সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বছর শেষ, প্রচারণাও শেষ

ইকবাল খন্দকার

বছর শেষ, প্রচারণাও শেষ

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

প্রথমেই একটা জ্ঞানের কথা বলা যাক। যার শুরু আছে, তার শেষও আছে। জ্ঞানের কথা শেষ। এবার আসা যাক আসল কথায়। বছর শুরু হয়েছিল সেই জানুয়ারিতে। ডিসেম্বরে এসে বছরটা শেষ হতে যাচ্ছে। আর পৌর নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছিল আরও বেশ কদিন আগে। অলরেডি প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে আরেকটা জ্ঞানের কথা খাটানো যেতে পারে। সেটা হচ্ছে— শেষ হইয়াও হইল না শেষ। আসলেই কিন্তু নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েও শেষ হয় না। জোরেশোরে প্রচারণা চালাতে না পারলেও ভিতরে ভিতরে প্রচারণা চালানোর একটা প্রবণতা থেকেই যাচ্ছে। তবে প্রচারণা বলেন আর প্রতিশ্রুতির প্রতারণাই বলেন, সব কথার চূড়ান্ত কথা কিন্তু বিজয়। অর্থাৎ যে করেই হোক বিজয়টা আমি চাই-ই চাই। এর জন্য যা করতে হয় করতে রাজি আছি। আমার এক দুলাভাই বললেন, আমি একবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি বক্তৃতা দিলাম— আমাকে যদি এলাকার মেয়র নির্বাচিত করা হয়, তাহলে আমি জনগণের হয়ে কাজ করব। এর একদিন পর আমি এলাকায় বের হয়েছি ভোট দেওয়ার জন্য। অমনি এক বয়স্ক লোক এসে বলল, আপনে তো কইছিলেন মেয়র নির্বাচিত হইতে পারলে নাকি জনগণের হইয়া কাজ করবেন। তবে এখন থেইকাই তো অভ্যাসটা করা উচিত। যান, আমার বাজারটা কইরা নিয়া আসেন। টাকা আমিই দিতাছি। এই লন। বলেই লোকটা চটের ব্যাগ আর টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিল। সঙ্গে সদাইপাতির লিস্টি। আমি আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তখন কী করলেন দুলাভাই? দুলাভাই বললেন, কী আর করব, বাজারে গিয়ে লোকটার জন্য বাজার করলাম। বুঝলে, ভোটের জন্য সব করতে হয়, সব।

জি, আমাদের প্রার্থীরা ভোটের জন্য সবই করেন। এলাকার জন্য পাঁচ টাকার কাজ করার ক্ষমতা আছে কি নেই, সেটা নিয়ে তারা চুল পরিমাণও ভাববেন না, পাঁচ লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলবেন। মানুষকে পান-বিড়ি খাওয়াতে খাওয়াতে ব্যাংক খালি করে ফেলবেন। তবু খাওয়াবেনই, খাওয়াবেনই। প্রয়োজনে বাপ-দাদার জমি বিক্রি করবেন। পৌর এলাকায় আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে। সে ফোন করে বলল, বুঝলি, নির্বাচনের আগে আমরা ভোটাররা খুব ভাবে থাকি। তাই আমাদের বাগে আনার জন্য তারা নানান চেষ্টা-তদবির করেন। চা খাওয়ান, বিস্কুট খাওয়ান, মিষ্টি খাওয়ান। কিন্তু যেই তারা পাস করে ফেলেন, শুরু হয় তাদের খাওয়া। তারা কিন্তু চাও খান না, বিস্কুটও খান না। তারা খান রিলিফের টিন, রিলিফের কম্বল, রিলিফের ধান-চাল। পাল্টাপাল্টি খাওয়া-খাওয়ি আরকি। আমি তাকে একটা জ্ঞানের কথা শুনিয়ে দিলাম— আগে তোরা বিস্কুট খাওয়া বন্ধ কর, তাহলে দেখবি উনারাও টিন-কম্বল খাওয়া বন্ধ করেছেন। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ছোটবেলায় পড়া ভয়েজ চেঞ্জের বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় নির্বাচনী এলাকায় গেলে। আমি বললাম, কীভাবে? প্রতিবেশী ক্লিয়ার করলেন, ভোটের আগে প্রার্থীরা মিনমিনে গলায় কথা বলেন। মানে যতটা ভদ্রভাবে বলা যায় আরকি। কিন্তু যেই ভোট শেষ হয়ে যায় আর তারা পাস করে ফেলেন, তখন সেই মিনমিনে ভয়েজ চেঞ্জ হয়ে বাঘের ভয়েজ হয়ে যায়। ঝাড়ি ছাড়া কথা বলতে পারেন না। ভয়েজ চেঞ্জের এর চেয়ে উত্তম উদাহরণ আর কী হতে পারে বলেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর