সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানুষে ঢাকা ঢাকা শহর

ইকবাল খন্দকার

মানুষে ঢাকা ঢাকা শহর

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ হ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

রক্ত খাওয়ার পর পেট ভারি হয়ে গেলে মশারা যে এখন একটু বসে শুয়ে রেস্ট নেবে, সেই উপায়ও এখন আর নেই। কারণ, ঢাকা শহরে মানুষজন এত বেড়ে গেছে, এখন সব জায়গায় মানুষের ঘন পদচারণা

   

কিছুদিন আগে আমার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথাবার্তার শেষ পর্যায়ে আমি তাকে বললাম যেন আমার বাসায় বেড়াতে আসে। ছোটভাই বলল, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার টাইম নেই ভাই। সারাদিন জিমে পড়ে থাকতে হয়। আমি ঠাট্টা করে বললাম, শরীরচর্চার ওপর হঠাৎ এত গুরুত্ব দিলি যে! শিগগিরই সিনেমায় নাম লেখাতে যাচ্ছিস নাকি? ছোটভাই বলল, ঠাট্টা কইরেন না ভাই। নায়ক হওয়ার জন্য স্লিম হওয়া কতটা জরুরি জানি না। তবে ঢাকা শহরে থাকতে হলে স্লিম হতেই হবে। নইলে যে কোনো সময় যে কোনো বিপদে পড়তে হবে। আমি আগ্রহ প্রকাশ করলাম, কী ধরনের বিপদ? ছোটভাই বলল, নানা ধরনের বিপদ। আমি যে মেসে থাকি, সে মেসে মোটা মানুষের কোনো জায়গা নেই। কারণ, এক চৌকিতে ঘুমাতে হয় চারজনকে। মোটা হলে তো চারজনের জায়গা হবে না। আবার চৌকি ভেঙে পড়ারও আশা আছে। এদিকে বাড়িওয়ালা এমন কঞ্জুসের কঞ্জুস যে, তার কথা হচ্ছে, পেটমোটা মানুষ তার মেসে থাকতে পারবে না। কারণ, পেট বেশি মোটা থাকলে নাকি সেই পেটে বেশি পানি ধরে। আর পেটে বেশি পানি ধরা মানেই তার মেসের চাপকলের পানি বেশি খরচ হওয়া। আমাদের মেস মালিক বাংলা সিনেমার কমেডিয়ান রবিউলের খুব ভক্ত। সবসময়ই সে আমাদেরকে বলে আমরা যাতে আমাদের স্বাস্থ্যটা রবিউলের মতো লিকলিকে বানাই। এই টাইপের স্বাস্থ্য হলে এক খাটে চারজনের জায়গায় ছয়জন শোয়া যাবে বলে তার ধারণা। পাঠক, এই লম্বা ঘটনার কোনো সারমর্ম আপনারা বুঝতে পারছেন কিনা জানি না। সারমর্ম আসলে তেমন কিছু না। সারমর্ম হচ্ছে—অধিক জনসংখ্যা। ঢাকা শহরে লোকসংখ্যা বেশি বলেই বাড়িওয়ালারা নানান কায়দা করার চান্স পায়। যদি লোকজন কম থাকত, যদি বাসা বা মেস ভাড়া দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত লোক পাওয়া না যেত, তাহলে তারা এতটা ত্যাড়ামি করার সাহস পেত না। শুধু বাড়ি ভাড়া কেন, প্রতিটা  ক্ষেত্রে আপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই জনসংখ্যা। আমার এক বন্ধু বলল, ছোটবেলায় আমার অভ্যাস ছিল, বৃষ্টি এলেই আমি জানালার পাশে বসে যেতাম আর হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখতাম। কিন্তু ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এখন এতই বেড়ে গেছে যে, এখানে এখন এতই ঘনবসতি যে, ছোটবেলার সেই অভ্যাসটা এখন আর ধরে রাখার উপায় নেই। গতকাল অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম সেই অভ্যাসটার প্র্যাকটিস করার জন্য। অতঃপর পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যে, আরেকটু হলে সবাই আমাকে চোর সাব্যস্ত করে ধোলাই দিয়ে ফেলত। আমি বললাম, বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখার সঙ্গে চোর সাব্যস্ত হওয়া কিংবা ধোলাইয়ের কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, আমার বাসার আশপাশে এতই ঘন বসতি যে, বাড়ির ওপর বাড়ি, বাসার ওপর বাসা। জানালার পাশে বসে যেই আমি বৃষ্টি ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়ালাম, আমার হাত চলে গেল পাশের বাসার বারান্দায়। সেই বাসার লোকজন মনে করল আমি বুঝি তাদের বারান্দার কাপড় চুরির জন্য হাত বাড়িয়েছি। ব্যস, তারপর যা হওয়ার তাই হলো। আমার প্রতিবেশী বলল, একটা বিষয় চিন্তা করে আমার খুব ভালো লাগছে। ঢাকা শহরে মানুষ বেশি হওয়ায় আগে মশারা আরামে রক্ত খেতে পারত। কিন্তু এখন মানুষ এতো বেশি বেড়ে গেছে যে, পরিস্থিতি এখন পুরো উল্টো হয়ে গেছে। এখন মশাদের অস্তিত্বই পড়ে গেছে হুমকির মুখে। আমি জানতে চাইলাম, কী রকম? প্রতিবেশী বলল, রক্ত খাওয়ার পর পেট ভারি হয়ে গেলে মশারা যে এখন একটু বসে শুয়ে রেস্ট নেবে, সেই উপায়ও এখন আর নেই। কারণ, ঢাকা শহরে মানুষজন এতো বেড়ে গেছে, এখন সব জায়গায় মানুষের ঘন পদচারণা। সব জায়গায় মানুষ হাঁটে। এই দেখেন, একটু আগে আমার জুতার নিচে চাপা পড়ে তিনটা মশা অকাল প্রয়াত হয়েছে। আমি বললাম, চুপ করেন। প্রতিবেশী রেগে বললেন, কী, আপনি আমাকে চুপ করতে বলছেন? আমি বললাম, আহা রাগ করছেন কেন! আমি তো খামাখা চুপ করে থাকছি না। তিনটা মশা মারা গেছে, তাই তিন মিনিট নীরবতা পালন করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর