শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু বাঁধভাঙা এ প্লাস

ইকবাল খন্দকার

তবু বাঁধভাঙা এ প্লাস

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিল বলে আমাকে আমার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন সন্ধ্যার পর আমার বান্ধবীরা পড়াশোনা করে, আর আমি বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখি...

 

ঘুম ভাঙল মোবাইলের শব্দে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার এক ছোটভাইয়ের ফোন। সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। আমি ফোন রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলাম, রেজাল্ট কী? ছোটভাই বলল, রেজাল্ট লজ্জাজনক। আমি বললাম, পড়াশোনা না করলে রেজাল্ট তো লজ্জাজনক হবেই। ছোটভাই বলল, ভাই, আপনি বোধহয় আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি এ প্লাস পেয়েছি। আমার আশপাশে যারা আছে, আমার বন্ধুবান্ধব, খালাতো মামাতো ভাই, সবাই এ প্লাস পেয়েছে। তো সবাই যেটা পেয়েছে, আমি সেটা পেয়েছি, বিষয়টা একটু লজ্জাজনক না? এবার আমার এক ভাগ্নের কথা বলব। সে আমার খুব কাছের ভাগ্নে। তাই রেজাল্ট বের হওয়ার পরপরই তাদের বাসায় ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি বাসায় ভাগ্নে ছাড়া আর কেউ নেই। তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম,  রেজাল্ট কী? ভাগ্নে বলল, আপনি তো জানেন, আমি সবসময়ই ব্যতিক্রম। আমি কখনোই আসলে দলের মধ্যে থাকতে চাইনি। একা একা ব্যতিক্রম কিছু করে মানুষের নজরে পড়তে চেয়েছি। আমি ব্যতিক্রম রেজাল্ট করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছি। আমি বললাম, কী রকম? ভাগ্নে বলল, আমার বন্ধুরা সবাই এ প্লাস পেয়েছে, আমি পেয়েছি ‘বি’। জানেন, স্থানীয় সাংবাদিকরা এ প্লাস প্রাপ্তদের গ্রুপ ছবি তুলেছে, আর আমি যেহেতু একাই ‘বি’ পেয়েছি, তাই আমার তুলেছে একক ছবি। আপনিই বলেন, গ্রুপ ছবি ভালো নাকি একক ছবি ভালো?

আমার পরিচিত এক মিষ্টির দোকানদার আছে। সে আফসোস করে বলল, কয়দিন পরে পরে একেকটা নিয়ম হয় আর গরিবের পেডে লাত্থি পড়ে। কিসের এ প্লাসের নিয়ম করছে, এখন এইটা সবাই পাইতাছে। আর সবাই যেই জিনিস পায়, সেইটার জন্য কেউ তো আর কাউরে মিষ্টি খাওয়াইতে চায় না। এই কারণে এখন আর আগের মতো মিষ্টিও বিক্রি হয় না। আমাগো মতো গরিবের পেডে লাত্থি। আইচ্ছা, যারা এই এ প্লাসের নিয়ম করছে, তারা কি এই নিয়মটা কইরা দিতে পারে না, এ প্লাস পাইলে কমপক্ষে আধা মণ মিষ্টি খাওয়াইতে হইবো! এই নিয়মটা করলেও তো আমাগো ব্যবসা বাণিজ্য একটা সচল থাকে। আমার এক ভাবি বলল, রেজাল্ট এবার একটু খারাপ হয়তো হয়েছে, তাতে কী। রেজাল্ট ভালো হলেই কেবল সুবিধা পাওয়া যায়, রেজাল্ট খারাপ হলে সুবিধা পাওয়া যায় না, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নাই। আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল, আমার বান্ধবীদের রেজাল্ট ভালো হয়েছিল।

আমি কিন্তু আমার বান্ধবীদের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমি বললাম, কী রকম? ভাবি বললেন, কীরকম আবার। আমার বান্ধবীরা ভালো রেজাল্ট করেছিল বলে তারা বড় বড় সার্টিফিকেটের জন্য এখনো লেখাপড়া করে যাচ্ছে। আর আমার রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিল বলে আমাকে আমার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন সন্ধ্যার পর আমার বান্ধবীরা পড়াশোনা করে, আর আমি বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখি। ভালো না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর