সোমবার, ২১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রথম অর্থনীতি শিক্ষা

আলিম আল রাজি

প্রথম অর্থনীতি শিক্ষা

গ্রামের স্কুল থেকে তখন মাত্র শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছি। অন্যদের যা হয় আমারও তাই হলো। ভর্তি হয়েই নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করলাম।

মনে হলো আমি একজন বড় মানুষ হয়ে গেছি। জীবন ধারণের জন্য আমারও প্রতিদিন দরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্কের অর্থ।

বাবার কাছে আবদার করলাম। আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলাম তার সন্তান বড় হয়ে গেছে এবং তার ‘হাত খরচের’ অঙ্কটা এবার বাড়াতেই হবে। বাবার একমাত্র ছেলে হওয়ায় আবদার পূর্ণ হতে সময় লাগল না। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার আগে আমি আমার ‘অঙ্ক’ পেয়ে যাই। যতটা আশা করেছিলাম, অঙ্ক পাই তারচেয়েও বেশি। হঠাৎ করে নিজেকে বিল গেটস মনে হতে থাকল। সমস্যা হচ্ছে টাকা খরচ করার জন্য বিল গেটসের অনেক ব্যবস্থা আছে কিন্তু আমার নেই। গার্লফ্রেন্ডও নেই যে খরচ করব। অনেক ভেবেচিন্তে উপায় বের করলাম। উপায়টা হলো বই কেনা।

বাবা প্রতিদিন যে টাকা দেন সেটা দিয়ে নতুন কটকটে মলাটের ২টা ডাউশ সাইজের বই অনায়াসে কিনে ফেলা যায়। পাশেই লাইব্রেরি থাকায় বইয়ের কোনো অভাব হলো না।

আমি আরাম করে বই কেনা শুরু করলাম।  প্রতিদিন ২টা বই কিনি। বই কিনে বাসায় ফিরি। রাত ১২টার আগেই বই পড়া শেষ। আরাম করে ঘুমাতে যাই। পরের দিন আবার নতুন ২টা বই। কলেজের পড়া গোল্লায় গেল। গেলে যাক! আমি এসবে পাত্তাই দিলাম না।

পাত্তা না দিতে দিতে কেটে গেল এক বছর। বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা হলো। ফলাফল হলো ডেঞ্জারাস। প্রায় সব বিষয়েই ফেল করে বসলাম। শুরু হলো হুলুস্থূল কাণ্ড। ‘ফেলটুশ’ ছাত্রদের ডাকা হলো। জবানবন্দি নেওয়া হলো। আমি জবানবন্দি দিলাম— মাত্রাতিরিক্তি আউট বই পড়ার ফলে পাঠ্য পুস্তকে মনোযোগ দিতে পারিনি বিধায় ফেল করেছি। ডাকা হলো অভিভাবকদের। দেখানো হলো জবানবন্দি।

বাবা আমাকে বাসায় নিয়ে এক দফা ধোলাই দিলেন। তখনো জানতাম না পরদিন সকালে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ শাস্তি। বাবা আমাকে টাকা দিলেন। তবে আগের মতো না। গুনে গুনে ২৫ টাকা। এই হঠাৎ দরিদ্রতা আমাকে কাবু করে দিল। বুঝতে পারলাম জীবন কতটা কঠিন। বই টই কেনা তো দূরের কথা। ২ টাকার লজেন্স কেনারও উপায় রইল না। এভাবে কেটেছে একটি বছর। এই এক বছরে কঠিন শিক্ষা হয়েছিল। প্রথমবারের মতো বুঝেছিলাম অর্থনীতি কী জিনিস!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর