সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

টি-টুয়েন্টি ভালোবাসা

ইকবাল খন্দকার

টি-টুয়েন্টি ভালোবাসা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই এমনিতে দুনিয়ার কঞ্জুস। কিন্তু পরশুদিন তার সঙ্গে দেখা হতেই তিনি আমাকে টেনে নিয়ে ঢোকালেন মিষ্টির দোকানে। আমি ভাবলাম টাকা-পয়সা ধার চেয়ে বসতে পারেন। কিন্তু তিনি মিষ্টির অর্ডার দিলেন। তাও দামি মিষ্টি। এদিকে তার মুখেও লেগে আছে মিষ্টি হাসি। মিষ্টির প্লেট সামনে এলো। তিনি হাসি হাসি মুখেই বললেন, খা, পেট ভরে খা। মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভালো। আমি একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে বললাম, ভাই, একটু বলবেন ঘটনাটা কী? এমন কী আনন্দের ঘটনা ঘটল, যার কারণে আপনার মতো কঞ্জুস, না মানে হিসেবী লোক মিষ্টি খাওয়াচ্ছে? বড় ভাই বললেন, তোর ভাবীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো হয়ে গেছে। এই খুশিতে মিষ্টি খাওয়ালাম। তুই তো জানিস আগে তার সঙ্গে রোজই আমার ঝগড়াঝাটি হতো। মারামারিও হতো মাঝে মধ্যে। এক দিন তো সে আমার দিকে লবণের পট ছুড়ে মেরে আমার চশমার গ্লাস ভেঙে ফেলল। আমি বললাম, আমি সব জানি। এইবার শুধু বলেন, ভাবীর সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কীভাবে ঠিক হলো। বড় ভাই বললেন, সম্পর্ক ঠিক হওয়ার একটাই ওষুধ, সেটা হচ্ছে খেলা। বাংলাদেশ টিম যখন ছক্কা মারল, তখন তোর ভাবী আর আমি এত জোরে লাফ মেরে উঠলাম যে, ফটাস করে সোফা ভেঙে গেল। তোর ভাবী হাতে ব্যথা পেয়ে গেল। আমি তার হাতের সেবা করা শুরু করলাম। মালিশ করা, পট্টি বেঁধে দেওয়াসহ আরও নানাবিধ সেবা। আমার সেবায় তোর ভাবী এত বেশি খুশি হয়ে গেল যে, আমার সঙ্গে সে ভালো আচরণ করতে লাগল। এই ভালো আচরণই একসময় রূপ নিল ভালোবাসায়। শাবাশ খেলা! শাবাশ ভালোবাসা! বার বার খেলা হোক, বার বার তোর ভাবীর হাত ভাঙুক, বার বার তার সেবা করে আমি ধন্য হই, বাড়ুক আমাদের ভালোবাসা। খা খা, মিষ্টি খা। দে, আমার মুখেও একটা দে। আমার এক ছোট ভাই কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছে। উদ্দেশ্য লেখাপড়া। সে এমনিতে একটু খেলাপাগল। দুই দিন আগে যখন তার সঙ্গে দেখা, জিজ্ঞেস করলাম লেখাপড়া কেমন চলছে। সে বলল, ভাই, লেখাপড়া না বলে হয়তো খেলাপড়া বলা উচিত। কারণ খেলা না দেখলে আমার পড়া হচ্ছে না। তবে ভাই, খেলা দেখার কারণে আমার সময়গুলো বেশ ভালো কাটছে। আসলে ভাই আমার একটা প্রেম হয়ে গেছে তো! জটিল প্রেম বলে একটা কথা আছে না? সেই ধরনেরই একটা প্রেম হয়েছে আরকি। আমি বললাম, খেলা দেখার কারণে কীভাবে প্রেম হলো বা হতে পারে, আমি সেটা একটু জানতে চাই। ছোটভাই বলল, আমি যে মেসে থাকি, সেই মেসের পাশের বাসায় ঝাক্কাস সুন্দরী একটা মেয়ে থাকে। কিন্তু মেয়েটা বেশ অহঙ্কারী। কারও দিকে ফিরেও তাকায় না। আমি বললাম, মনে হয় ঘাড়ে ব্যথা। ফিরে তাকাতে গেলে ঘাড়ের রগে টান লাগতে পারে, তাই ফিরে তাকায় না। ছোট ভাই বলল, ধুর ভাই, ঘাড়ে কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে তার দেমাগ। তো যেই খেলা শুরু হয়ে গেল, এক দিন সে আমাকে হাতের ইশারায় ডাকল। আমি তো তাজ্জব। আমি তার কাছে গেলাম। সে বলল, তাদের টিভিটা নাকি ঝিরঝির করে। খেলা দেখতে সমস্যা হচ্ছে। আমি মনে মনে বুঝতে পারছিলাম সে কী চাচ্ছে। আমি বললাম, আপনারা সপরিবারে চলে আসেন আমাদের মেসের গেস্টরুমে। খেলা দেখার ভালো পরিবেশ আছে। মেয়েটা তার পরিবারের লোকজন নিয়ে সেই যে মেসের গেস্টরুমে আসতে শুরু করল, আর ক্ষান্ত নেই। ব্যস, আস্তে আস্তে জমে গেল আমাদের ভালোবাসা। ভাই, দোয়া কইরেন, যাতে যতদিন খেলা চলে, ততদিন তাদের টিভির ঝিরঝিরানি না সারে।

সর্বশেষ খবর