আমার এক বন্ধু বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিল। সপ্তাহখানেক আগে সে দেশে ফিরল এবং ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াল। আমি তাকে বললাম, অনেকদিন পর তো ঢাকা শহরকে দেখলি। কেমন দেখলি? বিশেষ কিছু চোখে পড়ল কি? বন্ধু বলল, বিশেষ কিছু চোখে পড়ল কি পড়ল না, সে প্রসঙ্গে না হয় না-ই গেলাম। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা আমাদের নজর এখনো ঠিক জায়গায় দিতে পারিনি। আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম, এটা কী ধরনের কথা? বন্ধু বলল, এটাই আসল কথা। বিদেশিদের নজর উপরের দিকে। আর আমাদের নজর নিচের দিকে। মানে মাটির তলায়। নইলে সারা বছরই মাটি খোঁড়ার কাজে বিজি থাকব কেন? বুঝলাম বন্ধু মূলত ঢাকা শহরের খোঁড়াখুঁড়ির ওপর বিরক্ত হয়েছে। তাকে বললাম, দেখ বন্ধু, খোঁড়াখুঁড়িটা কিন্তু জনগণের স্বার্থেই করা হয়। এটা শখের কোনো কাজ নয়। বন্ধু বলল, জি, জনগণের স্বার্থে তো বটেই। আর এ জন্যই অনেককেই দেখলাম ময়লার পোঁটলা নিয়ে ডাস্টবিন পর্যন্ত যাচ্ছেন না। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যে পানি জমে আছে, পট করে সেখানেই পোঁটলা ফেলে দিচ্ছেন এবং কী সুন্দর ভেসে বেরাচ্ছে। কেউ কেউ তো বাসায় ঢোকার পর শুতে যাওয়ার আগে পা ধোয়ার ঝামেলা থেকেও বেঁচে গেছে। কারণ বাসার সামনে যে পানি জমে আছে, সেগুলো দিয়েই পা ধোয়ার কাজটা আরামে সেরে ফেলছেন। এর চেয়ে সুযোগ-সুবিধা আর কী হতে পারে! আমার এক চাচা বললেন, সারাজীবন লুঙ্গি পরছি। লুঙ্গি পইরা আরাম পাইছি, তাই প্যান্ট তো পরিই নাই, পায়জামাও পরি নাই। কিন্তু ঢাহা শহরে যেইভাবে খোঁড়াখুঁড়ি চলতাছে, তাতে মনে হয় বেশিদিন লুঙ্গি পরা যাইব না। আমি বললাম, খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে লুঙ্গি পরা না পরার সম্পর্ক কী? চাচা বললেন, সম্পর্ক আছেরে ভাতিজা। তোর কোমরের হাড় যদি নইড়া যায়, তাইলে বুঝবি সম্পর্কটা কোন জায়গায়। আমি বললাম, এত আধ্যাত্মিক কথা না বলে কী হয়েছে সেটা বলেন। চাচা বললেন, বলাবলির কিছু নাই। দুই কদম হাঁটলেই দশটা গর্ত পড়ে। দশ কদম হাঁটলে ৩০টা। এসব গর্ত তো আর এমনি এমনি অতিক্রম করা যায় না। মারতে হয় দীর্ঘ লম্ফ। কিন্তু লুঙ্গি পইরা ঝম্ফ মারতে গেলে লুঙ্গিতে প্যাঁচ লাইগা যায়। গতকালও প্যাঁচ লাইগা পইড়া কোমরের হাড্ডি নাড়ায়া ফেললাম। আইচ্ছা, তোর খোঁজে ভালো হাড় ভাঙার কবিরাজ আছে?