শিরোনাম
সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাল পাকা গরমে

ইকবাল খন্দকার

তাল পাকা গরমে

গরম বাড়ার একটাই কারণ, তা হচ্ছে মেয়েদের ছলনা। আমি ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বললাম, গরম বাড়ার সঙ্গে মেয়েদের ছলনার সম্পর্ক কী? বন্ধু বলল, সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মেয়েরা ছ্যাঁকা দেয় বলে ছেলেরা ছ্যাঁকা খায়। আর যে ছেলেরা ছ্যাঁকা খায়, তারা দিনরাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে...

 

আমার এক ছোটভাই কথায় কথায় বলল, কাঁঠাল কিংবা তাল, কোনোটাই কিন্তু কাঁচা খাওয়া যায় না। হয়তো খাওয়া যায়, তবে আসল স্বাদটা পেতে হলে পাকানো জরুরি। অথচ কাঁঠাল পাকানো সাংঘাতিক কঠিন। কেন কঠিন? কারণ, কাঁঠাল পাকাতে হয় কিলিয়ে। কাঁটাওয়ালা একটা জিনিসের পর কিল মারা কি এত সহজ? এদিকে তাল পাকাতে কোনো কষ্টই হয় না। গরম পড়লেই পেকে যায়। তো যে জিনিস পাকানো কঠিন সেই জিনিসের তুলনায়... ছোটভাইকে কথা শেষ করতে দিলাম না। কারণ, তার কথার মর্মার্থ ততক্ষণে আমি বুঝে ফেলেছি। আর এটা তো বুঝেছিই, এখন যে গরমটা পড়েছে, গরমের পরিভাষায় এই গরমটাকেই তাল পাকা গরম বলা হয়। এই গরম নিয়ে আমার এক প্রতিবেশী আজগুবি একটা মন্তব্য করে বসল গতকাল। বলল, আগে তো মনে করতাম চুল বুঝি বয়সে পাকে। পরে জানলাম চুল বাতাসেও পাকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে চুল পাকে গরমে। আমি নড়েচড়ে বসলাম। বলে কী ভদ্রলোক! গরমে চুল পাকে কীভাবে? প্রতিবেশী বলল, একটা মানুষের দৈর্ঘ্য কত? সাড়ে তিন হাত। তার মানে মানুষের মাথার অবস্থান মাটি থেকে সাড়ে তিনহাত উপরে। আর একটা তালগাছের দৈর্ঘ্য চল্লিশ পঞ্চাশ হাত। তো গরম যদি ওই চল্লিশ পঞ্চাশ হাত উপরে উঠে তাল পাকিয়ে দিতে পারে, তাহলে সাড়ে তিন হাত উপরে উঠে চুল কেন পাকিয়ে দিতে পারবে না? প্রতিবেশীর এই আজগুবি কথায় আমাকে কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকতে হলো। আর এই চুপ মেরে থাকতে গিয়েই হঠাৎ মনে হলো আমার এক বন্ধুর কথা। কদিন আগে গরমে যখন পাগল হওয়ার দশা, তখন সে বলল কয় ডিগ্রি গরম পড়েছে একটু জানা দরকার। চল শাহবাগে যাই। আমি অবাক হলাম, শাহবাগে কেন? গেলে বড়জোর আগারগাঁও যেতে পারি। যেহেতু ওইখানে আবহাওয়া অফিস আছে। তারা নিশ্চয়ই গরমের ব্যাপারে একটা তথ্য দিতে পারবে। বন্ধু বলল, আবহাওয়া অফিসের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে হরেক কৌতুক প্রচলিত আছে। অতএব আগারগাঁও যাওয়ার চেয়ে শাহবাগ যাওয়াই ভালো। আমি বললাম, শাহবাগে গরম পরিমাপের নতুন কোনো অফিস বা দফতর চালু হয়েছে নাকি? বন্ধু বলল, আরে না। যদি দেখি তাল পেকে গেছে, তাহলে বুঝতে পারব চল্লিশ ডিগ্রির কাছাকাছি গরম পড়েছে। শাহবাগের জাদুঘরের সামনে বড় একটা তালগাছ আছে দেখেছিস না? আমার এক খালাতভাই বলল, এই যে দিনদিন গরম বেড়েই যাচ্ছে, তার কারণ কী? আমার পাশেই ছিল আমার এক বন্ধু।  ছাত্রজীবনে বার কয়েক ছ্যাঁকা খেয়ে সে এমনভাবে ব্যাঁকা হয়েছে যে, মেয়েদের কোনো বিষয়কেই সে সোজা চোখে দেখে না। তো এই বন্ধু বলে উঠল, গরম বাড়ার একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে মেয়েদের ছলনা। আমি ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বললাম, গরম বাড়ার সঙ্গে মেয়েদের ছলনার সম্পর্ক কী? বন্ধু বলল, সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মেয়েরা ছ্যাঁকা দেয় বলে ছেলেরা ছ্যাঁকা খায়। আর যে ছেলেরা ছ্যাঁকা খায়, তারা দিনরাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। দীর্ঘশ্বাসের কিন্তু একটা উত্তাপ আছে। আছে না? তো দৈনিক যদি লাখ লাখ ছেলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, গরম বাড়বে না তো শীত বাড়বে? আমার এক ভাবী বললেন, যা গরম পড়েছে, তাতে আপনার ভাইয়ের খরচ একটু বেশিই পড়ছে বৈকি। আমি বললাম, এসি কেনার কারণে? ভাবী বললেন, আরে না। গরম বেশি তো! বাসায় এসিও সেভাবে কাজ করে না। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলে চলে যাই রোজ। আর শপিংমলে গেলে টুকটাক কেনাকাটা তো করতেই হয়, নাকি?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর