সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা সফরে মার্ক জুকারবার্গ

রাফিউজ্জামান সিফাত

ঢাকা সফরে মার্ক জুকারবার্গ

কার্টুন : ইন্টারনেট

যদি ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকপ্রেমী বাংলাদেশে পরিচয় গোপন রেখে এক সাধারণ ঢাকাবাসী কীভাবে জীবন কাটায় এমন সার্ভে করতে ঢাকা সফরে আসত তবে কী হতো।

জুকারবার্গের ট্রেন ভ্রমণ মোটেই সুখকর হয়নি। টিকিট কাটলেও সিটে বসতে পারেনি। সিটে আগেই একজন বসে ফেসবুক চালাচ্ছিল। জুকারবার্গ তাকে টিকিট দেখালে তিনি ডিরেক্ট জানিয়ে দেয়- যে আগে বসবে সিট তার! নিতান্ত ভদ্রলোক বিধায় রাগারাগি না করে জুকারবার্গ সারা পথ দাঁড়িয়ে এলো। কমলাপুর স্টেশনে নামার সঙ্গে সঙ্গে দুই দল কুলি নিজেদের ভিতর তার ব্যাগ টানাহেঁচড়ায় লিপ্ত হয় যা ক্রমান্বয়ে তুমুল মারামারিতে পরিণত হয়। মারামারি থামানোর এক পর্যায়ে জুকারবার্গ খেয়াল করে তার ব্যাগখানাই মিসিং। মোবাইলে প্রিসিলা চ্যানের কল, কল রিসিভ করতে গিয়ে দেখা গেল চার্জ শেষ। চার্জার ওই ব্যাগে যা চুরি হয়ে গেছে। দোকান থেকে চার্জার কিনতে স্টেশনের বাইরে পা দিয়েই খেয়াল করল তার পায়ের নিচে মাটি নেই। ঢাকার ঐতিহাসিক খোলা ম্যানহোলে জুকারবার্গ পড়ে গেছে। আশপাশের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় ম্যানহোল থেকে উঠে হোটেলের উদ্দেশে সিএনজি ভাড়া করতে গিয়ে পড়ল আরেক ফ্যাসাদে। মিটার থাকা সত্ত্বেও কোনো সিএনজিওয়ালা মিটারে যাবে না, একেকজন মনের মাধুরী মিশিয়ে একেক রকম উচ্চ ভাড়ার দাবি জানাচ্ছে। জুকারবার্গ রিকশা ঠিক করল। রিকশায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ কাঁপিয়ে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। জুকারবার্গ ঢাকার বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ। এত সুন্দর বৃষ্টি সে জীবনেও দেখেনি। আচমকা রিকশাওয়ালা বললেন, মামা আর সামনে যাউন যাইবো না, বাকি রাস্তা আপনের সাঁতরাইয়া বা নৌকায় যাইতে হইব। বিস্মিত জুকারবার্গ বলল, আমার হোটেল কী নদীর ওপাড়ে? রিকশাওয়ালা বলল, না। হোটেল প্রধান সড়কের ওই পাশে, কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট সব ডুইব্বা নদীর লাহান হইয়া গেছে।  

অগত্যা জুকারবার্গ ঢাকার রাস্তা সাঁতার দিয়ে পার হয়ে হোটেলে গিয়ে পৌঁছল। হোটেলের ম্যানেজারকে দিয়ে চার্জারের ব্যবস্থা করে হাত-মুখ ধুয়ে নিচের রেস্টুরেন্টে গেলেন ভাত খেতে। ঝাল বেশি হলেও চমৎকার রান্না, হাত চেটেপুটে ভাত খেয়ে ভরপেট পানি পান করে মুখে মিষ্টি পান দিয়ে হোটেলে ফেরত এলো।

ভীষণ ক্লান্ত জুকারবার্গ। জম্পেশ ঘুম দরকার। বিছানায় শোয়া মাত্র ঘুম এসে যাচ্ছিল এমনি সময় হোটেলের ফ্যান বন্ধ হয়ে গেল। লোডশেডিং! প্রচণ্ড গরম, এই প্রথম সে নিজের বিখ্যাত গেঞ্জি খুলে খালি গায়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ পেট মোচড় দিয়ে উঠল। শুরু হলো ভয়াবহ পেট খারাপ, আমাশা, ফুড পয়জনিং। অবিশুদ্ধ খাবার আর পানির ফলাফল। একটু পর পর টয়লেটে যাতায়াত, ওইদিকে লোডশেডিং আর গরমে সারা রাত ছটফট করতে থাকল। সকালে জুকারবার্গ প্রচণ্ড জ্বর আর শরীর ব্যথা নিয়ে জেগে উঠল। মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে হোটেলের ম্যানেজার হাসি মুখে বললেন, স্যার, অভিনন্দন। আপনার চিকুনগুনিয়া হয়েছে।

ঢাকায় আসার পর জুকারবার্গ প্রথম স্ট্যাটাস দিল- ‘এ কেমন বিচার’!

সর্বশেষ খবর