সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বৈশাখী প্যাঁচাল

ইকবাল খন্দকার

বৈশাখী প্যাঁচাল

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

বন্ধুর বাবা বললেন, তুমি যা মনে করছ, ব্যাপার কিন্তু তা না। সে নববর্ষ উদযাপনের জন্য গ্রামে যায়নি। গ্রামের প্রতি তার কোনো টান নেই। শহরে থেকেই সে কেবল এক দিনের বাঙালি সেজে অভ্যস্ত। গ্রামে গেছে বিপদে পড়ে

 

জরুরি কাজে বাইরে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় আমার এক বন্ধুর ফোন। গলা শুনেই বুঝলাম নেতিবাচক কিছু একটা ঘটেছে। তাই নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। এটা ওটা বলার পর বন্ধু বলল, পুরনো জিনিস বিক্রির বিভিন্ন মার্কেট আছে জানি। তবে আমি যে জিনিসটা বিক্রি করতে চাচ্ছি, সেটাকে পুরনো বলা হলে জিনিসটার প্রতি অবিচার করা হবে। জিনিসটা আসলে নতুনের মতোই। তবে পুরোপুরি নতুন বলা যাবে না। আবার পুরোপুরি পুরনো যে বলব তাতেও মন সায় দিচ্ছে না। তো জিনিসটা আমি বিক্রি করতে চাচ্ছি। আমি চাই জিনিসটার জন্য এমন একটা মার্কেট বা বিক্রয়-ব্যবস্থা, যাতে জিনিসটার প্রতি অবিচার করা না হয়। মানে পুরনো জিনিস হিসেবে এটাকে কেউ কম দামে কিনতে না চায়। মাত্র একবার ব্যবহার করা হয়েছে জিনিসটা, বুঝতেই তো পারছিস। আমি বন্ধুর কথা শুনে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে বললাম, সামান্য একটা কথাকে কেন এত প্যাঁচাচ্ছিস বল তো! তুই কী বিক্রি করতে চাচ্ছিস, সেটা বল। বন্ধু আবার প্যাঁচানো শুরু করল। না, মানে আমি জিনিসটা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিনেছিলাম। জাস্ট একবার ব্যবহার করেছি। এখন আমি এটা বিক্রি... আমি এবার বিরক্ত হয়ে কড়া ঝাড়ি দিলাম। বললাম, ত্যানা প্যাঁচানো বাদ দিয়ে জিনিসটা কী, সেটা বল। বন্ধু বলল, লুঙ্গি। জি পাঠক, যারা নববর্ষ উপলক্ষে এক দিনের বাঙালি সাজার নিমিত্তে লুঙ্গি বা এই জাতীয় জিনিসপত্র কিনেছিলেন, তারা ভালোই মুসিবতে আছেন। কারণ, বছরের বাকি দিনগুলোর জন্য জিনিসগুলো নাকি বড্ড বেমানান। শুরুতেই আমার এক বন্ধুর কথা তো শুনলেন। এবার আরেকজনের কথা শোনেন। আমার এক বড় ভাই জানালেন বাড়িওয়ালা নাকি তার ওপর জরিমানা ধার্য করেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি এমন কী কুকর্ম করলেন, যার জন্য বাড়িওয়ালা আপনার ওপর জরিমানা ধার্য করল? বড় ভাই বললেন, হয়েছে কী, বাংলা নববর্ষে খাঁটি বাঙালি সাজার জন্য একজোড়া কাঠের খড়ম কিনেছিলাম। আমি বললাম, কাঠের খড়ম কিনবেন না লোহার খড়ম কিনবেন, সেটা আপনার ব্যাপার। এখানে বাড়িওয়ালা জরিমানা ধার্য করার কে? বড় ভাই বললেন, বাড়ির টাইলসগুলো কিন্তু বাড়িওয়ালার কেনা। হাঁটার সময় খড়মের তলার আঘাতে যদি টাইলসে ফাটল ধরে, তাহলে জরিমানাটা বাড়িওয়ালা ধার্য করবে না তো রহিমুদ্দি কলিমুদ্দি ধার্য করবে? আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য গতকাল তার বাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখি সে নেই। কোথায় গেছে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, গ্রামের বাড়ি। আমি খুশি হলাম। বললাম, একেই বলে মাটির টান। শহরের ছেলেরা মাটির টানে গ্রামে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সারা বছর নানা ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় না। দরকার নেই। শুধু নববর্ষ উপলক্ষে যদি যায়, সেটাও অনেক বড় একটা কাজ। তাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাবেন। বন্ধুর বাবা বললেন, তুমি যা মনে করছ, ব্যাপার কিন্তু তা না। সে নববর্ষ উদযাপনের জন্য গ্রামে যায়নি। গ্রামের প্রতি তার কোনো টান নেই। শহরে থেকেই সে কেবল এক দিনের বাঙালি সেজে অভ্যস্ত। গ্রামে গেছে বিপদে পড়ে। আমি তাজ্জব হলাম, বিপদ! কিসের বিপদ? বন্ধুর বাবা বললেন, পয়লা বৈশাখে সে বন্ধুদের নিয়ে হেভি ইলিশ খেয়েছে। কিন্তু খানাপিনার একপর্যায়ে একটা অঘটন ঘটে যায়। মানে গলায় ইলিশের কাঁটা আটকে যায়। আমি বললাম, গলায় কাঁটা আটকালে ডাক্তারের কাছে যাবে। গ্রামে কেন গেল? বাবা বললেন, যেহেতু কাঁটা আটকালে বিড়ালের পায়ে ধরার একটা নিয়ম আছে, তাই। গ্রামের বিড়ালগুলো শহরের বিড়ালের চেয়ে ভদ্র তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর