সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

যারা এ প্লাস পায়নি তাদের বাসায় ইন্টারনেট লাইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে

— ইশতিয়াক আহমেদ

যারা এ প্লাস পায়নি তাদের বাসায় ইন্টারনেট লাইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে

গতবারের তুলনায় এবার এসএসসিতে কমে এসেছে এ প্লাসের সংখ্যা। রেজাল্টও সুবিধার না। কুমিল্লায় তিন বছর ধরে কমছে এ প্লাস। ফলশ্রুতিতে কমে গেছে মিষ্টির বেচাবিক্রি। ফাও-ফাও যারা মিষ্টি খেতেন তাদের মাথায় হাত পড়েছে বলা যায়। কিন্তু কেন এ প্লাস কমে যাচ্ছে? এভাবে এ প্লাস কমতে থাকলে ফেসবুক জীবনে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তানভীর আহমেদ কথা বলেছেন ফেসবুক সচেতন মহলের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে—

 

এ প্লাস কমে যাওয়াটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

— প্রতিবেশীর বাড়িতে মিষ্টি সরবরাহের অপ্রতুলতা হিসেবে দেখছি। গতবার আরও অনেক জায়গা থেকে মিষ্টি এসেছে বাসায়, এবার আসেনি। যা খুবই দুঃখজনক।

 

এটা কার ব্যর্থতা বলে মনে হয়?

— মিষ্টি দোকানিদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছি। নিশ্চয়ই তারা গতবার মিষ্টি তৈরিতে তেমন কোনো বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফল এবারের মিষ্টি বিক্রিতে বিপর্যয় মানে পরোক্ষভাবে এ প্লাসে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

 

কুমিল্লায় গত তিন বছরে এ প্লাস কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে কেন?

— একটু ভালো করে দেখলে দেখা যাবে, এখানেও একটা মিষ্টি জাল ছড়িয়ে আছে। কুমিল্লাজুড়ে হাজারো মাতৃভাণ্ডার। প্রকৃত মাতৃভাণ্ডার খুঁজে না পাওয়া এবং নকল মাতৃভাণ্ডারের বাজে মিষ্টির প্রতি অনীহাই শিক্ষার্থীদের এরকম হতাশাজনক রেজাল্ট হয়েছে বলে আমি মনে করি।

শিক্ষার্থীর মনোজাগতিক ভাবনায় হয়তো এটা বারবার উঁকি দিয়ে গেছে, যে দেশে প্রকৃত মিষ্টি খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে প্রকৃত ফলাফল কীভাবে করব? কারণ রেজাল্টের মূল্যায়ন হয় মিষ্টিতে। সেখানে নকল মিষ্টি দিয়ে আসল রেজাল্ট উদযাপন অর্থহীন।

 

এখানকার শিক্ষার্থীরা ফেসবুক চালায়, গেম খেলে সারাদিন— এ প্লাস কমে যাওয়ার পেছনে এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন?

— শুধু গেম আর ফেসবুককে দায়ী করলে হবে না। আমি মনে করি, এর পেছনে রয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের ভূমিকা। শিক্ষার্থীরা গরমের সময় অতি গরমে পড়তে পারেনি। তারা ভেবেছে শীতে আরাম করে পড়বে, দেখেছেন শীতই আসেনি। পড়াও হয়নি আরাম করে। রয়েছে, মোবাইলের বিউটিক্যামগুলোর প্রভাব। শিক্ষার্থীরা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলে তা অ্যাডিট করতে করতেই নষ্ট করেছে প্রচুর সময়। রয়েছে বাহুবলীর প্রভাব। কয়েক বছর ধরে বাহুবলী নামে একটি ছবি নির্মাণের খবর এবং এর দুই পর্বের সিনেমা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করা হয়েছে। রয়েছে, ঈদের পর তীব্র আন্দোলনের প্রভাব। শিক্ষার্থীরা ভেবেছে, ঈদের আগে খেলাধুলা করে নেই, ঈদের পর থেকে আন্দোলন হলে আর বের হওয়া হবে না, তখন পড়ব। তাই ঈদের আগে খেলেও তারা সময় নষ্ট করেছে, আবার ঈদের পর আন্দোলন না হওয়ায় তারা আগের মতোই বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছি। 

আসলে এরকম আরও ৩৩ টি বিষয়ের প্রভাব আছে, সময় স্বল্পতার কারণে আজ আর সেদিকে গেলাম না।

 

‘ভালো ইন্টারনেট প্যাকেজের অফার ছিল না বলেই এ প্লাস পাইনি’, বলে যারা দুষছেন তাদের বক্তব্য কী সমর্থন করেন?

— না যারা বলেন অফার ভালো ছিল না আমি তাদের বলব তোমরা বিজ্ঞাপন মনোযোগের সঙ্গে পড়বে। আমাদের অফারের বিজ্ঞাপনগুলো পড়লে দেখা যাবে, এত স্পিড দিচ্ছে তারা যে এটা দিয়ে সামান্য গান তো দূরে গায়ককেসহ ডাউনলোড করে ফেলা যাবে। সামান্য সিনেমা তো দূরে পুরো সিনেমা হল ডাউনলোড করে ফেলা যাবে। অফার ভালোই ছিল কিন্তু অফারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো ইন্টারনেট ছিল না হয়তো।

 

এ প্লাসের সোনালি দিনে ফিরে যেতে আমাদের করণীয় কী?

— আমি যেহেতু নকলকে সমর্থন করি না, প্রশ্ন ফাঁসকে সমর্থন করি না। আমি যেহেতু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিয়ে আশাবাদী হতে পারি না তাই এ প্লাসের বাম্পার ফলনের জন্য আমি শিক্ষকদের মানবিক দৃষ্টি আরও প্রসারিত করার দাবি জানাই। তারা চাইলেই এ প্লাস বাড়বে। শিক্ষকরাই পারেন তাদের সন্তানসম শিক্ষার্থীদের দিকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে। সামান্য কটা নাম্বার বাড়িয়ে দিলে তো তেমন ক্ষতি নেই, তাদের তো আর টাকা পয়সা নষ্ট হয় না।

যারা এ প্লাস পায়নি তাদের ফেসবুক ভবিষ্যৎ কী?

—খুবই খারাপ ভবিষ্যৎ। বাসায় ইন্টারনেট লাইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মা বাবার কঠিন নজরদারিতে থাকতে পারে। তবে অনেকদিন পর ফেসবুকে এসে, ‘হ্যালো ফ্রান্স কেমন আছো?’ লিখে বেশ কিছু লাইক অবশ্য অর্জন করতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর