শিরোনাম
সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
নিরাপত্তা নিয়ে

নো টেনশন

ইকবাল খন্দকার

নো টেনশন

কার্টুন : কাওসার মাহমুদ

ম্যালাদিন আগে শোনা ঘটনা। আমার এক বড় ভাইয়ের এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিল। প্রায় প্রতিরাতেই তখন অমুক-তমুকের বাড়িতে চুরি-ডাকাতি হতো। রাস্তাঘাটেও ছিনতাই হতো। এলাকার লোকজন গেল চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যান আগে থেকেই এলাকার এই নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। লোকজনের মুখ থেকে শুনে আরও অবগত হলেন। তিনি ক্ষেপে গেলেন। বললেন, আমি আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও নিরাপত্তাহীনতা দূর করব। এলাকার মানুষের মনে শান্তি ফিরিয়ে দেব। চেয়ারম্যান সাহেব মাঠে নেমে গেলেন। এলাকা থেকে নিরাপত্তাহীনতা দূর করার জন্য সব রকমের চেষ্টা-সাধনা করতে লাগলেন। নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া করে বলে দিলেন যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য। দায়িত্বে অবহেলা করলে কী কী শাস্তি আছে, সেটাও ঘোষণা করে দিলেন। সবশেষে চেয়ারম্যান বললেন, আজ থেকে আমার ঘুম নেই। আমি নিজে রাতে বাইরে বের হয়ে এলাকাজুড়ে কয়েকটা চক্কর দেব। চেয়ারম্যান তার কথা রাখলেন। এলাকার নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে চক্কর দিতে লাগলেন এই গ্রাম থেকে ওই গ্রামে। এক রাতের ঘটনা। চক্কর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে চেয়ারম্যান এক চা স্টলে বসলেন। তাকে দেখে এলাকার লোকজন জড়ো হলো। চেয়ারম্যান সবার উদ্দেশে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, ভাইসব, গত কদিন ধরে এলাকায় আর চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই হচ্ছে না। তার মানে কী? মানে হচ্ছে আমি আমার এলাকায় নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা নিশ্চিত থাকেন, আমি যতদিন চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকব, ততদিন কাউকে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না। এলাকায় চক্কর দিয়ে চেয়ারম্যান যতটা ক্লান্ত হয়েছিলেন, তারচেয়ে আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে গেলেন বক্তৃতা দিয়ে। তিনি চা স্টলের খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। সকাল হয়ে গেল। তার ঘুম ভাঙল। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে তার কাছে মনে হলো এখনো অন্ধকার আছে। কারণ সবকিছুই কেমন ঘোলাঘোলা লাগছে। ব্যাপার কী, তিনি বুঝতে পারছিলেন না। হঠাৎ তার মনে হলো চোখে চশমা নেই। তিনি পকেটে খুঁজলেন, বেঞ্চের নিচে খুঁজলেন। না, কোথাও নেই। অবশেষে জানা গেল, তিনি যখন ঘুমিয়েছিলেন, তখন তার পাশ দিয়ে একটা ছিঁচকে চোর যাচ্ছিল। সে-ই চেয়ারম্যানের চোখ থেকে চশমা চুরি করে নিয়ে গেছে। লজ্জায় চেয়ারম্যান এতটাই মিইয়ে যেতে লাগলেন যে, শেষে দৌড়ে বাড়ি চলে এলেন। লোকজনের মধ্যে তখন ব্যাপক ঠাট্টা-মশকরা- যে চেয়ারম্যানের চোখ থেকে চশমা চুরি হইয়া যায়, সেই চেয়ারম্যান নাকি এলাকার নিরাপত্তা দিব, হা হা হা। পাঠক, এটা আসলে একটা গল্প। এর সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই। যদি কেউ মিল খুঁজতে যান, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তিনি গল্পে ডুবে গেছেন। কাজ কর্ম নেই, তাই মিল খুঁজে টাইম পাস করছে। বাস্তবে আমরা খুবই নিরাপদে আছি। হয়তো এখানে ওখানে টুকটাক দুর্ঘটনা ঘটছে। কারও চোখ থেকে চশমা তো চুরি হচ্ছে না! কীভাবে হবে? আমাদের চোখ খোলা না? চুরি করতে এলেই আমরা খপ করে ধরে ফেলব। তবে চোরের মামা-চাচার যদি হাত বেশি উপরের দিকে থাকে তাহলে ব্যাপারটায় জটিলতা। সে যাই হোক, আমরা নিরাপদে আছি, এটাই ফাইনাল কথা। কেউ যদি মনে করেন আমরা নিরাপদে নেই, এখানেও কিন্তু লাভের একটা ব্যাপার আছে। আমার এক বন্ধু বলল, ঢাকা শহরের বাসা-বাড়িগুলোতে নিরাপত্তার প্রচণ্ড অভাব। বাসা  খালি রেখে যে কোথাও যাবি, সেই উপায় নেই। এসে দেখবি সব ফাঁকা। তবে এই নিরাপত্তাহীনতার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই উপকৃত হচ্ছি। আমি বললাম, তুই চোর প্রজাতির কেউ নাকি? বন্ধু বলল, আরে সে ধরনের কিছু না। নিরাপত্তা না থাকার কারণে খালি বাসায় যে কোনো সময় চুরি হতে পারে, এই ভয়ে তোর ভাবীর সঙ্গে আমাকে শ্বশুরবাড়িতেও যেতে হয় না, দেড় কেজি মিষ্টিও কিনতে হয় না। কত টাকা সেভ হয় জানিস?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর