সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুজুগে গুজব

ইকবাল খন্দকার

হুজুগে গুজব

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

গার্লফ্রেন্ডকে মিথ্যা কথা কয়দিন বলা যায়! তাই আজকাল সে যেই প্রশ্নটা করে, অমনি বলে উঠি, হ্যাঁ, ‘জব’ খুঁজছি। আর মনে মনে বলি, গুজব খুঁজছি। মানে নতুন কী গুজব শুরু হলো, সেটা খুঁজি, আর গার্লফ্রেন্ডকে সাত-পাঁচ বোঝাই। আর মনে মনে গাই, এমনি করে যায় যদি দিন যাক না, গুজবটা জাস্ট ‘জব’ হয়েই থাক না...

 

আমার এক বন্ধু বলল, একটা বিষয় আমাকে খুবই ভাবাচ্ছে। আমি নিশ্চিত, কদিন পর কতিপয় ডাক্তারের অবস্থা কাহিল। আমি অবাক হয়ে বললাম, বলিস কী! বন্ধু বলল, না বুঝে মন্তব্য করলে তো বিপদ। আমি কি সব ডাক্তারের কথা বলেছি? আমি বলেছি কানের ডাক্তারদের কথা। এবার আমি প্রায় আকাশ থেকে পড়লাম, এসব তুই কী বলছিস! কানের ডাক্তাররা না খেয়ে মরবে কেন? তুই জানিস, শব্দদূষণ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে কানের সমস্যা। আর ততই বাড়ছে কানের ডাক্তারদের আয়। বন্ধু বলল, বয়ান কম দে। আমি কী বলি শোন। আজকাল তো মানুষের কানই নেই। কানের ডাক্তাররা চিকিৎসা করবে কোথায়? আর আয় করবে কীভাবে? এবার আমার তাজ্জব হওয়ার পালা। আরে বলে কী! আজকাল মানুষের কান নেই মানে? বন্ধু বলল, কান নেই মানে কান নেই। কেন নেই জানিস? কারণ, সবাই গুজবে ‘কান দিচ্ছে’। তো কান দিতে দিতে কারও কানই আর থাকছে না। আবার কান চিলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টাও যেহেতু সবাই বিশ^াস করছে, অতএব কান বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে এটা চোখ-কান বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। এই জন্য বলি কী... আমি বললাম, তোর আর কিছু বলার দরকার নেই। কারণ, কী বলেছিস, কী বলতে চাচ্ছিস, সব আমি বুঝে ফেলেছি। আসলে গুজব নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি ভোগান্তিতে আছি। এবার আমার আরেক বন্ধু বলে উঠল, গুজব নিয়ে সবাই ভোগান্তিতে থাকলেও আমি কিন্তু ভোগান্তিতে নেই। আমার জন্য গুজব জিনিসটা আশীর্বাদ বয়ে এনেছে বলতে পারিস। আমি অবাক হয়ে বললাম, গুজব আবার আশীর্বাদ বয়ে আনে কীভাবে? একটু বুঝিয়ে বলবি কি? বন্ধু বলল, না মানে আমার গার্লফ্রেন্ড সবসময়ই জিজ্ঞেস করে চাকরি বাকরি খুঁজছি কি-না। তুই তো জানিসই, আমি জন্মের অলস। চাকরি খোঁজা আমাকে দিয়ে হবে না। কিন্তু গার্লফ্রেন্ডকে মিথ্যা কথা কয়দিন বলা যায়! তাই আজকাল সে যেই প্রশ্নটা করে, অমনি বলে উঠি, হ্যাঁ, ‘জব’ খুঁজছি। আর মনে মনে বলি, গুজব খুঁজছি। মানে নতুন কী গুজব শুরু হলো, সেটা খুঁজি, আর গার্লফ্রেন্ডকে সাত-পাঁচ বোঝাই। আর মনে মনে গাই, এমনি করে যায় যদি দিন যাক না, গুজবটা জাস্ট ‘জব’ হয়েই থাক না। আমার এক ছোটভাই মোটামুটি একই ধরনের একটা কথা বলল। যার কথা বলছি, তার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। জিজ্ঞেস করলাম, কী করছিস? সে বলল, ফুলটাইম কিছু করছি না। পার্টটাইম করছি। আমি জানতে চাইলাম, কী? ছোটভাই বলল, এই তো, পার্টটাইম গুজব ছড়াচ্ছি। কখনো সরাসরি, কখনো ফেসবুকে। যদিও এই পার্টটাইম কাজের জন্য বেতন পাই না। এটা আসলে একটা আফসোসের ব্যাপার। আমি বললাম, আফসোসের কিছু নেই। এই পার্টটাইম কাজের জন্য বেতন না পেলেও উত্তম-মাধ্যম পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। বেস্ট অব লাক। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, এই যে দুই দিন পরপর একটা করে গুজব বের হচ্ছে, এটা বন্ধের কি কোনো উপায় নেই? আমি বললাম, থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। কিছু তুলা কিনে কানে গুঁজে রাখলেই দেখবেন আর কোনো গুজব শুনতে হচ্ছে না। আমার কথাটা ভদ্রলোকের খুব পছন্দ হলো বলে মনে হলো না। আমার নিজের কাছেও মনে হলো, কথাটা খুব একটা বুদ্ধিদীপ্ত হয়নি। তাই আবার বললাম, যদি গুজব বন্ধ করতে চান, তাহলে আপনাকে কয়েকটা জিনিস বন্ধ করতে হবে। যেমন, বাসার নেট কানেকশন, ডিস কানেকশন, মোবাইল সিম ইত্যাদি। ভদ্রলোক বললেন, দুুর, এইগুলো বন্ধ করা কি সম্ভব? আমি বললাম, আপনি গুজব ঠেকাতে আপাতত মুখ বন্ধ রাখতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর