বাঁশ নিয়ে এমন এক ঘটনা ঘটল, যে ঘটনার পর আমরা কোনোভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, আমাদের হাসা উচিত না কাঁদা উচিত। আমরা এখন খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি বড় বড় ব্যক্তিরা কেন পিএস রাখেন। আজ যদি আমাদের পিএস থাকত, তাহলে কতই না সুবিধা হতো। পিএস টুক করে বলে দিতে পারত রডের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা শোনার পর আমাদের হাসা দরকার নাকি কাঁদা দরকার। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার এক বড় ভাই বললেন, আমাদের ক্ষমতা কিন্তু বহুত বাইড়া গেছে রে ছোটভাই। আমি কৌতূহল প্রকাশ করলাম, কীভাবে? বড় ভাই বললেন, কীভাবে আবার! আগে আমরা একে অপরকে বাঁশ দিতাম। এখন বিল্ডিংকেও বাঁশ দেই। মানুষকে বাঁশ দেওয়া সহজ হলেও বিল্ডিংকে বাঁশ দেওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। আমার এক বন্ধু তিন দিন হলো বিদেশ থেকে ফিরেছে। সে প্রায় অর্ধযুগ ধরে জাপানে থাকে। এতদিন ধরে দেশের বাইরে থাকার পর দেশে ফেরার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাকে পেয়ে আমরা আড্ডায় মেতে উঠলাম। সে জাপানের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করতে লাগল। একসময় সে বলতে লাগল জাপানের বড় বড় উদ্ভাবনের কথা। এবার আমাদের ঠোঁটকাটা বন্ধুটি বলে উঠল— তোর আর জাপান যাওয়ার দরকার নেই। কারণ তুই জাপানের যেসব উদ্ভাবনের কথা বললি, সেগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কম বেশি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয়েছে, সেটা পৃথিবীর আর কোনো দেশে পাবি না। এই বেটা জাপানের কোনো বিল্ডিং কি বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে? হয়নি। তাহলে প্রযুক্তির দিক দিয়ে কে এগিয়ে? তুই জাপানে না গিয়ে যদি এদেশে বাঁশের ব্যবসা করিস, বাঁশের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে পাবলিককে শলাপরামর্শ দিস, সুনাম অর্জন করতে পারবি বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আমার এক চাচা অত্যধিক সন্দেহপ্রবণ। কোনো ব্যাপারে তার মনে একবার যদি সন্দেহ ঢোকে, খবর আছে। তিনি আর সেই ব্যাপারে স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করতেই পারেন না। চাচা কয়েক মাস ধরেই বলছিলেন তার নাকি খুব শখ আগ্রার তাজমহল দেখতে যাবেন। পরশু দিন যখন তাকে বললাম, ইন্ডিয়ায় আইপিএল হচ্ছে। চলেন ইন্ডিয়া যাই। আইপিএলও দেখে আসি, আবার তাজমহলও দেখে আসা যাবে। চাচা বললেন, তাজমহল দেখার ইচ্ছা আর নাই। অন্য কিছু দেখার থাকলে ক। আমি অবাক হয়ে বললাম, তাজমহল দেখার ইচ্ছা নেই মানে? কেন? চাচা বললেন, এই যুগে বাঁশঝাড় কইমা গেছে, তবু মানুষ বিল্ডিং বানাইতে চায় রডের বদলে বাঁশ দিয়া। আগেকার দিনে তো ম্যালা বাঁশঝাড় ছিল। সস্তায় বাঁশ পাওয়া যাইত। আগ্রার তাজমহলে যে রডের বদলে বাঁশ দেয় নাই, তার কী গ্যারান্টি? যদি তাজমহল ভাইঙ্গা মাথার উপ্রে পড়ে! আমার এক ছোট ভাইয়ের সাংঘাতিক রকম একটা বদভ্যাস আছে। বদভ্যাসটা হচ্ছে— খাওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচানো। দাঁতের চিপাচাপা থেকে খাবাবের অবশিষ্টাংশ বের করা। সেদিন বাসা থেকে বের হতেই তাকে পেয়ে গেলাম। মনে হলো সে কিছু একটা খুঁজছে। জিজ্ঞেস করলাম, কীরে, কী হয়েছে? কী খুঁজছিস? ছোটভাই বলল, ভাই একটা ভ্যানগাড়ি লাগবে। ভ্যানগাড়ি খুঁজছি। আমি বললাম, ভ্যানগাড়ি দিয়ে কী করবি? বাসার জন্য কোনো মালামাল আনবি নাকি? ছোটভাই বলল, বাসার জন্য মালামাল আনব না। আমার নিজের জন্য একটা মাল আনব। আমি বললাম, নিজের জন্য এমন কী মাল আনবি যে ভ্যান লাগবে? ছোট ভাই বলল, কয়েক হাজার প্যাকেট দাঁত-খোঁচানি আনব ভাই। আমি অবাক হয়ে বললাম, এত দাঁত খোঁচানি দিয়ে কী করবি? ছোট ভাই বলল, আপনি তো জানেন দাঁত খোঁচানি বানানো হয় বাঁশের টুকরা দিয়ে। বাঁশ এখন বিল্ডিং বানানোর কাজেও লাগছে। তার মানে বাঁশের দাম বেড়ে যাবে শিগগিরই। বাঁশের দাম বেড়ে গেলে দাঁত খোঁচানির দামও বেড়ে যাবে। তাই বাড়ার আগেই কিনে গোডাউনে ফেলে রাখলাম। নিজের কাজও চলল, প্রয়োজন বোধে সাপ্লাইও দিলাম। আপনার লাগলে আওয়াজ দিয়েন ভাই।