সম্প্রতি ঢাকায় ‘আসল দল’ পরিচয়ে আরেকটি দলের রাজপথে নেমে দৌড়ানি খাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আসল আর নকলের দ্বন্দ্ব সবসময়ই রয়েছে। নকল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি ঝড় আছে। প্রথম ঝড় বয়ে যায় চীনের তৈরি নকল ডিম নিয়ে। কতিপয় রাসায়নিক পদার্থের অসাধারণ মিক্সচার ও প্লাস্টিক বডি সমৃদ্ধ এই নকল ডিম অবিকল আসল ডিমের মতো। বিষয়টা গিয়ে দাঁড়ায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসল ডিম বাঁকাতেড়া লাগতে পারে, কিন্তু নকল ডিম আরও নিখুঁত! ব্যাচেলরদের কাছে ডিমের গুরুত্ব অক্সিজেনের পরপরই। এই ডিম নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না!
দ্বিতীয় ঝড় বয়ে যায় চীনের আরেক আশ্চর্য তৈরি পণ্য ‘নকল গাঁজা’। সেই গাঁজা প্যাকেটবন্দী হয়ে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সব গাঁজা বিক্রির দোকানে পৌঁছে গেছে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গাঁজাখোর সম্প্রদায়কে নিয়ে বিশেষ শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয় ফেসবুকে। নকল গাঁজার এই সর্বনাশা আগ্রাসনের কারণে টেনশনে নিমজ্জিত হয় কতিপয় গাঁজাখোর। ঝড়গুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, নকল যা কিছু তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা মাথা অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে কি নকল করা থেমে থাকে? গানের সুর নকল হয়, সিনেমার গল্প নকল হয়, কোম্পানির লোগো নকল হয়, পণ্যের কৌটা নকল হয়... এমনকি পরীক্ষাতেও নকল হয়। পরীক্ষায় নকল করা নিয়েও বহুল প্রচারিত একটি ছবি ইন্টারনেটে সহজেই খুঁজে পাবেন। নকল ঠেকাতে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মাথায় বিশেষ টুপি বসিয়ে দিয়েছেন। এটা মাথায় পরলে ডানে-বামে দেখা যায় না। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরীক্ষার হলে ক্যামেরায়ালা ড্রোন উড়ানো হয়েছে। কেউ নকল করলেই সেটার ভিডিও হয়ে যাবে। নকল ঠেকানোর এতসব আয়োজন নিশ্চিত করে, আমরা ‘আসল’ খুঁজে ফিরি। তাই মাছ বিক্রেতার কাছে সব ইলিশ মাছই পদ্মা থেকে আসে, সব আম বিক্রেতার আম আসে রাজশাহী থেকে, দেশের সব দই বিক্রেতার দই আসে বগুড়া থেকে। দেশের সব কাঁচাগোল্লাই নাটোরের কাঁচাগোল্লা হয়ে যায়, যেন দেশের সব রসগোল্লাই তৈরি হয় যশোরে। যদিও আদতে সেটা কতটুকু আসল তা পেটে চালান দিলেই টের পাওয়া যায়।
এত নকলের ভিড়ে আসলের অবস্থা নিঃসন্দেহে কেরোসিন। তেমনই কেরোসিন দশায় পতিত এক প্রেমিকের কথা লিখেই শেষ করব। নতুন প্রেম। প্রেমিকা সারাক্ষণ গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে এতটাই মগ্ন থাকে যে প্রেমিককে ভালোবাসারই সময় পায় না। এভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই কাল হয়ে দাঁড়াল প্রেমিকের কাছে। সে একদিন প্রেমিকাকে চেপে বসল—প্রেমিক : তুমি কাকে বেশি ভালোবাস— আমাকে নাকি গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানকে?
প্রেমিকা : অবশ্যই তোমাকে!
প্রেমিক : সত্যি! আমাকে কতখানি ভালোবাস?
প্রেমিকা : ধরো, ভালোবাসা যদি আলোর মতো প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল যেতে পারে। এক আলোকবর্ষ দূরে থাকা একটি গ্রহের ভর যদি পৃথিবীর দ্বিগুণ হয়, তাহলে ব্যস্ততানুপাতিক
হারে ভালোবাসার পরিমাপ দাঁড়ায়...
ভালোবাসার পরিমাপ গুনতে গুনতে প্রেমিক মূর্ছা গেল।