সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিপদে বন্ধুর পরিচয়

ইকবাল খন্দকার

বিপদে বন্ধুর পরিচয়

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক প্রতিবেশী বলল, আগে যে বাসায় ছিলাম, এর পাশের বাসার এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার গভীর বন্ধুত্ব হয়। কথায় কথায় সে বলত আমার জন্য নাকি জীবন উৎসর্গ করে দিতে পারবে। এক দিন রাতে আমার বাসায় চোর ঢুকল। তবে চোরটাকে আমি ধরার সাহস পাচ্ছিলাম না। তাই কাঁথার ভিতরে মুখ লুকিয়ে তাকে ফোন করে বললাম তাড়াতাড়ি আমার বাসায় আসার জন্য। যেভাবেই হোক চোরটা ধরার ব্যবস্থা করার জন্য। সে তখন কী বলল জানেন? বলল, রাত অনেক হয়েছে তো, তাই আমি এখন গভীর ঘুমে অচেতন। আমি বললাম, আপনি যদি ঘুমে অচেতনই হবেন, তাহলে ফোনে কথা বলছেন কীভাবে?

 

আমার এক ছোটভাই বলল, মানুষ নানা পরিস্থিতিতে নানারকম কথা বলে। সব কথা সত্য হয় না। তবে ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ এই কথাটা যে সত্য, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমি নিজে হাতেনাতে এর প্রমাণ পেয়েছি। আমি বললাম, কী ধরনের প্রমাণ পেয়েছিস, একটু জানতে চাই। ছোটভাই বলল, সেদিন আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে বাসার দিকে ফিরছিলাম। হঠাৎ সামনে পড়ে গেল একটা পাগলা কুকুর। কুকুরটা যেই চোখ পাকিয়ে তাকাল, বন্ধু দিল দৌড়। আর আমি তার আসল পরিচয় পেয়ে গেলাম। আমি বললাম, এই যে বন্ধুকে রেখে বন্ধুর দৌড় দেওয়ার বিষয়টা, এটা কিন্তু প্রমাণ করে সে তোর খাঁটি বন্ধু না। তার মানে তার আসল পরিচয়টা তুই জেনে গেলি। ছোটভাই বলল, আপনি কিন্তু আসল ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারেননি। বিপদে পড়ে আমি আমার বন্ধুর পরিচয় পেয়েছি ঠিক আছে, তবে সেটা একটু অন্যভাবে। কীভাবে জানেন? কুকুরের সামনে পড়ে সে যখন আমাকে রেখে ঝেড়ে দৌড় দিল, তখন গাছের ডালের খোঁচা লাগল তার মাথায়। ব্যস, আমি জেনে গেলাম তার আসল পরিচয়। আসলে সে যে একটা ‘টাকলু’ এটা আমি জানতেই পারতাম না, যদি না গাছের ডালের খোঁচা লেগে তার মাথার পরচুলাটা খুলে যেত। আমার এক চাচাত ভাই বলল, ‘বিপদে শুধু বন্ধুর পরিচয়’ কথাটা মানুষ ক্ষোভ থেকে বলে। বিপদের সময় বন্ধুদের দ্বারা উপকৃত হতে না পেরে বলে। তবে আমার বিষয়টা ভিন্ন। আমি কিন্তু কথাটা ক্ষোভ থেকে বলি না। কারণ, বিপদে পড়লে যেসব বন্ধু উপকার করতে চায় না, তাদের কী পরিণতি হয়, সেটা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম বিষয়টা ভেঙে বলার জন্য। সে ভেঙে বলল, আমি খুব বিপদে পড়ে আমার এক বন্ধুর কাছে গেলাম টাকার জন্য। আমি জানতাম বন্ধুর কাছে ম্যালা টাকা আছে। চাইলেই সে আমাকে আমার যা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে পারে। কিন্তু সে ফন্দি আঁটল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে যেই দেখল আমি তার বাসার গেট দিয়ে ঢুকছি, অমনি সে ঢুকে পড়ল তার বক্সখাটের ভিতরে। এরপরের অবস্থা খুবই করুণ। এখন সে হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি বললাম, বক্সখাটের ভিতরে ঢুকলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কেন? চাচাত ভাই বলল, হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এই জন্য, যেহেতু ইঁদুরে কামড়ালে ইনজেকশন দেওয়ার নিয়ম আছে। আর যদি ইঁদুর কানের লতির মতো সেনসেটিভ জায়গায় কামড় দেয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আমার এক প্রতিবেশী বলল, আগে যে বাসায় ছিলাম, এর পাশের বাসার এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার গভীর বন্ধুত্ব হয়। কথায় কথায় সে বলত আমার জন্য নাকি জীবন উৎসর্গ করে দিতে পারবে। একদিন রাতে আমার বাসায় চোর ঢুকল। তবে চোরটাকে আমি ধরার সাহস পাচ্ছিলাম না। তাই কাঁথার ভিতরে মুখ লুকিয়ে তাকে ফোন করে বললাম তাড়াতাড়ি আমার বাসায় আসার জন্য। যেভাবেই হোক চোরটা ধরার ব্যবস্থা করার জন্য। সে তখন কী বলল জানেন? বলল, রাত অনেক হয়েছে তো, তাই আমি এখন গভীর ঘুমে অচেতন। আমি বললাম, আপনি যদি ঘুমে অচেতনই হবেন, তাহলে ফোনে কথা বলছেন কীভাবে? প্রতিবেশী বলল, ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুমের মধ্যে কথা বলার অভ্যাস আছে তো! জি পাঠক, বিপদে বন্ধুকে সাহায্য করার ইচ্ছা না থাকলে মানুষ কত কোমরভাঙা যুক্তিই দাঁড় করায়। তেমনি এক লোকের ঘটনার বিবরণ দিয়ে শেষ করব আজকের লেখা। এক লোক তার বন্ধুর সঙ্গে শপিং মলে গেল কেনাকাটা করার জন্য। হঠাৎ শপিং মলে আগুন লাগল এবং বন্ধুটি পড়ে গেল বিপদে। বন্ধুটি চিৎকার করে লোকটিকে বলতে লাগল, হেল্প, হেল্প। লোকটি বন্ধুকে না বাঁচিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল বিপদসীমার বাইরে। যাওয়ার আগে বলে গেল, কতবার না বলেছি ঠুসঠাস ইংলিশ বলিস না? তারপরও ‘হেল্প’ ‘হেল্প’ করছিস কেন? বাংলায় বলা যায় না?

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর