সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি না জানলে বিরাট বিপদ

আলিম আল রাজি

প্রযুক্তি না জানলে বিরাট বিপদ

বছর চারেক আগের ঘটনা। ঘড়িতে তখন বেলা একটা। বিছানাকান্দির স্বচ্ছ জলে সূর্য চকচক করছে। সবাই মুগ্ধ হয়ে সে জল দেখছে, গায়ে মাখছে। আমি কোনোটাই করছি না। আমি তাকিয়ে আছি এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটক দলের দিকে যার সব সদস্যই মেয়ে। একজনের চেয়ে আরেকজন বেশ সুন্দরী। এখানে এসে যে হৃদয় হারিয়ে ফেলব ভাবিনি। একটু পরে দেখলাম সুন্দরীদের সঙ্গে একটা ডিএসএলআরও আছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, হুহ, ডিএসএলআর! পৃথিবীর কোনো ক্যামেরার সাধ্য আছে এদের সৌন্দর্য ধারণ করার?

মেয়েরা একটার পর একটা ছবি তুলছে, বিভিন্ন পোজ দিচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম সুন্দরীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি আমার দিকে হেঁটে আসছে। আমি চোখ কচলে, নাহ, ভুল দেখেছি না। মেয়েটি হেঁটে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। লজ্জাভরা হাসি টেনে বলল—

: এক্সকিউজ মি!

: আমাকে বলছেন?

: জি, আপনাকেই।

: আপনি কি ব্যস্ত?

: না, না। একদমই না।

মেয়ে নিজেই বলল, ‘হয়েছে কী, আমরা এসেছি ঢাকা থেকে। আমরা চাই আমাদের একটা গ্রুপ ছবি থাকুক। আপনি আমাদের একটা ছবি তুলে দিবেন?’

বললাম, ‘অবশ্যই!’

 

একটু পরেই তার হাতে থাকা ডিএসএলআরটা আমার হাতে দিল। ও মা! এ কী! এই জিনিস দেখি বেশ ভারী! জীবনে প্রথম ডিসএলআর হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য হলো।

মেয়ে আমাকে বলল, ‘ছবি তুলতে পারবেন তো! নাকি দেখিয়ে দেব?’

আমাকে ছবি  তোলা শেখাবে? এ তো প্রেস্ট্রিজের ব্যাপার। আমি বললাম, ‘না না। লাগবে না। আপনারা দাঁড়ান, আমি তুলে দিচ্ছি।’

 

মেয়েরা সারি বেঁধে দাঁড়াল। আমি ক্যামেরাটা চোখে নিলাম। ছবি তোলার বাটনে ক্লিক করার জন্য আঙুল বাড়ালাম। অ্যাঁ মা! বাটন কই? আমি ক্যামেরা থেকে চোখ না সরিয়েই আঙুল দিয়ে বাটন খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু বাটন টাইপের কোনো জিনিসই হাতে লাগল না। এদিকে মেয়েরা পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কোনো সংকেত না পেয়ে এক মেয়ে বলল, ‘ভাইয়া, তুলেছেন?’ আমি তো আর বলতে পারি না যে ‘ধুর মিয়া, কী ক্যামেরা, তোমার বাটনই নাই!’ তাই কণ্ঠে যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসের টেনে বললাম, ‘অবশ্যই, কয়েকটা তুলেছি। অন্য পোজ দেন।’ মেয়েরা তো সেই পোজ! ভিন্ন ভিন্ন চাহনির পোজে দাঁড়াল। আমি আবার ক্যামেরা চোখে নিলাম। এবার বাটন বের করেই ছাড়ব। আমি এলোপাতাড়ি খোঁজাখুঁজি করলাম। এটা কী! আরে! এই তো বাটন! কিন্তু এত বড় কেন! বড় ছোট ব্যাপার না। আমি রিস্ক নিয়ে দিলাম চাপ। এ্যা মা! এবার দেখি কিউ কিউ করে শব্দ করা শুরু করল ক্যামেরাখানা! এ কী বিপদ। আমি তাকিয়ে দেখি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেছে। মুশকিল!

 

মেয়েদের একজন বলে উঠল, ‘ভাইয়া, হলো?’ আমি তো আর বলতে পারি না, ‘ধুর মিয়া, বন্ধ হয়ে গেছে।’ আমি আবারও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, ‘অবশ্যই, কয়েকটা তুলেছি। অন্য পোজ দেন।’

মেয়েদের একজন বলল, ‘না না। আর তুলব না।’ আমি বললাম, ‘কী বলেন? বিছানাকান্দিতে এসেছেন মাত্র দুইটা তুলেই চলে যাবেন? আরও তুলেন।’ মেয়েরা আবার দাঁড়াল। আমি এবার বেশ কয়েকটা বাটনের সন্ধান পেয়ে গেলাম। এলোপাতাড়ি টিপতে লাগলাম বাটনগুলো। হঠাৎ বিপ শব্দ হলো। ক্যামেরায় তাকাতেই দেখি ‘ডিলিটেড’। হার্টবিট বেড়ে গেল। মনে হয় সব ডিলিট হয়ে গেছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আর ঝুঁকি নেব না। আমি ডিএসএলআর ব্যাগের মধ্যে ঢুকানো শুরু করলাম।

একটা মেয়ে বলল, ‘না ভাইয়া, ব্যাগে ভরা লাগবে না। হাতে দিন।’

আমি কিছুটা ধমকের সুরে বললাম, ‘ধুর ভিজে যাবে না?’ ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ভালো করে চেইন লাগিয়ে প্রথম মেয়েটার হাতে দিয়ে থ্যাংক্স বলে আমার বন্ধুকে নিয়ে দৌড় দিয়ে নৌকায় উঠে পড়লাম। মাঝিকে বললাম, ‘তাড়াতাড়ি নৌকা ছাড়ো।’ নৌকা চলতে লাগল। পেছনে ফিরে দেখলাম মেয়েরা ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করছে। আমার নৌকা অনেক দূর চলে এলো। মেয়েদের হাতে ক্যামেরা। তারা সবাই ক্যামেরাটা ঘেঁটে দেখল, তারপর সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে আমার নৌকার দিকে তাকিয়ে রইল!

সর্বশেষ খবর