সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মৌসুমি গলাবাজি

ইকবাল খন্দকার

মৌসুমি গলাবাজি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

এই সময়টায় সাধারণত শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। কিন্তু জলবায়ুর মেজাজ মর্জির পরিবর্তনের কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি। তাতে কী! নির্বাচনী প্রবাহ তো শুরু হয়েছে! শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে নির্বাচনী প্রবাহের বিশেষ কোনো তফাৎ নেই বলেই মনে করেন আমার এক বড় ভাই। তিনি বলেন, শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও আমাকে হাতমোজা পরতে হয়, নির্বাচনী প্রবাহ শুরু হয়েছে, এর জন্যও ইতিমধ্যে আমি হাতমোজা পরা শুরু করে দিয়েছি। আমি বললাম, শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে হাড় কাঁপানো শীত নামে। অতএব হাতমোজা পরতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রবাহের সঙ্গে তো শীতের সম্পর্ক নেই। তাহলে হাতমোজা পরতে হবে কেন? বড় ভাই বললেন, কী করব বল। নির্বাচনের সময় প্রার্থী এবং তাদের চেলাদের সঙ্গে বিরতিহীনভাবে হাত মেলাতে হয়। সারা দিনে কত হাজারজনের সঙ্গে যে হাত মেলাচ্ছি, তার কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। হাতমোজা পরি নিরাপত্তার স্বার্থে। কার হাতে খুজলি আছে কে জানে। প্রটেকশনের একটা ব্যাপার আছে না? গতকাল একজনকে ফোন করে বললাম, আপনার এলাকায় তো নির্বাচনী হাওয়া খুব জোরেশোরেই বইছে। তা লাগছে কেমন? ভোটার হিসেবে নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ লাগছে নিজেকে? আমার কথার জবাবে ভদ্রলোক বললেন, গুরুত্বপূর্ণ আর লাগছে কোথায় বলেন। টেনশনই তো কাটছে না। ভালো লাগে না রে ভাই। কেন যে দুই দিন পরপর নির্বাচন আসে! খালি যন্ত্রণা। আমি অবাক হয়ে বললাম, নির্বাচন এলে ভোটাররা খুশি হয়। আর আপনি বলছেন যন্ত্রণা কাটছে না। কী হয়েছে একটু বলবেন কি? ভদ্রলোক বললেন, কী হয়নি তাই বলেন। গতবারের নির্বাচনের আতঙ্কই কাটাতে পারছি না। আমি গলার স্বর নিচু করে বললাম, আপনি কি আইনশৃঙ্খলার কথা বলছেন? ভদ্রলোক বললেন, আরে না। কিসের মধ্যে কী! আমি বলছি, আমার চামড়ার কথা। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, চামড়ার কথা! মানে কী? ভদ্রলোক বললেন, গতবার যখন ভোট দিতে গেলাম, আমার নখের ওপর অমোছনীয় কালি লাগিয়ে দেওয়া হলো। এই কালি উঠাতে গিয়ে আমাকে এতটাই কসরত করতে হলো যে, আমার নখের উপরের চামড়াই উঠে গেল। তারপর দুইশ টাকা ভিজিট দিয়ে স্কিনের ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এইবারও একই ঘটনা ঘটবে। এইবার খরচ হবে তিনশ টাকা। কারণ স্কিনের ডাক্তার নিজের ভিজিট একশ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, আমার বউয়ের মতামতের কাছে আমার মতামত কখনোই টেকেনি। বরাবরই সে জয়ী হয়েছে, আমি পরাজিত হয়েছি। অথচ শহরে থাকার ব্যাপারে তার মতামতের কাছে যদি আমার মতামতটা মার না খেত তাহলে আমাকে এখন দোকানে যেতে হতো না। আমি বললাম, আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। একটু যদি বুঝিয়ে বলেন। প্রতিবেশী বুঝিয়ে বললেন, আমি কোনো দিন শহরে থাকতে চাইনি। কিন্তু আমার বউ চেয়েছে। তার একঘেয়েমির কারণেই আজ আমি শহরে থাকছি। অথচ আজ যদি শহরে না থেকে গ্রামে থাকতাম, তাহলে আমি পৌর নির্বাচনের ভোটার হতে পারতাম। আর পৌর নির্বাচনের ভোটার হতে পারলে আমাকে দোকানে যেতে হতো না এই জন্য, কারণ আমি জানতে পেরেছি প্রার্থীরা নাকি ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে মুড়ি-চানাচুর পৌঁছে দিচ্ছে। আমি মূলত মুড়ি-চানাচুরের জন্যই এখন দোকানে যাচ্ছিলাম তো! গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা আমার এক দুলাভাই বললেন, এখন আর গেরাম-শহরের মধ্যে কোনো তফাৎ নাই। শহরেও শব্দদূষণ হয়, গেরামেও শব্দদূষণ হইতেছে। আমি বললাম, শহরে না হয় বড় বড় গাড়ি চলে, তাই শব্দদূষণ হয়। গ্রামে তো এত গাড়ি চলে না। গ্রামে শব্দদূষণ হয় কেন? দুলাভাই বললেন, গ্রামে শব্দদূষণ হইতেছে নির্বাচনের কারণে। আমি বললাম, নিশ্চয়ই মিটিং-মিছিলের কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে? দুলাভাই বললেন, আরে না। শব্দদূষণ হইতেছে ফুড়–ৎ ফুড়–ৎ শব্দের কারণে। সবাই নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বলার জন্য চা-স্টলে বসে জোরে জোরে চুমুক দিয়া চা খায় তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর