শিরোনাম
সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাচ্চা ও কাচ্চা

আলিম আল রাজি

বাচ্চা ও কাচ্চা

শোকসভায় বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে গেছেন তো মরেছেন। আর বাচ্চা যদি হয় একটু ‘বান্দর টাইপ’ তাহলে একদম সর্বনাশের মাথায় বাড়ি।

কয়েক মাস আগের ঘটনা। মহল্লার এক মান্য ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি এসেছেন স্মরণসভায়। এক দম্পতি এসেছেন একটা বাচ্চা নিয়ে। বাচ্চার বয়স ৪ কি ৫ বছর হবে। গায়ে লাল জামা। বাটিকাট দেওয়া চুল। বড় বড় চোখ। সামনের একটা দাঁত নেই। ভীষণ মায়াবী চেহারা। আমি প্রথম থেকেই এই বাচ্চার ওপর নজর রাখছিলাম। চেহারা মায়াবী হলেও বাচ্চার চোখেমুখে দুষ্টামি স্পষ্ট। যাই হোক, শোকসভায় যা হয় তা-ই হচ্ছিল। বক্তারা স্মৃতিচারণ করছিলেন। খুব আবেগঘন পরিবেশ। এক পর্যায়ে মাইকে উঠলেন বাচ্চার বাবা। তিনি ছিলেন মৃত ব্যক্তির বাল্য বন্ধু। ভালো বক্তা। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন তিনি। হলরুমের বাতাস ভারি হয়ে উঠল। বক্তার গলা তখন কাঁপছে। হঠাৎ অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল গোলগোল চোখের সেই মায়াবী চেহারার বাচ্চাটা। সে মায়ের কোল থেকে নেমে দৌড় দিয়ে উঠে গেল মঞ্চে। আপন মনে গাইতে লাগল, ‘দিলবাল দিলবাল... দিলবাল দিলবাল...।’ গানের তালে তালে সে নাচাও শুরু করল। দুই হাত দিয়ে তুড়ি বাজাচ্ছে আর গাইছে, ‘হুশ না কাবাল হায়... ইয়ে হ্যাসা আসার হায়... দিলবাল দিলবাল...।’ খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। যে বক্তার চোখ একটু আগে ছিল আবেগে ছলছল সেই বক্তার চোখ জোড়া এখন রাগে লাল। তিনি কড়া চোখে তাকালেন তার স্ত্রীর দিকে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, ‘এই ফাজিলটা ছাড়া পাইল ক্যামনে? তোমার কোলে না রেখে আসলাম?’ বেচারি মা অপরাধ মেনে নিয়ে কোনো মতে বাচ্চাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিলেন। কিন্তু বাচ্চার গান আর থামে না। সে হেলে দুলে গাইছেই, ‘দিলবাল

দিলবাল...।’ মা তার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিলেন। এখনকার বাচ্চাদের সব উৎপাতের চিকিৎসাই হচ্ছে হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া। চিকিৎসায় কাজ হলো। বাচ্চা সংগীত চর্চা থামিয়ে চুপ হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর আলোচনা সভায় আবার শোক ফিরে এলো। বক্তা বক্তৃতা দিচ্ছেন। এদিকে বাচ্চা মোবাইল টিপে যাচ্ছে। হঠাৎ আবার বাচ্চার গলা। বক্তৃতারত স্মৃতিকাতর বাবাকে উদ্দেশ করে বাচ্চার চিৎকার, ‘আব্বু উউউউউ... নিলু আন্টি ফোন দিছে। আমি ফোন ধরব?’

বাবা বাচ্চার দিকে তাকিয়ে কী ইশারা দিলেন বোঝা গেল না। তবে বাচ্চার গলা শোনা গেল একটু পরেই। ‘হ্যালো, নিলু আন্টি? আব্বু তো বাথরুমে। আপনি কেমন আছেন?’

বাচ্চার মা কোনোভাবে বাচ্চাকে থামালেন।

বাচ্চার বাবা খুব শখ করে বক্তৃতা লিখে এনেছিলেন। শেষের দিকে নিশ্চয়ই খুব আবেগ টাবেগ ছিল। সেই বক্তৃতা শেষ না করেই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। এক হাতে বাচ্চা আরেক হাতে স্ত্রীকে ধরে হন হন করে শোকসভা থেকে বেরিয়ে গেলেন। বেচারার জন্য মায়াই হচ্ছিল আমাদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর