সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বউয়ের বায়না

আবির হোসেন

বউয়ের বায়না

মজনু, তার গানের গলা সম্পর্কে ধারণা বহুত আগের। যেদিন প্রথম গান গেয়েছিল সেদিন গ্রামের কুকুরগুলো একত্র হয়ে প্রতিবাদ করেছিল। ফলাফল চৌদ্দটা ইনজেকশন। সেই থেকে মজনু ভুলে গেল যে, পৃথিবীতে গান বলে কিছু আছে। তাই কোথাও গান বাজতে শুনলে, মজনুর ধোঁয়া দেখা গেলেও বডি দেখা যাইতো না। মজনু শিক্ষা পেয়েছিল যে, গান তার জন্য নহে। কিন্তু হঠাৎ একদিন বউয়ের বায়না শুনে মজনু আঁতকে উঠল। কারণ, বউ বায়না ধরেছে, আজ তাকে গান শোনাতেই হবে। হঠাৎ তার মনে চৌদ্দটা ইনজেকশনের ব্যথা অনুভব করল। চোখের ডিসপ্লেতে ভেসে উঠল হিংস্র কুকুরগুলোর মুখ। শরীরে মৃদু কাঁপুনি দিয়ে মজনুর গলা শুকিয়ে গেল। মজনু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অতি বিনম্র ভঙ্গিতে বলল, ‘ও বউ, এই বায়নাটা বাদ দিয়া অন্য কিছু হলে হয় না? এই যেমন মেকআপ বক্স বা লিপস্টিক!’ মজনুর বউ রাগি গলায় বলে উঠল, ‘আমি কী তোমার কাছে হিরের হার চেয়েছি? গান শুনতে চেয়েছি তাতেও না! এই চললাম বাপের বাড়ি। সংসারের কপালে ঝাটা মারি।’

মজনুর হৃদয় হাহাকার করে উঠল। গানই যে তার জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেটা বউকে কী করে বোঝাবে! বউয়ের বাপের বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে মজনু গেয়ে উঠল— ‘যেওনা সাথী, ও-ও-ও...’ মজনুর গানের সুরে ঘরের আসবাব থরথর করে কেঁপে উঠলেও, মজনুর বউয়ের ঘাড়ে চেপে বসা বাপের বাড়ি যাওয়ার ভূত তত্ক্ষণাৎ চলে গেল। মজনুর বউ খুশি হয়ে মজনুর পাশে বসে বলল, ‘এইতো আমার লক্ষ্মীটা! আর একটা গান শোনাও না!’ মজনু বউয়ের এমন আদরে, খুশিতে গদগদ হয়ো গলা ছাড়িয়া বাংলা সিনেমার রোমান্টিক গান ধরল, ‘তুমি যদি সুখী হও, অথৈ সাগর দেব পাড়ি...’ এ পর্যন্ত গাইতেই, মজনুর বউ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলল, ‘ওরে অথৈ সাগর পাড়ি দেওয়া স্বামী... মাস শেষে বেতনের টাকা কয়টা বৌয়ের হাতে দিতেই গলা শুকাইয়া যায়। সে আবার অথৈ সাগর পাড়ি দিবে!’ হিতে বিপরীত দেখে মজনুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সামান্য গানকে যে বউ এত সিরিয়াস নেবে ভাবেনি। বউয়ের দোষ দিয়ে কী লাভ! তবুও বউকে বলল, ‘ও বউ, অন্য গান শোনাই? চোখের পলকে বউ রান্নাঘর থেকে হাতে করে খুন্তি নিয়ে হাজির। আর বলতে লাগল, ‘মিথ্যাবাদী, চোক্ষের সামনে থেকে দূর হ।’ গানের প্রতিদানে খুন্তির ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার উদ্দশ্যে দরজা খুলতেই মজনুর রুহু থমকে গেল। সামনেই দাঁড়িয়ে কয়েকটি কুকুর। সেই কুকুরগুলো না হলেও, তাদেরই বাচ্চাকাচ্চা তা নিয়ে মজনুর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বংশপরম্পরায় মজনুর গানের প্রতি ক্ষোভ ওদেরও। পেছনে বউয়ের খুন্তি আর সামনে কুকুরের কামড় আর চৌদ্দটা ইনজেকশন! মজনু সিদ্ধান্ত নিল, কুকুরের কামড়ে মরণ হলেও বউয়ের চালানো খুন্তিতে প্রেস্টিজও নষ্ট হয়ে যাবে। মজনু কাঁপা গলায় কুকুরগুলোকে বলল, ‘গান তো আমি সেই কবেই ভুলে গেছিরে... তোরা যা শুনছিস, তা বউয়ের বায়না ছিল। তারপরই মজনু দিল প্রাণপণ দৌড়। আর কুকুরগুলোও পেছনে দিল ছুট...

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর