একটা নিয়োগ পরীক্ষা গেল কিছুদিন আগে। এমসিকিউ পরীক্ষা। ১০০টা প্রশ্ন। প্রতিটা প্রশ্নের জন্য ১ মার্ক। কোনো উত্তর ভুল হলে ০.৫ মার্ক মাইনাস। অনেক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষাটাকে তাই কঠিনই বলা যায়। আমার প্রিপারেশন ভালো না। পরীক্ষা দেওয়ার কারণ দুইটা। এক. বন্ধু-বান্ধব সবাই দিচ্ছে। দুই. পারিবারিক চাপ। পরিবারের সবাই চান পরীক্ষাটা আমি দিই।
আমি সর্বসাকুল্যে পড়েছিলাম মাত্র ১৫ দিন। তাও ম্যালা আগে। পরীক্ষার আগের এক মাস বইপত্র খুলেও দেখিনি। এর ফলাফল টের পেলাম পরীক্ষার হলে গিয়ে। ১৫ দিনে যা পড়েছিলাম এক মাসে তা সবকিছু ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। সত্য কথা বলতে কী প্রায় সব প্রশ্নই কমন। উত্তর জানা। তবে প্রচুর দ্বিধা। পরিষ্কার কিছুই মনে হয় না। প্রশ্ন দেখে চোখ বন্ধ করি। মনে পড়ে যায় এটা বইয়ের মাঝামাঝি অংশে ডান দিকে উপরের কোনায় ছিল। কিন্তু উত্তরটা কী সেটা আর মনে আসে না।
আমি বরাবরই ঝুঁকিপ্রিয় মানুষ। বিশ্বাস করি, নো রিস্ক, নো গেইন। চারটা অপশন থেকে একটা উত্তর বের করার যুদ্ধে নামলাম। দুইটা খুব সহজেই বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। অবশিষ্ট দুইটা থেকে ‘অপু দশ বিশ’ পদ্ধতিতে একটা উত্তর বেছে নিতে শুরু করলাম। এক ঘণ্টার পরীক্ষা। ৪০ মিনিট পরে ভাবলাম, একবার গুনি কয়টা প্রশ্নের উত্তর দিলাম। গুনতে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া। পাক্কা ৯০টা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলেছি। মনে দৃঢ়বিশ্বাস। এই ৯০টার মধ্যে কম করেও হলেও ৮৫টা তো ঠিক। পরীক্ষার হলের মধ্যেই ইচ্ছে হলো একটা লাফ দিই। গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলাম, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে...। পরীক্ষার তখন বাকি ২০ মিনিট। এই ২০ মিনিটে যে পরিকল্পনা করলাম তার তালিকা নিম্নরূপ—১. ফেসবুকে একটা নোট লিখব— কীভাবে ১৫ দিনেই নেবেন পরীক্ষার ঝাঁজালো প্রস্তুতি।
২. ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলব। সেখান থেকে প্রতিদিন মোটিভেশনাল স্পিচ আপলোড দেব।
৩. সময় হলে দুই-একটা বই লিখে ফেলব। ডেল কার্নেগির পরে সেভাবে আর কেউ এই লাইনে তেমন লিখেনি।
৪. অবসরে বিভিন্ন স্কুুল-কলেজে মাঝে মাঝে বক্তৃতা-টক্তৃতাও দিতে যাব। ছেলেপেলেদের আমি যদি পথ না দেখাই ক্যামনে হবে?
সময় শেষ হলো। উত্তরপত্র জমা দিলাম। বাসায় এসে প্রফুল্লচিত্তে ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম উত্তরগুলো একটু চেক করি। প্রথম উত্তরটাই ভুল। মন খারাপ হলো না। ৫টা ভুল হবে, এমন তো আগেই ভেবে রেখেছিলাম।
দ্বিতীয়টাও ভুল। এবারও মন খারাপ হলো না। তৃতীয়টাও। একটু টেনশন হলো। ... পঞ্চমটা ভুল হওয়ার পরে একটু নড়েচড়ে বসলাম।
একে একে ভুল বাড়তে লাগল। ১০... ১২... ১৬... ১৭...২০। সব চেক করার পর নম্বর যোগ করতে ভয় লাগল। কী দরকার! জগতেও সব অংক করতে নেই। দীর্ঘদিন পর কম্পিউটারে বসলাম। ফেসবুকে যেতে হবে। দেখি ওখানে মোটিভেশনাল নোট পাই কিনা। ইউটিউবেও চক্কর দেব একটা। মোটিভেশনাল স্পিচ শুনব কিছু। আগামী সপ্তাহে কলেজে একটা মোটিভেশন স্পিকার আসবেন। ভাবছি উনার সেমিনারটা মিস করব না।