বলটাকে ধরে চার বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঠিক তখনই নেমে এল অন্ধকার! টিভি স্ক্রিন ধাম করে অফ হয়ে গেল। কারেন্ট নাই। ছোটভাই প্রায় কাঁদো কাঁদো। আমি প্রস্তাব করলাম পাশের এলাকায় মামার বাসায় গিয়ে টিভি দেখা যাক। সে রাজি। বেরিয়ে পড়লাম। প্রায় ১৫ মিনিট সেমি দৌড় দিয়ে পৌঁছালাম সোজা টিভির রুমে। দেখলাম নাম দেখানো হচ্ছে। টিভি চ্যানেলকে এই প্রথমবারের মতো ম্যারাথন বিজ্ঞাপন চালানোর জন্য মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম। তারা ছিল বলেই নাটকটা আজ পুরোপুরি দেখতে পারব। নাটক শুরু। চলছে। টান টান উত্তেজনা। কাহিনীতে নয়, কখন ভাইকে দেখা যায় সেটা নিয়ে রহস্যজনক আবহাওয়া বিরাজমান। ঠিক সেই সময়, একদম ঠিক সেই সময় শুরু হলো বিজ্ঞাপন। হঠাৎ মনে পড়ল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়নি। ঝট করে মোবাইলটা বের করে পট করে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেললাম- ওয়াচিং ছোট ভাইয়ের নাটক। পনের মিনিটে প্রায় একশ লাইক আর পনেরটা কমেন্ট পড়তে পড়তেই শুরু হয়ে গেল নাটক। আবার সবাই মন দিয়ে নাটক দেখছি। নাটক চলছে তো চলছেই। স্ক্রিনে একটি রিকশা দেখা যেতেই ছোট ভাইয়ের লাফ। সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখি বিজ্ঞাপন শুরু। ছোট ভাইয়ের লাফও থামল। লাফের কারণ, নাটকের ওই রিকশাটা ও চালাচ্ছিল। এক্ষুনি ওকে দেখা যাবে। বেশ ভালো লাগল শুনে। বিজ্ঞাপনকে আবারও ধন্যবাদ জানালাম। একটু পর পর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বলেইতো আমরা প্রতিটা সিকোয়েন্স বুঝে বুঝে মজা নিয়ে আগাতে পারছি। হঠাৎ কিচেন থেকে চিৎকার! সবাই দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি মামি চিৎকার করে বলছে, মামার কেনা এক হাজার টাকার ইলিশ মাছটা বিড়াল নিয়ে পালিয়ে গেছে। সবার মাথায় হাত। সবাই আশপাশে দৌড় শুরু করলাম বিড়াল ধরার জন্য। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাছসহ বিড়াল পাওয়া গেল ডাস্টবিনের সামনে। সবার মন খারাপ। মুড অফ করে আবার টিভির সামনে এসে বসলাম। ছোটভাইকে বললাম, সরি ভাই। তোর নাটকটা দেখতে পারলাম না। সে বলল, কেন? নাটকতো এখনো শেষ হয়নি। ইভেন সেই যে বিজ্ঞাপন দেখে গেছিলা, সেটাই এখনো চলছে। মাঝখানে খবরের একটা ব্রেক ছিল। আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল এই কথা শোনার পর। বিজ্ঞাপনের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টিভি স্ক্রিনে নজর দিলাম। নাটক শুরু হলো, সেই রিকশাটা চলছেই তো চলছেই। এই সময় আমার ওর ফোন। ছোট ভাইয়ের চোখ এড়িয়ে বেলকনিতে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ফিরে আসলাম। টিভিতে বিজ্ঞাপন চলছে, সে ঠিক আগের মতো টিভির দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, আমি যে এতক্ষণ নাটক দেখিনি সেটা সেও দেখেনি। ওভারস্মার্টগিরি দেখিয়ে ওকে বললাম, তোর ক্যামেরা ফেস ভাল তো। নাটকে তোকে খুব সুন্দর লাগছিল। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, আমাকে তো এখনো দেখানো হয়নি। রিকশাটার ব্যাক সাইড দেখানো হয়েছে মাত্র। আমার পায়ের একটা শট দেখানো হয়েছে। মুখটা একটু পরেই দেখানো হবে। আমি পুরো বোকা বনে গেলাম। নাটক দেখার পুরো আগ্রহ হারিয়ে বললাম- চাইলে দিয়ে দেব কলিজার হাফ, নাটক দেখা থেকে কর মোরে মাফ।

 

সর্বশেষ খবর