সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

৫৭ ধরনের ছাগলামি

ইকবাল খন্দকার

৫৭ ধরনের ছাগলামি

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ হ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

প্রাণীর সঙ্গে ছবি দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু ক্যাপশনে কী লেখা হবে, সে ব্যাপারে তো একটু সেন্স থাকা দরকার, তাই না? সে এমন এক ক্যাপশন দিয়েছে, ব্যস, সবাই তাকে ‘ছাগল’ ডাকার সুযোগ পেয়ে গেছে। বন্ধু জিজ্ঞেস করল,  কী ক্যাপশন দিয়েছিল? আমি বললাম, ছাগলকে জড়িয়ে ধরে রাখা ছবিতে সে লিখেছিল ‘বন্ধুরা, বলো তো এখানে আমি কোনটা?’

 

লেখাটা তখনো শুরু করিনি। মাত্র শিরোনামটা বসিয়েছি। এমন সময় আমার এক বন্ধুর আগমন। সে যেই দেখল লেখার শিরোনাম ‘৫৭ ধরনের ছাগলামি’, অমনি আমার হাত চেপে ধরল— দোস্ত, ৫৭ নিয়ে কিছু লিখিস না। বিরাট বিপদে পড়ে যাবি। আমি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, তুই যা ভাবছিস, তা না। লেখাটা মূলত তোকে নিয়ে। বন্ধু যেন আকাশ থেকে পড়ল— কী বলছিস! এই লেখা আমাকে নিয়ে হয় কী করে? ‘৫৭ ধরনের ছাগলামি’ লেখাটা নিয়ে আমি মূলত সাতান্ন ধরনের ছাগলামির বিবরণই দিতে যাচ্ছিলাম। আর তুই ‘৫৭’ দেখেই ভয়ে কাঁপা শুরু করে দিলি। বন্ধু আমতা আমতা করে বলল, তার মানে তুই এখন সাতান্ন রকমের ছাগলামির কথা বলবি? এত ছাগলামির কথা বলতে গেলে আমি যে ইম্পোর্টেন্ট একটা কথা বলতে আসলাম, সেটা কখন শুনবি? একটু সংক্ষেপ করা যায় না? আমি বললাম, ঠিক আছে, করলাম সংক্ষেপ। সাতান্ন ধরনের ছাগলামির কথা না বলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছাগলামির কথাই বরং বলি। আমার এক ছোটভাই ভার্সিটির হলে থাকে জানিস নিশ্চয়ই? তো গতকাল সে একটা ছবি আপলোড দিয়েছে। একক ছবি না, হলের মামারা একটা ছাগল পোষে তো, সেই ছাগলের সঙ্গে ছবি। ভালো কথা, প্রাণীর সঙ্গে ছবি দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু ক্যাপশনে কী লেখা হবে, সে ব্যাপারে তো একটু সেন্স থাকা দরকার, তাই না? সে এমন এক ক্যাপশন দিয়েছে, ব্যস, সবাই তাকে ‘ছাগল’ ডাকার সুযোগ পেয়ে গেছে। বন্ধু জিজ্ঞেস করল, কী ক্যাপশন দিয়েছিল? আমি বললাম, ছাগলকে জড়িয়ে ধরে রাখা ছবিতে সে লিখেছিল ‘বন্ধুরা, বলো তো এখানে আমি কোনটা?’ বন্ধু বলল, তুই তো তোর ছোটভাইয়ের ছাগলামির কথা বললি। শুধু ছোটভাই না, অনেক বড়ভাইয়েরও ছাগলামি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা থাকে না। যে কারণে বেশির ভাগ সময়ই তোপের মুখে পড়তে হয়। আমাদের পাড়ার এক বড়ভাই নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছে। সে এমনিতে মহাপণ্ডিত হলেও ফেসবুকে কার স্ট্যাটাসে কী লিখতে হবে, সেটা বোঝে না। বোঝে না ভালো কথা, চুপ থাকলেও চলে। কিন্তু না, উনি চুপ থাকবেন না, মানুষের স্ট্যাটাসে একের পর এক কমেন্ট করে যাবেন। তার ধারণা, মানুষের স্ট্যাটাসে যত বেশি কমেন্ট করা যাবে, ততই মানুষের নজরে পড়া যাবে। এভাবে কমেন্ট করতে করতে হঠাৎ করেই এক দিন তিনি ছাগলামির পরিচয় দিয়ে বসলেন। আমি সাগ্রহে জানতে চাইলাম, কী করেছে? বন্ধু বলল, একজন স্ট্যাটাস দিয়েছে ‘আমার দাদি মারা গেছে’, বড়ভাই সেখানে গিয়ে কমেন্ট করে বসলেন ‘লোল’। আমি গলার স্বর নিচু করে বললাম, পাশের বাসার ভদ্রলোকের এক ছাগলামি দেখলাম গতকাল। তিনি আমার ফেসবুকে আছেন তো! বন্ধু জিজ্ঞেস করল, কী ধরনের ছাগলামি? আমি বললাম, গতকাল তার বাচ্চা ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। কারণ, বাচ্চাটার ঠোঁটের কয়েক জায়গায় কেটে গিয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে কাটল? ভদ্রলোক বলল, সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, বলেন কী! বাচ্চা সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যখন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? ভদ্রলোক বলল, আমি কাছেই ছিলাম। আমি অবাক হয়ে বললাম, কাছে ছিলেন, তাহলে বাচ্চাটাকে ধরলেন না কেন? ভদ্রলোক বলল, না, মানে হয়েছি কী, বাচ্চাটা যখন গড়িয়ে পড়তে শুরু করল, তখন ভাবলাম একটু ভিডিও করি। ফেসবুকে বেশ লাইক পাওয়া যাবে। কী বলেন, ঠিক করেছি না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর