সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

গরমে, অবস্থা চরমে

ইকবাল খন্দকার

গরমে, অবস্থা চরমে

আমার পাশের বাসার এক ভাবীকে দেখলাম তার শিশু মেয়ের সঙ্গে রাগারাগি করছেন। কিন্তু কী নিয়ে রাগারাগি করছেন, ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। আমাদের যেহেতু অন্যের ব্যাপারে জানার বা বোঝার আগ্রহ বিস্তর, তাই আমি এগিয়ে গেলাম ভাবীর কাছে। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। ভাবী বললেন—আর বলবেন না ভাই। আমি বললাম—ঠিক আছে, আর বলব না। আজকেই প্রথম আজকেই শেষ। এবার বলেন কী হয়েছে। ভাবী বললেন—আমার মেয়েটার একটা সমস্যা আছে। কেউ তাকে ভেংচি কাটলে সে তাকে মারতে তেড়ে যায়। আর যদি জিহ্বা বের করে ভেংচি কাটে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। পারলে টেনে ছিঁড়ে ফেলে। আমি বললাম—রাগ সে করতেই পারে। বাচ্চা মানুষ। তা ওকে জিহ্বা দেখিয়ে কে ভেংচি কাটল? পাশের বাড়ির কেউ? ভাবী কিছুক্ষণ থেমে থেকে বললেন—চারপায়া একটা জন্তু। আমি আঁতকে উঠে বললাম—মানে! ভাবী বললেন—আরে চরম গরমে অস্থির হয়ে একটা কুকুর জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছিল, আর আমার বেবুঝ মেয়ে ধরে নিয়েছে কুকুরটা তাকে জিহ্বা দেখাচ্ছে, ভেংচি কাটছে। মেজাজ ‘গরম’ হয় না বলেন! গ্রাম থেকে আমার এক চাচা ফোন দিলেন। বলে রাখা ভালো, আমার এই চাচা মহাকিপ্টা। জীবনেও কাউকে মিসডকল ছাড়া ফোন দেন না। তো আমাকে ফোন দিয়েছে দেখে আমি যারপরনাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম—কী ব্যাপার চাচা! ফোন করার সাহস আপনার কীভাবে হলো? চাচা বললেন—আর কইস না ভাতিজা, এইরকম একটা খুশির ঘটনা ঘইটা যাইবো বুঝতে পারি নাই। এই খুশিতেই তোরে ফোন দিয়া ফালাইলাম। আমি কৌতূহল প্রকাশ করলাম—কী খুশির ঘটনা একটু খুলে বলেন তো! চাচা বললেন—আগে তো এক জোড়া জুতা কিন্না পাঁচ বছরের বেশি পায়ে দিতে পারতাম না, এই জন্য মনডার মধ্যে বড় দুঃখ ছিল। এক জোড়া জুতা কিন্না যদি মাত্র পাঁচ বছর পায়ে দিতে হয়, তাইলে মনে দুঃখ থাকে না, তুইই ক! আমি বললাম—অবশ্যই দুঃখ থাকে। এক জোড়া জুতা কিনে যদি সারাজীবনই পায়ে দেওয়া না গেল, তাহলে কিসের জুতা! এবার খুশির ব্যাপারটা বলেন। চাচা বললেন—এক জোড়া জুতা কীভাবে পাঁচ বছরের চেয়ে বেশি টেকসই বানান যায়, সেই সিস্টাম শিখ্যা গেছি। আমি বললাম—কী সেই বিস্ময়কর সিস্টেম, একটু জানা যাবে কি? চাচা বললেন—আরে জানানির লাইগাই তো ফোন করছি।

গেরামে কী পরিমাণ গরম পড়ছে চিন্তাও করতে পারবি না। একদিকে চরম গরম, আরেকদিকে রইদের তাপ। এই দুই মিল্লা রাস্তার পিচ গেছে গইল্লা। এই গলার পিচের ওপর দিয়া হাঁটার পর জুতার তলায় যে একটা আস্তর পড়ল, এই আস্তরের কারণে জুতা আর মাটির সঙ্গে ঘষাও লাগব না, ক্ষয়ও হইব না। কী মজা, কী মজা! আমার এক বড় ভাই সেদিন কথায় কথায় বললেন—আমি গত দুই মাস ধরে বাসার জন্য দেশলাই কিনছি না। শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত হয়তো আর কিনতেও হবে না। আমি বললাম—কয়েক মাস দেশলাই না কিনে থাকতে পারলে তো ভালোই। তা ঘটনাটা কী? বড় ভাই বললেন—ঘটনা তেমন কিছু না। সাধারণত ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার বের করে খাওয়ার আগে গরম করে নেওয়ার জন্য চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেশলাইয়ের কাঠির দরকার পড়ত। কিন্তু এখন আর চুলা জ্বালিয়ে গরম করতে হয় না এই জন্য, আমার বাসার রান্নাঘরটা কোনার দিকে হওয়ায় সেখানে এত বেশি ভ্যাপসা গরম, ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা খাবারের বাটিগুলো দুই মিনিট রান্নাঘরে রাখলেই খাবারে ধোঁয়া উড়তে থাকে। আমার আরেক বড় ভাইয়ের গল্প দিয়ে শেষ করব। এই বড় ভাই চা খাওয়ার ফাঁকে বললেন—তুই তো জানিস তোর ভাবী চাকরি করে আর আমি বাড়ির কাজকর্ম করি। তার মানে তোর ভাবী বাইরে বের হয়। গরম সহ্য করে, সূর্যের তাপ সহ্য করে।

আমি বললাম—বাইরে বের হলে গরম আর সূর্যের তাপ সহ্য করতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বড় ভাই বললেন—তা ঠিক আছে। কিন্তু কপাল খারাপ আমার। আমি বললাম—কী রকম? বড় ভাই বললেন—যেহেতু তোর ভাবীর মাথায় গরম আর সূর্যের তাপ লাগে, তাই তার মাথার সব উকুন নিরাপদ এবং আরাম আশ্রয়ের খোঁজে চলে এসেছে আমার মাথায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর