শিরোনাম
সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

যে গাড়ি উল্টো চলে

ইকবাল খন্দকার

যে গাড়ি উল্টো চলে

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই চা খেতে খেতে দারুণ এক কাহিনী শোনাল। সে নাকি প্রাইভেটকার ভাড়া করে কোথাও যাচ্ছিল। হঠাৎ সে খেয়াল করল ড্রাইভারের গায়ে যে শার্টটা আছে, সেটা সোজা নেই। মানে সে উল্টা করে শার্ট পরেছে। তো কিছুদূর যাওয়ার পর সে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল, শার্ট উল্টা করে পরেছেন কেন ভাই? ভুলে? ড্রাইভার হাসতে হাসতে বলল, ভুলে না ভাই, ভুলে না। জাইনা, শুইনা, বুইঝাই শার্ট উল্টা কইরা পরছি। ড্রাইভারের কথা আর হাসির মধ্যে সিগারেটের গন্ধের পাশাপাশি রহস্যের গন্ধ পাওয়া গেলে ছোটভাই তাকে ধমকের সুরে বলল খ্যাঁক-খ্যাঁক করে না হেসে যাতে ঘটনা খুলে বলে। ড্রাইভার খুলে বলল, সুযোগ পাইলে যে কোনো সময় আমি উল্টা পথে গাড়ি ঢোকায়া দিতে পারি। তবে উল্টাপথে গাড়ি চালাইলে যে পুলিশ দৌড়ায়া আসবো ধরার লাইগা, সেইটাও জানি। এই জন্য ফন্দি করলাম। মানে শার্টটা উল্টা কইরা পরলাম। পুলিশ আমারে ধরলেই কমু, আত্কা আমার কী জানি রোগ হইছে সবকিছুই উল্টা করি। এই দেখেন শার্টটাও উল্টা পরছি। ছোটভাই বলল, পুলিশ যদি আপনার এই আজগুবি কথা বিশ্বাস না করে? ড্রাইভার বলল, বিশ্বাস না করলে একটা সিগারেট বাইর কইরা ঠাস কইরা উল্টাদিক দিয়া আগুন ধরায়া টানতে থাকমু। তারপরেও বিশ্বাস না হইলে ডান পায়ের জুতা বাম পায়ে, বাম পায়ের জুতা ডান পায়ে দিয়া বইসা থাকমু। ছোটভাইয়ের মুখে শোনা কাহিনীর সারমর্ম হচ্ছে, ওই ড্রাইভার উল্টাপথে গাড়ি চালানোকে ঠিক করার জন্য সে দশটা উল্টাকাজ করতে রাজি। সব শুনে আমি বললাম, এই ধরনের টাউট বাটপার ড্রাইভাররা উল্টাপথে গাড়ি চালানোর অজুহাত হিসেবে যত উল্টাকাজই করুক, সব উল্টা একদম সোজা হয়ে যাবে পুলিশ যদি সাহস করে একটা উল্টা কাজ করে। ছোটভাই বলল, এইটা আপনি কী বললেন ভাই! ওদের দেখাদেখি পুলিশও যদি উল্টা কাজ করে, তাহলে দেশ চলবে কীভাবে? না, না, না, পুলিশের উল্টা কাজ করা ঠিক হবে না। আমি বললাম, পুলিশকে কোন উল্টা কাজটা করতে বলছি, সেটা তো একটু শুনবি নাকি? ছোটভাই বলল, বলেন শুনি। আমি বললাম, ওই ড্রাইভারের মতো ড্রাইভারদের সোজা করার জন্য যে উল্টা কাজটা করা পুলিশের জন্য জরুরি, সেটা হচ্ছে, ওদেরকে উল্টা করে রাখা। আমার এক প্রতিবেশী কিছুদিন আগে গাড়ি কিনেছেন। তিনি আমাকে দেখেই গলা খাদে নামিয়ে বলতে লাগলেন, কী অবস্থা দেখেন তো! রাস্তায় গাড়ি নামালেই যদি এই অবস্থা করে, সমস্যা না? আমি বললাম, রাস্তায় গাড়ি নামালেই এই অবস্থা করে, এটা ভুল কথা। মূল কথা হচ্ছে, উল্টা পথে গাড়ি চালালে সমস্যা হয়। প্রতিবেশী বললেন, উল্টাপথে গাড়ি চালালে পুলিশের কী ক্ষতি, আমি তো বুঝতে পারছি না! ক্ষতি হলে আমার হচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম, আপনার কী ক্ষতি হচ্ছে, একটু শুনি। প্রতিবেশী বললেন, সোজা রাস্তা থেকে উল্টা রাস্তায় ঘোরাতে গিয়ে আমার গাড়ির ব্রেকের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে, ঘোরার সময় বাড়তি দুলুনি খাচ্ছে, যা আমার গাড়ির নাট-বল্টুর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা হচ্ছে, সেটা আমার নিজের। আমি বললাম, আপনার নিজের আবার কী ক্ষতি হচ্ছে? প্রতিবেশী বললেন, এই যে বাড়তি দুলুনির কথা বললাম, এই দুলুনির কারণে আমার বমির উদ্রেক হচ্ছে। এছাড়া... আমি প্রতিবেশীকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই তার সামনে থেকে কেটে পড়লাম। রাস্তায় আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। তার সঙ্গেও উল্টাপথে গাড়ি চালানোর বিষয়টা নিয়েই কথা শুরু হলো। বন্ধু বলল, আগে আমি বুঝতে পারতাম না কোনগুলো রাঘববোয়ালদের গাড়ি। এখন বুঝতে পারি। যেগুলো উল্টো পথে যায়, সেগুলো রাঘববোয়াল, বড় স্যারদের। সহজ হিসাব। এখন থেকে পুলিশ এদের আটকাক বা না আটকাক, আমি আটকানোর চেষ্টা করব। আমি বললাম, তুই আটকাবি কেন? বন্ধু বলল, গাড়ির ভিতরকার রাঘববোয়ালদের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর