সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সেই যে আমার ঢাকা ভার্সিটির দিনগুলি

ইকবাল খন্দকার

ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া আর বিশ্ব জয় করা সমান কথা— এমন একটা বাণী কারও কারও মুখে শুনে ভয়ে বুকে থুতু দিয়ে শার্টের বোতাম ভিজিয়ে ফেলতাম প্রায়ই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল এই বিশ্ব জয়ের ঘটনাটাই ঘটিয়ে ফেললাম। মানে আমি হয়ে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ অবস্থায় খুশিতে লাফালাফি করে হাঁটু মচকে ফেলার কথা থাকলেও আমি ততটা খুশি হতে পারছিলাম না। কারণ, আমি ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম রোজ বাড়ি থেকে এসে যদি ক্লাস করতে হয়, তাহলে আমাকে বিমান কিনতে হবে। বাস বা ট্রেন দিয়ে এসে যথাসময়ে ক্লাস ধরা সম্ভব না। কিন্তু ভর্তি ফি এবং অন্যান্য ফি দিতে গিয়ে যেহেতু পকেটে আর তেমন কোনো টাকা অবশিষ্ট ছিল না, তাই বিমান কেনার চিন্তা মাথা থেকে একেবারেই সরিয়ে ফেললাম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আবাসিক হলে থাকব এবং আরামসে ক্লাস করব। এর মধ্যে এক দিন হলে উঠার জন্য চেষ্টা করতে গিয়ে জানলাম ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া যদি বিশ্ব জয় করার সমান হয়, তাহলে হলে উঠতে পারা হচ্ছে মহাবিশ্ব জয় করার সমান। কেউ কেউ পরামর্শ দিল— হলে উঠার দরকার নেই। ঢাকায় কোনো আত্মীয়স্বজন থাকলে তাদের বাসায় ওঠো। কিন্তু ঢাকা শহরে আত্মীয় কেন, আত্মীয়ের নামগন্ধ না থাকায় আমাকে হলে উঠার চেষ্টাই অব্যাহত রাখতে হলো। এক পলিটিক্যাল বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা বললাম। বললাম, ঢাকায় আমার কেউ নেই। যদি হলে সিট না পাই, তাহলে বাড়ি চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বড় ভাই ঠাঠা করে হাসলেন। এক সময় হাসি থামলে বললেন— সিট পাইতে চাও! ‘সিট’? আমিই এখন পর্যন্ত ফ্লোরিং করি, আর তুমি এখনই সিটের আশা কর? আমি বললাম— ভাই, আমাকে একটু ফ্লোরিং করার সুযোগ দিলেই চলবে। বড় ভাই আমাকে সুযোগটা দিলেন। সেদিন রাতে আমি সকাল সকালই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি আমার উপর হলের ছাদ ভেঙে পড়েছে। আর আমি ইটের নিচে চাপা পড়েছি। আমার ঘুম ভেঙে গেল। দেখি আমি ইটের নিচে চাপা পড়িনি। বরং আরেকজন আমাকে কাঁথা-বালিশের স্তূপ মনে করে আমার উপর পাড়া দিয়ে ওয়ালে সংযুক্ত হ্যাঙ্গারে তার শার্ট ঝোলাচ্ছে।

পরদিন সকালে রুম থেকে বের হলাম ক্লাস করার জন্য। যেই গেস্টরুমের সামনে এলাম, অমনি সেই বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তার কথা হচ্ছে, এখন ক্লাসে যাওয়া যাবে না। যেহেতু পলিটিক্যাল ওয়েতে সিট পেয়েছি, অতএব আমাকে এখন মধুর ক্যান্টিনে যেতে হবে তাদের সঙ্গে। আমি বেকুবের মতো বললাম— ভাই, মধুর ক্যান্টিনে কেন যেতে হবে। ক্যান্টিন তো আমাদের হলেও আছে। বড় ভাই এমন এক ধমক মারলেন, আমাদের হলের গায়ে এমনিতে ছোটখাটো যেসব ফাটল ছিল, আমার ধারণা সেই ফাটলগুলো তার ধমকের কারণে আকারে বড় হয়ে গেল। আমি বুকে থুতু দিলাম। কিন্তু থুতু বুকে না লেগে পড়ে গেল মাটিতে। এবার এগিয়ে এলো হলের এক মামা। ওয়ালে সাঁটানো একটা স্টিকারের দিকে তাকাতে বলল। আমি তাকিয়ে দেখি সেখানে বেশ ছান্দসিক একটা বাণী লেখা— যেখানে সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকুন, ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।

সর্বশেষ খবর