সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্ধুর নতুন বাইকে

আলিম আল রাজি

বন্ধুর নতুন বাইকে

বন্ধু প্রিয়ম তানভীর। ডাক্তারি করে মাস শেষে মোটা অঙ্কের মাইনে পায়। গত মাসের মাইনে দিয়ে বাইক কিনেছে। বেশ হ্যান্ডসাম একটা বাইক। ফেসবুকে বাইকের সঙ্গে কয়েকটা ছবি আপলোড দিয়েছে। আমরা দেখে লাইক দিয়েছি।

এক দিন সন্ধ্যায় ফোন দিল। ‘হ্যালো, বন্ধু, তোমাকে আমার বাইকে চড়াতে চাই। চল, দুই বন্ধু মিলে এয়ারপোর্ট এলাকায় ঘুরে আসি। চিন্তা করো না, চা-শিঙ্গাড়া আমিই খাওয়াব। ফ্রি আছো নাকি?’

আমি আবেগাক্রান্ত হয়ে গেলাম। এই বয়সে একটা ছেলে বাইকে  প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে, বান্ধবী নিয়ে ঘুরে, ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত হওয়া নতুন সুন্দরী নিয়ে ঘুরে। আর প্রিয়ম কিনা ঘুরতে চাইছে আমাকে নিয়ে! আহা! আমার বন্ধুর ভাগ্য এত ভালো!

আমি তত্ক্ষণাৎ কিছু না ভেবেই জবাব দিলাম। ‘বাসার সামনে চলে আসো। আমি রেডি আছি।’

১০ মিনিটের মধ্যেই প্রিয়ম চলে এলো। আমি বাইকের পেছনে চড়লাম। কী আরামদায়ক একটা সিট! বাহ!

সিলেটের রাস্তাঘাট ফাঁকাই থাকে। এই ফাঁকা রাস্তায় প্রিয়ম তার বাইক নিয়ে সাঁই সাঁই করে এগিয়ে যেতে থাকল। হঠাৎ সামনে এসে পড়ল একটা রিকশা। প্রিয়ম কষে ব্রেক করল। একটুর জন্য মোটরসাইকেল উলটে যাওয়া থেকে রক্ষা পেল। আমি প্রিয়মকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। তার ড্রাইভিং দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হলাম। তার পাঁচ মিনিট পর সামনে এলো একটা পাজেরো। প্রিয়ম আবারও কষে ব্রেক করল। একটুর জন্য মোটরসাইকেল উলটে যাওয়া থেকে রক্ষা পেল আবারও। বন্ধুর দক্ষতায় আবারও আমি মুগ্ধ হলাম।

১০ মিনিট কেটে গেল। সামনে এলো একটা বাস। আবারও একই ঘটনা। এবারও প্রিয়মের দক্ষতায় রক্ষা পেলাম।

তার ঠিক ১৫ মিনিট পরের ঘটনা। দেখলাম সামনে দিয়ে আসছে একটা ট্রাক। আমি পেছন দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম প্রিয়ম কী করছে। যা দেখলাম তাতে আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা  স্রোত বয়ে গেল। প্রিয়মের বাইক কাঁপছে। আসলে বাইক না, সেই কাঁপছে।

তত্ক্ষণাৎ আমার কাছে ঘটনা পরিষ্কার হয়ে গেল। এতক্ষণ রিকশা, পাজেরো বা বাসের কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যা হচ্ছে আমার বন্ধুর। বন্ধুর কারণেই এই বিপদগুলোতে পড়তে যাচ্ছিলাম।

প্রিয়মকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বন্ধু, এর আগে বাইকে আর কাউকে নিয়ে উঠেছো?’

বাইক চালাতে চালাতে সে উত্তর দিল, ‘তোমাকে দিয়ে শুরু করলাম। প্র্যাকটিস তো করতে হবে, নাকি?’

আমি চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম। এই শালাকে মনের ইচ্ছামতো এভাবে বাইক চালাতে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই

বারোটা বাজিয়ে দেবে। একে এখনই ঝাড়ি দিয়ে বাইক চালানোর শখ ছুটিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু সেটা করতে গেলেও  প্রবলেম। দেখা যাবে রেগেমেগে আরও জোরেশোরে চালাতে শুরু করেছে। আমি খুব রক্ষণাত্মক উপায় বেছে নিলাম। আজকাল মোটিভেশনাল স্পিচ খুব চলছে। আমি বাইকের পেছন থেকে প্রিয়মকে ক্রমাগত মোটিভেশনাল স্পিস শুনিয়ে যেতে থাকলাম।

 

► স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইন্স দ্য রেস

► জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য অনেক বেশি

► দ্রুত পৌঁছানো নয়, সফলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানোটাই আসল।

আমি প্রতিবারই মোটিভেশনাল স্পিচ দিচ্ছি আর নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছি প্রিয়ম সেটা শুনতে পারছে কিনা।

‘বন্ধু, শুনতে পাচ্ছো তো?’

প্রিয়ম মাথা নাড়ছে। অর্থাৎ শুনতে পাচ্ছে। আমি স্পিচ চালিয়ে গেলাম।

► স্লো কচ্ছপের কথা মনে আছে? সে-ই কিন্তু জিতেছিল!

 

স্পিচ ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমি আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। ওদিকে প্রিয়মের গতি আবারও বেড়ে যাচ্ছে। আমি চলন্ত অবস্থাতেই পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু মোটিভেশনাল স্পিচ বের করে আবার পড়তে শুরু করলাম।

► জীবনের সব দৌড়ে প্রথম হতে হয় না।

► পথ অতিক্রমই লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হোক পথের আনন্দ। ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

একটু পরই লক্ষ্যে পৌঁছে গেলাম।   প্রিয়ম হেলমেট খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বন্ধু কেমন লাগল।’ আমি উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।

পুনশ্চ ১ : ফেরার সময় আমি প্রিয়মের বাইকে ফিরিনি।

পুনশ্চ ২ : প্রিয়ম এখন ভালো বাইক চালায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর