সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অটোগ্রাফ বিভ্রান্তি

ইশটোরি]

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

অটোগ্রাফ বিভ্রান্তি

মেলার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় অটোগ্রাফ। ইদানীং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফটোগ্রাফ। একজন লেখকের কয়টা বই বিক্রি হলো তার হিসাব পাওয়া যায় খুব সহজেই। মেলা শেষ লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে। যতটা বই বিক্রি হয়েছে ততটা ফটোগ্রাফ শোভা পাবে সেখানে।

এমন অটোগ্রাফ প্লাস ফটোগ্রাফের কবলে পড়তে দেখলাম একজনকে। পছন্দের বই কিনতে একটা স্টলে গিয়েছি। স্টলের পাশে বড়সড় ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম। একজন পাঠক নতুন বই নিয়ে এক লেখককে জেঁকে ধরেছে। সে লেখকের সঙ্গে সেলফি তুলবে। অটোগ্রাফ নেবে। লেখক কিছুতেই অটোগ্রাফ দেবেন না। সেলফিতেও অংশ নেবেন না। কী বিপদ! ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ অবস্থা।

পাঠক অনেক দূর থেকে এসেছে। সবাইকে বলে এসেছে লেখকের সঙ্গে ছবি তুলবে। এখন খালি বই নিয়ে গেলে এলাকায় মুখ দেখাতে পারবে না। লেখকের মন তাতেও গলে না। পাঠকও নড়েচড়ে না। তার দাবি পূরণ করেই ছাড়বে। উপস্থিত লোকজন লেখককে বোঝায়, ভাই দিয়ে দেন। এত খরচ করে আপনার বই কিনেছে। একটা অটোগ্রাফই তো। দিলে কিচ্ছু হবে না। লেখক শুরুর মতই ডানে-বামে মাথা নাড়েন।

এ পর্যায় আসল তথ্য ফাঁস করে দিল পাঠক। ‘আসলে বইটা আমার ইয়ে মানে প্রেমিকাকে গিফট করব। তাকে বলেছি, লেখকের অটোগ্রাফসহ বই আনব। এখন না নিতে পারলে দীর্ঘদিনের প্রেমটা হুমকির মুখে পড়বে।’ শেষ কথাগুলো বলার সময় পাঠকের গলা কেমন কেঁপে উঠল। লেখক মানুষ। তাকেও দেখা গেল দুবার চোখ মুছতে। অগত্যা বই হাতে নিয়ে অটোগ্রাফ দিলেন। সেলফিও তুললেন। পাঠক ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল।

পাঠক যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই লেখককে জেরা করা শুরু করল। ‘ভাই, একটা অটোগ্রাফ নিতে এমন টানা হেঁচড়া করতে হলো কেন? ঘটনা কী?’

লেখক এবার নড়েচড়ে বসলেন। ‘আরে ভাই আমি এই বই তো দূরে থাক কোনো বইয়ের লেখক না। এই স্টলের সেলসম্যান। মেলার ব্যস্ততায় চুল-দাড়ি কাটতে পারছি না কয়েক দিন।’

মেলার আরেক স্টলে গিয়ে দেখি আগের চেয়ে বড় জটলা। এবারও কি জোর করে অটোগ্রাফ নিচ্ছে নাকি? কাছে গিয়ে দেখলাম ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। লেখক অটোগ্রাফ দিতে চাইছে। পাঠক নিচ্ছে না। তার অভিযোগ ইনি নাকি লেখক না। ফেইক লেখক। নিজেকে লেখক দাবি করছেন। প্রমাণ স্বরূপ আমরা লেখক পরিচিতি দেখতে চাইলাম। পরিচিতিতে দেওয়া ছবি দেখে পাঠককে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।

কারণ লেখক পরিচিতিতে দেওয়া ছবির সঙ্গে লেখক দাবি করা মানুষটার চেহারার কোনো মিল নেই। অটোগ্রাফ ছাড়াই বই নিল পাঠক। পাঠক চলে যাওয়ার পর বললাম, ‘ভাই, ঘটনা কী? লেখক না হয়ে লেখক দাবি করেন।’ এবার লেখক সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল, ‘আর কইয়েন না ভাই। কার বুদ্ধিতে যে ডিএসএলআর দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দিছিলাম। বাস্তবের সঙ্গে তো চেহারা মিলে না। সবাই ভুয়া ভাবতেছে।’

সর্বশেষ খবর