সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এশিয়া কাপের ফাইনালে অংশগ্রহণকারী দুই দল

কমিটির তাল-বেতাল

আমি বললাম, কী ধরনের লাভ? ভদ্রলোক বললেন, নানামুখী লাভ বলতে পারেন। যেমন আমাদের বউরা ছোটখাটো কারণে আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন হয়? কারণ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। যদি একটা কমিটি গঠন করে ফেলতে পারি, তাহলে ঐক্য চলে আসবে

ইকবাল খন্দকার

কমিটির তাল-বেতাল

আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় আমার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তার মুখ দেখেই বুঝলাম কোনো একটা মতলব আছে। আমি জরুরি কাজের দোহাই দিয়ে তাকে গেটের কাছে রেখেই চলে যেতে চাইলে সে আমার পথ আগলে দাঁড়াল। বলল জরুরি ভিত্তিতে তার হাজারদশেক টাকা লাগবে। আমি বললাম এত টাকা দিয়ে কী করিস? ছোটভাই বলল, আমাদের পাড়ায় নতুন কমিটি হয়েছে। আর এই কমিটিতে আমাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। আমি বললাম, খুবই ভালো কথা। কিন্তু টাকাটা লাগবে কেন? ছোটভাই বলল, আমাকে এত বড় একটা পদ কি এমনি এমনি দিয়েছে? আমাকে পাড়ার ক্লাবঘরের কিছু আসবাবপত্র কিনে দিতে হবে। যে কয়জন প্রার্থী ছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র আমিই রাজি হয়েছি আসবাবপত্র কিনে দেওয়ার ব্যাপারে। তাই তারা আমাকে দিয়ে দিয়েছে পদটা। আমি কিছুক্ষণ তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বললাম, এত টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়ে লাভ কী? ছোটভাই বলল, ম্যালা লাভ। পাড়ায় যত খেলা হবে, প্রত্যেকটা খেলা হবে আমাদের কমিটির অধীনে। তার মানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সব ক্ষমতা থাকবে আমাদের হাতে। যেহেতু আমি কমিটির সভাপতি, বুঝতেই পারছেন আমার ক্ষমতা কোন লেভেলের! তো খেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কোনো দল যদি হেরে যায় যায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে আমরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাব। থার্ড আম্পায়ারকে দিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত দেওয়াব, পুরো হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবে খেলার। যে দল নিশ্চিত হারত, সে দল জিতে যাবে। বিনিময়ে আমরা সেই দলের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেব। কী কী সুবিধা, সেটা আপাতত না বলাই ভালো। এবার আমি কড়া ধমক লাগালাম ছোটভাইকে। সে আর টাকা চাওয়ার সাহস পেল না। এর দুদিন পরই আমার নিজের পাড়ার ছেলেপুলেদের হানা। না, তারা কোনো টাকা বা চাঁদার জন্য আসেনি। তারা এসেছে পরামর্শের জন্য। কমিটিবিষয়ক পরামর্শ। তারা কমিটি গঠন করবে, কিন্তু কীভাবে করবে বুঝতে পারছে না। তাই আমার পরামর্শ দরকার। আমি বললাম, হঠাৎ কমিটির দরকার পড়ল কেন? তারা বলল, কমিটি না থাকলে নাকি নিজেদের মধ্যে যে একতা আছে, সেটা বোঝা যায় না। আমি বললাম, খুবই ভালো কথা। কমিটি গঠন কর। তবে তোমরা যে ঘরে বসে মিটিং টিটিং করবে, সে ঘরের টেবিল নিজেদের পছন্দ মোতাবেকই কিনবে, সমস্যা নেই। কিন্তু চেয়ার যখন কিনবে, আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কিনবে। তারা বলল, টেবিল কেনার সময় পরামর্শ নিতে হবে না, চেয়ার কেনার সময় নিতে হবে, কেন বলেন তো? আমি বললাম, একতা রক্ষা বা একতা প্রকাশের নামে যেসব কমিটি গঠিত হয়, সেসব কমিটির সদস্যরা যখন মিটিং করতে বসে, তখন প্রায়ই মতের অমিল হয়। তারপর কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি, ঘুষাঘুষি, একপর্যায়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ি। তার মানে কমিটির সদস্যদের মধ্যে যখনই মতের অমিল হবে, তখনই ধকল যাবে চেয়ারের ওপর দিয়ে। অতএব, চেয়ার কেনার সময় শক্তপোক্ত দেখে কেনা উচিত নয় কি? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমরা যারা পাশাপাশি বিল্ডিংয়ে থাকি, তারা কিন্তু একটা কমিটি গঠন করতে পারি। এতে অনেক লাভ। আমি বললাম, কী ধরনের লাভ? ভদ্রলোক বললেন, নানামুখী লাভ বলতে পারেন। যেমন আমাদের বউরা ছোটখাটো কারণে আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন হয়? কারণ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। যদি একটা কমিটি গঠন করে ফেলতে পারি, তাহলে ঐক্য চলে আসবে। বউরা যখন তখন আমাদের বাজারে পাঠাতে চাইলেও যাব না। বলব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। আবার সারা দিন বাসায়ও থাকতে হবে না, ফুটফরমায়েশও খাটাতে পারবে না। আমরা থাকব কমিটি ঘরে। প্রচুর মিটিং সেমিনার করব। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের বউরা মিলে যদি একটা কমিটি গঠন করে ফেলে আর আমরা যখন মিটিংয়ের নাম করে ক্লাবঘরে বসে আড্ডা দেব, তখন যদি তারা সম্মিলিতভাবে হানা দেয়, তখন কী করবেন? ভদ্রলোক কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, বুঝেছি, ক্লাবঘরের জানালায় গ্রিল লাগানো যাবে না। খোলা রাখতে হবে। যাতে বিপদ দেখলে...

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর