সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মিস্টার টেনশনহীন

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

মিস্টার টেনশনহীন

মানুষ মাত্রই টেনশন করে। সে অর্থে রাশেদ ভাই মোটেও মানুষের কাতারে পড়েন না। তিনি যে টেনশন করেন না এই ব্যাপারে আমরা খুব টেনশন করি। মাসের শেষ দিকে এই বেকার ব্যাচেলর বাসায় কারও পকেটে কানাকড়িও থাকে না। দুই মাস আগে পরা কোনো প্যান্টের পকেটে যদি দুই টাকা পাওয়া যায় তবে সে উপলক্ষে অন্যরা ট্রিট দাবি করে! এমন অবস্থায় সবাই যখন মনোযোগ দিয়ে টেনশন করছে রাশেদ ভাই তখন নাক ডেকে ঘুমান। উনার মতে, ঘুম হলো সব রোগের ওষুধ। যার ঘুম নাই তার তো কিছু নাই!

সেবার রাশেদ ভাই টেনশনের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। ঘটনা খুলে না বললেই নয়। তন্বি আপু ছিল রাশেদ ভাইয়ের জীবনের একমাত্র প্রেমিকা। দীর্ঘ সাত বছর প্রেম শেষে তন্বি আপুর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের আগের রাতের কথা। সন্ধ্যা ৭টা তখন। রাশেদ ভাই ঘুমাচ্ছেন। ডেকে বললাম, ভাই এইদিনেও আপনার কোনো টেনশন নাই।

: টেনশন আছে।

: কী নিয়ে?

: তন্বি জানিয়ে দিয়েছে আমাকে ছাড়া সে বিয়ে করবে না।

: এইটাতে টেনশনের কী আছে?

: আছে না?

: কী?

: ক্যামনে যাবো? কাপড়চোপড় কী পরব? অন্যরা কী মনে করবে?

: এইগুলা ভাবলে হবে এই সময়। আপনার থেকে এই বিষয়ে টেনশন আশা করি নাই।

: নারে টেনশনের বিষয় আছে। আমার পেটটাও ভালো না। বুয়ার রান্না খেয়ে অবস্থা খারাপ।

: এই সময় কেউ পেটের চিন্তা করে?

: পেটের চিন্তা না করলে বিয়েতে গিয়ে খাবো কীভাবে?

: মানে কী?

: আরে তন্বি গতকাল ফোন দিয়ে বলেছে। তার বিয়েতে আমাকে যেতেই হবে। আমার প্রিয় প্রিয় খাবার সব রান্না হবে। বিয়েতে না গেলে সে বিয়েই করবে না!

ঘটনার কিছুক্ষণ পর উনি ভেবে দেখলেন যে তন্বি আপুর বিয়েতে যেতে হলে উনাকে সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে। এই ভাবনার পর উনি এই বিষয়ে আর কোনো টেনশন করেননি।

আমার কপাল রাশেদ ভাইয়ের মতো অতটা ভালো না। প্রেমিকা সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে জানালো সে বাসে উঠে গেছে। একেবারে আমার কাছে চলে আসছে। বিয়ে করে সংসার শুরু করবে। শুনে টেনশনে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তবে টেনশন এত বেশি যে হাত-পা যে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে সেটা বুঝতেই পারিনি। রাশেদ ভাইয়ের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। শুনে একটা হাই তুলে বললেন, যা এখন ঘুমিয়ে যা।

: কিন্তু ভাই আমি এখন কী করব?

: ঘুমাবি।

: ভাই ক্যামনে ঘুমাব। কী হতে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন?

: হু, বুঝতে পারছি। শোন, মানবজীবন হলো একটা সুন্দর চিত্রনাট্য। যাহা ঘটিবার তাহা ঘটিবেই। এই নিয়ে বিশেষ টেনশন করে নিজের বর্তমান ভালো সময়টা নষ্ট করার কোনো মানে নেই।

পরবর্তী ঘটনা। ঢাকা শহরের ব্যাচেলর বাড়িতে হুটহাট করে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছিল। সে রাতে এলো আমাদের বাসায়। রাশেদ ভাইয়ের রুমের দরজা বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরে খুলে দেখলেন পুলিশ দাঁড়িয়ে। তিনি মুখের হাই হাত দিয়ে চাপা দিতে দিতে বললেন, ওহো আসেন। কোন থানা থেকে?

পুলিশের দুই কনস্টেবল নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করে উত্তর দিলেন। উত্তর শুনে রাশেদ ভাই আরেকটা হাই তুলে বললেন, ওকে সার্চ করতে থাকেন। আমি ঘুমালাম। সকালে একটা ইন্টারভিউ আছে। অবৈধ কিছু পেলে ডাক দিয়েন।

দুই কনস্টেবল আবার নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করলেন। কনস্টেবলের মুখের কথার জন্য অপেক্ষা না করে ততক্ষণে রাশেদ ভাই নাক ডাকা শুরু করে দিয়েছেন। অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের সাক্ষী হলাম।

টেনশন নিয়ে রাশেদ ভাইয়ের দীর্ঘ পরিকল্পনা রয়েছে। সে পরিকল্পনার নাম নো-টেনশন প্রকল্প। এই নো টেনশন প্রকল্পের মাধ্যমে একটা টেনশনহীন জাতি গড়ার চেষ্টা করা হবে। চাকরি পেলেই এই প্রকল্প নিয়ে মাঠে নেমে যাবেন। তাই আমরা আপাতত রাশেদ ভাইয়ের চাকরি নিয়ে টেনশনে আছি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর