সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক পৌষে শীত যায় না

ইকবাল খন্দকার

এক পৌষে শীত যায় না

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

শীতকাল মানেই নিরুত্তাপের মৌসুম। আর এই নিরুত্তাপের মৌসুমেই উত্তাপ ছড়াতে চেষ্টা করে কোনো কোনো জিনিস। রাজনীতির কথাই ধরা যাক। সারা বছর যেমন তেমন, শীতকাল এলেই দেখবেন রাজনীতি কেমন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আর এই চাঙ্গাভাব থেকেই শুরু হয় দাঙ্গা। সঙ্গে হাঙ্গামা। যে দাঙ্গা হাঙ্গামা ম্যালাদিন ধরেই যন্ত্রণা দিয়ে আসছে আমাদের। যেহেতু বিষয়টা পুরনো, তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান দেওয়ার কিছু নেই। সুতরাং রাজনীতির উত্তাপ থেকে অন্যান্য উত্তাপের দিকে চোখ ফেরানো যেতেই পারে। আমার এক প্রতিবেশী খুব নিয়ম করে একটা কাজ করে। সেটা হচ্ছে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া। প্রতিদিন নিয়ম করে দুবার চিৎকার চেঁচামেচি করবেই। আজব ব্যাপার হচ্ছে, শীতকালে তাদের ঝগড়ার রুটিনে খানিকটা পরিবর্তন আসে। এই সিজনে তারা দুবারের জায়গায় তিনবার ঝগড়া করে। এই বছর শীত আসার পর থেকেই আমি ভাবছিলাম বিষয়টা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব। জিজ্ঞেস করব শীতকালে কী এমন ঘটনা ঘটে, যার জন্য তারা অতিরিক্ত একবার ঝগড়া করেন। পরশুদিন প্রতিবেশী ভদ্রলোককে বাসার সামনে পেয়ে করেই ফেললাম প্রশ্নটা। ভদ্রলোক বললেন, মেজাজ যত বেশি উত্তপ্ত হবে, ঝগড়ার পরিমাণও তত বাড়বে। আমি বললাম, এটা এত ঘটা করে বলার কিছু নাই। মেজাজ উত্তপ্ত হলে যে ঝগড়া হয়, এটা সবাই জানে। আপনি আমাকে বলেন, শীতকালে আপনাদের মেজাজ কেন বেশি বেশি উত্তপ্ত হয়। কেন আপনারা দুবারের জায়গায় তিনবার ঝগড়া করেন। ভদ্রলোক বললেন, ভাইরে উত্তপ্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কম্বল। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, কম্বল! কম্বল কেন? ভদ্রলোক বললেন, আমি কম্বলের ভিতর ঘুমাতে পারি না। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি করি কী, কম্বলটা সাইডে রেখে ঘুমাই। এতে কম্বলটা এক সাইডে ঝুলে যায় এবং মশারি হাঁ হয়ে থাকে। এই হাঁ হয়ে থাকা মশারি দিয়ে ভিতরে মশা ঢোকে আর বউ শুরু করে ঝগড়া। ভাইরে, দুনিয়ায় কম্বল কেন আবিষ্কার হয়েছিল? মশারিইবা কেন আবিষ্কার হয়েছিল বলেন। আমার এক বন্ধু শীতকাল এলেই একটু কেমন কেমন যেন করে। সারা বছর তার মেজাজ ঠাণ্ডাই থাকে, শীতকাল এলে হয়ে যায় রগচটা। জিজ্ঞেস করলাম, এইটা কী ধরনের খাসলত বল তো? বন্ধু বলল, শীতকালে মেজাজ গরম থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি বললাম, বেশি বলার দরকার নেই। অন্তত একটা কারণ বল। বন্ধু বলল, আমি সবজি খেতে চাই না। অথচ বাজারে শীতকালীন সবজি পেয়ে তোর ভাবী ডেকচি ভরে সবজি রান্না করে রাখে। এটা কি মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো কারণ না? আমার পরিচিত এক শিক্ষক আছে। তিনি সেদিন কথায় কথায় বললেন, আগে যখন ক্লাসে বেত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল, তখন গরমের দিনে বেত নিয়ে না গেলেও শীতকালে নিতামই। এখন বেত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই আচ্ছামতো ধমকাধমকি করি। শীতকালে যে আমার ধমকাধমকির পরিমাণ কোন পর্যায়ে চলে যায়, সামনাসামনি না দেখলে বিশ্বাস করবি না। আমি বললাম, শীতকালে তোর মেজাজ কেন এত উত্তপ্ত থাকে, একটু বলবি কি? বন্ধু বলল, উত্তপ্ত কেন থাকবে না বল? ছাত্রদের কাছে যাই পড়া নেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা যেই পড়া বলতে শুরু করে, আমি আর কাউকে দেখতে পাই না। পুরো রুম ভরে যায় তাদের মুখের ধোঁয়ায়। এই অবস্থায় মেজাজ কি খারাপ হতে পারে না? উপসংহারে চলে যাই এবার। উপসংহারে কথা এটাই, উত্তপ্ত হওয়ার মতো টুকটাক ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলে উত্তপ্ত হয়েই যেতে হবে? অবশ্যই না। মনে রাখবেন, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আর হেরে গেলেন তো মাটিতে গেড়ে গেলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর