সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শর্ত প্রযোজ্য

ইকবাল খন্দকার

শর্ত প্রযোজ্য

বসতে দিলে শুতে চাওয়ার বদভ্যাস মানুষের বহুদিনের। দিন যত যাচ্ছে, বদভ্যাসটা বেড়ে বেড়ে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এখন মানুষ বসতে দিলে শুধু শুতেই চায় না, শুয়ে ঘুমিয়েও পড়ে। তাও আবার নরমাল ঘুম নয়। নাকডাকা সহযোগে ঘুম। দেখা গেল নাকডাকার কারণে আশপাশের লোকজনের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু যদি এ নাক ডাকার প্রতিবাদ করা হয়, দেখা গেল উল্টো ধমক মেরে বসে। বসতে না দিলেই তো শুতে চাওয়ার কিংবা ঘুমিয়ে নাকডাকার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এই যেমন ধরেন কিছুদিন আগে আমার এক ছোটভাই তার এক বন্ধুকে মেসে থাকতে দিল। কেন থাকতে দিল? কারণ, গ্রাম থেকে আসার পর তার কোথাও থাকার জায়গা ছিল না। হয় রাস্তায় থাকতে হতো, না হয় চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে বসে রাত কাটাতে হতো। আমার ছোটভাই করল কী, মেসে থাকতে দিয়ে বলল, এক দুই সপ্তাহ যা থাকার দরকার হয়, থাক। তারপর নিজে একটা সিট নিয়ে কোথাও উঠে পড়। এরপর কেটে গেল চার-পাঁচ মাস। সে কোথাও সিটও নিল না, ছোটভাইয়ের মেসও ছাড়ল না। পাশাপাশি আরও নানাবিধ সুবিধা গ্রহণ করতে গিয়ে ছোটভাইকে এমন অবস্থায় ফেলে দিল যে, এখন তাকে দুই দিন পর পরই হাসপাতালে যেতে হয়। কেন জানেন? কারণ, সে ছোটভাইয়ের লুঙ্গিও ব্যবহার করে, গামছাও ব্যবহার করে। ফলে চুলকানি রোগের বাম্পার ফলন। ডাক্তারের কাছে যাও, মলম আনো, আনতে থাকো এবং আনতেই থাকো। আমার এক বন্ধু বলল, আমার এক চাচাতো ভাইয়ের মোবাইল চুরি হয়ে গেল হঠাৎ করে। কিন্তু সে যে নতুন ফোন কিনবে, সেই সামর্থ্য তার ছিল না। আমার মায়া হলো। আমি করলাম কী, আমার একটা মোবাইল তাকে দিয়ে দিলাম। আর তখনই ঘটল বসতে দিলে শুতে চাওয়ার ঘটনা। আমি ঘটনার বিস্তারিত শুনতে চাইলাম। বন্ধু শোনাল, আমি তাকে আমার একটা মোবাইল দেওয়ার পরপরই সে বলল, মোবাইলটার যে কালার, এই কালারটা তার পছন্দ নয়। তাই সে খোলসটা চেঞ্জ করতে চায়। আমি প্রথমে অনুমতি দিতে না চাইলেও পরে দিলাম। কিন্তু না, শুধু অনুমতি দিয়েই মুক্তি পাওয়া গেল না। মোবাইলের ‘খোলস’ পাল্টানোর টাকাও দিতে হলো। কারণ, তার কাছে নাকি খাওয়ার টাকাও নেই। আমি বললাম, খাওয়ার টাকা নেই, তাহলে এত শখ কেন? তার জবাব, আমার কাছে নেই তো কী হয়েছে! তোর কাছে তো আছে। আমি বললাম, আমার কাছে আছে বলেই কি তোকে দিতে হবে? সে বলল, যেহেতু মোবাইলটা তুই দিয়েছিস, অতএব যা যা চেঞ্জ করতে হয়, সেগুলোর টাকাও তুই-ই দিবি। দেখা গেল আমি আমার টাকা দিয়ে চেঞ্জ করলাম। পরে তোর মনে হলো আমি কম দামি জিনিস লাগিয়েছি। তখন তুই মনে কষ্ট পেলি। আমি তোর মনে কীভাবে কষ্ট দিই বল! অবশ্য তুই যদি মনে করিস পুরান মোবাইলের এটা ওটা চেঞ্জ করা ঝামেলার কাজ, তুই কিন্তু আমাকে নতুন একটা মোবাইল কিনে দিতেই পারিস। আমি একদম মাইন্ড করব না।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, কী বিপদে পড়লাম বলেন তো দেখি। একজনকে বসতে দিলাম, মানে আশ্রয় দিলাম, এখন সে এমন অবস্থা করেছে যে, আমাদের সবার ডেঙ্গু হওয়ার জোগার। আমি বললাম, কী হয়েছে একটু খুলে বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, আমার এক বন্ধুকে পুলিশ খুঁজছে। তো আমি করলাম কী, তাকে ছাদে জায়গা দিলাম। সে কদিন থাকার পরই কী করেছে জানেন? কবুতর কিনে নিয়ে এসেছে। কবুতরের জন্য নাকি ছাদ অতি উত্তম জায়গা। ব্যস, কবুতরের মল আর পানির বাটিতে জমে থাকা পানি মিলে ডেঙ্গু মশার মোক্ষম আভাসভ‚মি হয়ে গেল। এখন তাকে কিছু বলার জন্য ছাদে গেলে মশা তো কামড়ায়ই, তার পোষা কবুতরগুলোও ঠোকর মারতে আসে। কী একটা অবস্থা বলেন দেখি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর