সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বক্সখাট নয় চৌকিকাহিনী

ইকবাল খন্দকার

বক্সখাট নয় চৌকিকাহিনী

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই মেসে থাকে। কথায় কথায় সে বলল, আপনি কি জানেন বড় ভাই দেশে ঠিক কী পরিমাণ চৌকিদার আছে? আমি বললাম, এটা শুধু আমি কেন, আমার মতো কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। কারণ এটা হিসাবের ব্যাপার। কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করলে... ছোট ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ভাই, আপনি এত সিরিয়াস আলোচনায় চলে যাচ্ছেন কেন? শোনেন ভাই, দেশে কী পরিমাণ মেস আছে, সেটা যদি বের করা যায়, তাহলে খুব সহজেই জানা যাবে দেশে মোট কতজন চৌকিদার আছে। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, এটা তুই কী বলছিস? মেসের সংখ্যার সঙ্গে চৌকিদারের সংখ্যার সম্পর্ক কোথায়? ছোটভাই বলল, কী যে বলেন ভাই, মেসে যারা থাকে, তারা কিন্তু ছোট ছোট চৌকিতে থাকে। যতটা চৌকি, ততজন চৌকিদার। ভাই, দোকানের মালিক যদি দোকানদার হয়, তাহলে চৌকির মালিককে তো চৌকিদারই বলব, নাকি! ছোটভাইয়ের কথাগুলো যদি মেনে নিই, তাহলে বলতে হবে দেশে চৌকিদারের সংখ্যা আরেক দফা বাড়ল। কারণ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে বক্সখাট দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে চৌকি। তার মানে হবু ডাক্তারদের চৌকিতে আরামের ব্যবস্থা করে চৌকিনিবাসী বানিয়ে ছাড়ার প্রচেষ্টা। তবে, এর পেছনে কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের যুক্তি থাকতেই পারে। শত হলেও তারা কর্তৃপক্ষ। তারা তো আর ছাত্রদের মন্দটা চাইতে পারেন না! আমার এক চাচা কিছুদিন একটা আবাসিক স্কুল চালাতেন। তিনি ঘটনা শুনে বললেন, ছাত্রদের বক্সখাট না দেওয়াই ভালো। বক্সখাটের চেয়ে চৌকি কত নিরাপদ! আমি বললাম, উদ্ভট কথা বলবেন না। বক্সখাটের চেয়ে চৌকি নিরাপদ মানে? চাচা বললেন, নিরাপদ মানে সেইফ। ক্যামনে সেইফ, ক্যামনে নিরাপদ, শোনো মিয়া। তোমার চাচী সেইদিন বাসায় একা ছিল। আঁতকা সে এমন জোরে চিক্কুর দিয়া উঠল যে, আশপাশের লোকজন ছুইট্টা আসল। কী হইছে, কী হইছে— সবাই যখন এই প্রশ্ন করতেছিল, তোমার চাচী তখন মুখ খুলল। জানাইল সে নাকি একটা তেলাচোরা দেখছে। সবাই লাঠিলুঠি নিয়া তেলাচোরাটা মারতে রেডি হইল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারতে পারল না। কেন মারতে পারল না জান? কারণ তেলাচোরাটা বক্সখাটের বক্সের ভিতরে ঢুইকা গেছিল। এইবার তুমিই কও, বাসায় যদি বক্সখাট না রাইখা চৌকি রাখতাম, তাইলে কি তেলাচোরাটা আত্মগোপন করার চান্স পাইত? মেডিকেল কলেজে বক্সখাটের বদলে চৌকি দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে যখন বাসায় কথা বলছিলাম, তখন বুয়া এগিয়ে এলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কিছু বলবে কি না। বুয়া বলল, বলমু মানে! অবশ্যই বলমু। বক্সখাটের বদলে যারা চৌকি দেয়, তারা কি মানুষ! মানুষ হইলে মনে একটু দয়ামায়া থাকত। আমাদের ওপর এত নির্দয় হইতে পারত না।

আমি বললাম, তুমি এসব কী বলছ বুয়া? চৌকি দেওয়া হয়েছে ছাত্রদেরকে। এখানে তোমাদের ওপর মানে বুয়াদের ওপর নির্দয় হওয়ার কী আছে? বুয়া বলল, অবশ্যই ব্যাপার আছে। চৌকি দিলে বাড়তি পরিশ্রম কার হয়? আমাদের হয়, আমাদের। মানে বুয়াদের। কই, এই বাড়তি পরিশ্রমের জন্য তো কেউ বাড়তি টাকা দেয় না! তাইলে এইটা নির্দয় নিষ্ঠুর আচরণ না? আমি সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলাম, চৌকি দিলে কীভাবে বাড়তি পরিশ্রম হয়? বুয়া বলল, বক্সখাটের তলাটা বদ্ধ থাকে। তাই তলায় ঝাড়ুও দিতে হয় না, মুছতেও হয় না। আর চৌকির তলা থাকে খোলা। তাই ঝাড়া মোছা দুইটাই করতে হয়। আর ঝাড়া মোছা কত পরিশ্রমের, জানেন আপনে! নিজে কাজটা কইরা দেখেন।

আমার এক খালুকে দেখে মনে হলো খুবই মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। খালু বললেন, এই যে বক্সখাটের বদলে চৌকি দেওয়া হইল, এইটা শুধু ছাত্রদের অপমান না, আমার নিজেরও অপমান। এইভাবে যদি বক্সখাট তুইলা দেওয়া হয়, তাইলে তো একদিন কেউ আমার বংশের নাম মুখেও নিব না। আমি বললাম, আপনার বংশের নাম কী? খালু বললেন— আমার পুরা নামটা কী, সেইটা স্মরণ করো। তাইলেই বুঝবা আমার বংশের নাম কী। আরে মিয়া আমার পুরা নাম—সিকান্দর ‘বক্স’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর