সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মই লাই দিয়ে মাথায় তোলা

তোমার ভাই এবং আমার বান্ধবী, দুজনই মাস্ক পরে ডেটিংয়ে তো যায়ই, কারোনাকালে মুখ ঢাকার কী ধরনের গ্লাস বের হয়েছে না, ওইগুলোও পরে বের হয়...

ইকবাল খন্দকার

মই লাই দিয়ে মাথায় তোলা

► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

সকাল সকাল আমার এক বড়ভাইয়ের ফোন। রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম কোনো সমস্যা কি না। বড়ভাই বললেন, সমস্যা মানে, বিরাট সমস্যা। যা বুঝলাম, মাথায় টাক পড়ে যাবে। আমি বললাম, হঠাৎ করে টাক পড়ার আশঙ্কা কেন তৈরি হবে? বড়ভাই বললেন, সমস্যা হচ্ছে বাসায় পোষা বিড়ালের স্বভাব। তবে এ স্বভাব সে প্রকাশের সুযোগ পেত না, যদি আমি তাকে লাই দিয়ে মাথায় না তুলতাম। আমি বললাম, আপনি কিন্তু অযথাই প্যাঁচাচ্ছেন। দয়া করে বলে ফেলেন আসল ঘটনাটা কী। বড়ভাই বললেন, আসল ঘটনাটা আসলে বলতে চাইনি। তাই প্যাঁচাচ্ছিলাম। লজ্জার ব্যাপার তো! আমার বাসায় একটা বিড়াল আছে, তুই তো জানিস। তো বিড়ালটা এমনিতে মাঝেমধ্যেই আমার কোলে ওঠে। ওইদিন কী মনে করে যেন মাথায় তুললাম। আর বিড়ালটা কী মনে করে যেন আমার মাথায়ই টয়লেট সেরে দিল। এরপর কমপক্ষে ১০ প্রকারের শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুইলাম। তবু কেমন জানি গন্ধ গন্ধ লাগে। আমি বললাম, আপনাকে দুইটা কথা বলি। প্রথমটা মনে পড়ছে না এখন। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- কাউকে লাই দিয়ে মাথায় তুলতে নেই। সেটা মানুষ হোক আর বিড়ালই হোক। আমার এক ছোটভাই বলল, আমাদের বাসায় কাজের যে ছেলেটা, তাকে আমি খুব আদর করি। নিজের ভাইয়ের মতো দেখি। কিন্তু সে যে এর প্রতিদান এমনভাবে দেবে বুঝতে পারিনি। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে। ছোটভাই বলল, কী আর হবে বলেন। এই যে আমার গায়ের ময়লা শার্টটা দেখছেন, আমি কি এইরকম ময়লা শার্ট গায়ে দিয়ে বাইরে বের হওয়ার মতো ছেলে? আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি। কাজের ছেলেটা তোর কাপড়-চোপড় ঠিকমতো ধুচ্ছে না। ছোটভাই বলল, আপনি কিছুই বুঝতে পারেননি। আমি আমার নতুন একটা জামা রেডি করে রেখেছিলাম আজকে গায়ে দিয়ে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু ওই যে বললাম তাকে আদর করে করে মাথায় তুলে ফেলেছি। আর সে এই প্রতিদানটাই আমাকে দিয়েছে। আমি গোসল করে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি আমার নতুন শার্টটা গায়ে দিয়ে সে বের হয়ে গেছে। তার নাকি ডেটিং আছে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আগে আমার বাসায় যত ভাড়াটিয়া উঠেছে কারও সঙ্গে ভালো করে কথাটা পর্যন্ত বলিনি। কিন্তু করোনার কারণে যেহেতু অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে, ভাড়াটিয়া পাওয়া কঠিন, তাই এবার যারা উঠেছে তাদের সঙ্গে প্রথম থেকেই বন্ধুর মতো আচরণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা যে এটাকে ‘লাই’ হিসেবে নেবে, বুঝতে পারিনি। ব্যস, যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছাদের গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছিলাম। গতকাল দেখি তালা ভাঙা। পরে জানতে পেরেছি, কুয়াশা কুয়াশা ভাব থাকায় বারান্দায় নাকি সেলফি ভালো আসছিল না। ভালো লাইটিংয়ে সেলফি তোলার জন্য ছাদে গেছে এবং তালা ভেঙে তারপর গেছে। আমার এক ভাবি বললেন, তোমার ভাইকে নিয়ে আর পারি না। কিছুদিন আগে আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে সে যা করছে, কী আর বলব। আমি বললাম, একটু বিস্তারিত বলেন। ভাবি বললেন, বিস্তারিত বলার আসলে কিছু নেই। কারণ, নিজের স্বামী। নিজের স্বামী তার স্ত্রীর বান্ধবীকে নিয়ে নিয়মিত ঘুরতে যায়, এটা বলতে গেলে নিজেরই তো লজ্জা। আমি বললাম, এখন থেকে তক্কেতক্কে থাকবেন। দেখবেন আপনার বান্ধবীকে নিয়ে উনি কখন, কোথায় ডেটিংয়ে যান। ভাবি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, লাভ নেই। তক্কেতক্কে থাকলেও ওকে ধরা যায় না। কারণ, তোমার ভাই এবং আমার বান্ধবী দুজনই মাস্ক পরে ডেটিংয়ে তো যায়ই, কারোনাকালে মুখ ঢাকার কী ধরনের গ্লাস বের হয়েছে না, ওইগুলোও পরে বের হয়। এ অবস্থায় কি কাউকে চেনা যায়, বল?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর