সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিধিহীন আচরণ

ইকবাল খন্দকার

বিধিহীন আচরণ

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

এখন বৃষ্টি-বাদলার দিন না। সুতরাং রাস্তাঘাটে কাদা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ কাদা ছোড়াছুড়ি চলছেই। আর কাদা ছোড়াছুড়িটা করছেন পৌর নির্বাচনের প্রার্থীরা। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছেন একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে। তবে যারা সত্যি সত্যি লঙ্ঘন করছেন, তারা মোটামুটি চুপচাপই থাকছেন। আর যারা এর শিকার হচ্ছেন, তারা অভিযোগের পর অভিযোগ করেই যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ আছেন, যারা মোটামুটি মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। তাদের কথা হচ্ছে, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আর কতটুকুইবা করা যায়। অথচ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তো মানুষ বিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। সেসব অনিয়মের তুলনায় এই অনিয়ম তো চুনোপুঁটি টাইপ অনিয়ম। আমার এক বড় ভাই বললেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দেখেছিস কী! আচরণবিধি তো লঙ্ঘিত হতো আমাদের সময়। আমরা যখন নির্বাচন করতাম তখন এত বড় বড় অনিয়মের ঘটনা ঘটত, কী আর বলব। আমি বললাম, আপনি কবে নির্বাচন করলেন? আর আপনার সময় কী এমন অনিয়ম হয়েছে? বড় ভাই বললেন, আমি কবে নির্বাচন করলাম মানে? কেন, আমি একবার ক্লাসে নির্বাচন করেছিলাম আগে, বলিনি? ক্লাস ফাইভে আমি তখন। ক্লাস ক্যাপ্টেন কে হবে, এই জন্য নির্বাচন। আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। বড় ভাই বুঝতে পারলেন না আমি হেসেছি। কিন্তু আওয়াজ শুনে বললেন, কীসের আওয়াজ হলো? আমি বললাম, মনে হয় উপরতলা থেকে কিছু পড়েছে। যাই হোক, একটু বলেন আপনার নির্বাচনের সময় কী এমন অনিয়ম হয়েছিল। বড় ভাই বললেন, সব অনিয়মের কথা বলার সময় নেই। শুধু একটা অনিয়মের কথা বলছি। ক্যাপ্টেন নির্বাচনে আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী যে ছিল, নির্বাচনের দিন সে বিশাল একটা অনিয়ম করে ফেলল। করল কী, নতুন জুতা পায়ে দিয়ে এলো। আর এই নতুন জুতার দিকে যাতে সবার নজর যায়, এই জন্য সে পা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে হাঁটতে লাগল। তার পা হেঁচড়ানোর কারণে ভোটারদের মনোযোগ নষ্ট হলো। চিন্তা করতে পারিস এটা কত বড় অনিয়ম?

যে অনিয়ম প্রতিপক্ষ করে, সেই অনিয়মটা যত ছোটই হোক, সেটাকে অনেক বড় মনে হয়। কিন্তু নিজে করলে? সেটা যেন কোনো ব্যাপারই না। এভাবেই চলছে নির্বাচন, এভাবেই চলছে আমাদের লাইফ। আমার এক চাচা চান্স পেলেই উপদেশ দেন। তিনি নির্বাচনের আচরণবিধি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এই সম্পর্কেও কিছু উপদেশ দিয়ে ফেললেন। বললেন, সবসময় আচরণবিধি মনে চলা উচিত। কিন্তু কেউ কেউ আছে, তারা কোনো দিনই হয়তো আচরণবিধি মেনে চলবে না। আমি জানতে চাইলাম, আপনি কার কথা বলছেন? চাচা বললেন, তোর চাচির কথাই ধর। তার জন্য আমি কিছু আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছি। কিন্তু সে কখনোই এগুলো মেনে চলে না। আমি বললাম, দু-একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হতো। চাচা উদাহরণ দিলেন, তোর চাচি প্রায়ই আমার দিকে রিমোট ছুড়ে মারে। যখন দেখলাম রিমোট ছোড়া বন্ধই করা যাবে না, তখন আমি তাকে বলেছিলাম, ছুড়তে চাও, ছোড়ো, কিন্তু বিধি মোতাবেক ছোড়ো। কিন্তু এই বিধিটাও সে লঙ্ঘন করল। আমি বললাম, আপনি রিমোট ছোড়ার ব্যাপারে কী বিধি নির্বারণ করে দিয়েছিলেন বলেন তো? চাচা বললেন, আমি বলে দিয়েছিলাম রিমোট ছোড়ার সময় অবশ্যই যাতে ব্যাটারি খুলে নেয়। কিন্তু সে ব্যাটারি না খুলেই ছোড়ে, বড় চোট লাগেরে! শেষ কথায় বলে আসি এবার। আমরা কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলতে গিয়ে টুকটাক লঙ্ঘনের কথা বললাম। বড় বড় লঙ্ঘন বলা এবং ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল। আর এটাই নিয়ম। বড় জিনিস নিয়ে কথা বললে যদি বড় মুসিবতে পড়তে হয়! জানের মায়া কার নেই বলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর