আমার এক বড় ভাই ফোন দিয়ে বলল, তোর খোঁজে ভালো ডাক্তার আছে? ভালো একটা ডাক্তার খুব দরকার। আমি বললাম, আপনার তো ডাক্তার খোঁজার কথা না। কারণ, আপনাদের পারিবারিক ডাক্তার আছে। বড়ভাই বলল, এই পারিবারিক ডাক্তার দিয়ে পোষাচ্ছে না। তার কথাবার্তা শুনে যা বুঝতে পারছি, তার কথা মানতে গেলে আমাকে এবং আমার পরিবারকে পথে বসতে হবে। এই ঠাণ্ডার মৌসুমে আমরা পথে বসে সর্দি কাশিও বাধাতে চাই না, তার কথাও শুনতে চাই না। এ জন্য ভালো একটা ডাক্তার দরকার। যে আমাদের অন্তত পথে বসানোর পাঁয়তারা করবে না। আমি বললাম, আপনার ডাক্তার কি আজকাল ভিজিট বেশি নিচ্ছে? যদি তাই না হবে, তাহলে পথে বসার প্রশ্ন আসছে কেন? বড় ভাই বলল, আরে না রে বোকা, ভিজিটের ব্যাপার না। ওষুধের পাশাপাশি সে কিছু পথ্য দেয়। তার সেই পথ্যের তালিকায় এমন এক পথ্য আছে, যদি আমরা সেটা মানতে যাই, তাহলে শত শত টাকা চলে যাবে এই পথ্যের পেছনেই। আমি বললাম, এত লম্বা ভূমিকা না দিয়ে পথ্যটা কী, সেটা একটু বলে ফেলেন। বড় ভাই বলল, এই ডাক্তার বলে কী, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক খণ্ড রসুন খাওয়ার জন্য। অথচ রসুনের বাজার এখন আগুন। পুরো ফ্যামিলি যদি রোজ সকালে এক খণ্ড করে বসুন খায়, তাহলে বাসার খাট সোফা পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হবে। এর চেয়ে ভালো আমি ডাক্তার বদলাব। আশা করি নতুন ডাক্তার আমাকে রসুনের বদলে পেঁয়াজ খেতে বলবে। পেঁয়াজের দাম এখন কম তো! আমার এক প্রতিবেশী বলল, ভাইরে, দিন কীভাবে বদলে যায় দেখেন। কিছুদিন আগেই একজন আমাকে কথাটা বলেছিল। অথচ অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে কীভাবে বদলে গেল কথাটা। আমি বললাম, কী কথা, সেটা একটু শুনি। প্রতিবেশী বলল, কিছুদিন আগে ডাক্তার বলেছিল রসুন নাকি হার্টের উপকার করে। আমি বললাম, একদম ঠিক কথাটা বলেছিল। প্রতিবেশী বলল, এখন সেই ঠিক কথাটাই হয়ে গেছে বেঠিক। কারণ, এখন রসুন আর হার্টের উপকার করে না। বরং রসুনের নাম শুনলেই আমার হার্টঅ্যাটাকের দশা হয়। যেহেতু এক কেজি রসুন মানেই পুরো পকেট খালি। আমার এই প্রতিবেশীর কথার মতোই আরেকটা কথা শুনলাম সেদিন আমার আরেক প্রতিবেশীর মুখ থেকে। সে বলছিল, ভাই, বোম্বের নায়িকাদের আমি এত বেশি পছন্দ করি যে, সারাক্ষণ তাদের কথা বলতে ভালো লাগে, শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু রসুনের দাম বাড়ার পর থেকে তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা কমে গেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, রসুনের দাম বাড়ার সঙ্গে বোম্বের নায়ক নায়িকাদের প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়ার সম্পর্ক কী? প্রতিবেশী বলল, বোম্বের সব নায়ক নায়িকার প্রতি ভালোবাসা কমে গেছে, তা বললে বেশি বলা হবে! মূলত একজন নায়কের ওপর থেকে ভালোবাসা কমে গেছে। ভালোবাসা কমে যাওয়ার কারণ, তার নাম শুনলেই আমার কলিজায় পানি থাকে না। আসলে তার নাম ঋত্বিক রোশন তো, আমার শুধু মনে হয় ঋত্বিক রসুন। ব্যস, পড়ে যাই রসুনাতঙ্কে। পাশের বাড়ির ভাবি বলল, ভালোই হয়েছে রসুনের দাম বেড়ে। এখন আমার রূপচর্চাটা খুব ভালোভাবেই করা হচ্ছে। আমি বললাম, আপনার এই আধ্যাত্মিক কথার মানে যদি একটু ভেঙে বলেন আর কি। ভাবি ভেঙে বললেন, আগে রসুনের দাম কম ছিল। তাই ঠিক পরিমাণে রসুন তরকারিতে দিতাম। ফলে এই রসুন ছিলতে গিয়ে নখের নেইল পলিশ নষ্ট হয়ে যেত। এখন বেশি রসুন ছিলতেও হয় না, নেইল পলিশেরও কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না।
আমার এক ছোটভাইকে ফোন করলাম। সে বলল সে নাকি বাজারে। আমি বললাম, বাজারে কী করিস? তোকে তো জীবনেও বাজার করতে দেখিনি। ছোট ভাই বলল, আমি আমার প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করব। তাই ছবি তুলতে আসলাম। আমি বললাম, কিন্তু বাজারে কেন? ছোটভাই বলল, ছবিটা তুলব রসুনের স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে। দামি জিনিস বলে কথা! যাই, রসুনমাখা সেলফিতে লাইক দিয়ে আসি...