সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাপা পিঠার কারিগর

আফরীন সুমু

ভাপা পিঠার কারিগর

আমার ছোটভাই নিরব। ভার্সিটিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। যতটা না ভার্সিটির প্রস্তুতি তার চেয়ে বেশি প্রেমের প্রস্তুতি। কারণ বাসা থেকে বলা হয়েছিল স্কুল-কলেজে পড়াকালীন কোনো প্রেম অ্যালাউড না। তবে ভার্সিটিতে উঠে গেলে প্রেমে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। ওর ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ও বুঝতে পেরেছে রান্নাবান্না জানা ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে। এ যুগের মেয়েরা রান্নায় অত্যন্ত উদাসীন। তাই সে পড়াশোনার পাশাপাশি রান্নার চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চিন্তা থেকে সে অবশ্য শেফ হতে চেয়েছিল। বিছানা ঝাঁটার মাধ্যমে মা ওর সেই চিন্তা বহু আগেই ঘুচিয়ে দিয়েছেন। কদিন আগে নিরব সরবে ঘোষণা দিয়েছে এই শীতের পিঠাপুলি সে আমাদের বানিয়ে খাওয়াবে। মা কাজে ব্যস্ত থাকায় ভালোভাবে শুনতে পাননি। আমি ততটা গুরুত্ব দিলাম না। সেদিন বিকালে আমি আর মা লেপের তলায় বসে গল্প করছি। নিরব প্লেটে কতগুলো ভাপা পিঠা এনে সামনে ধরল। সকালে দেখেছিলাম ও চালের গুঁড়া, গুড় এসব কিনে এনেছে। আর দুপুরের পর থেকে কিচেনে ঘুটুরমুটুর করছে। নইলে বিশ্বাসই করতাম না এত চমৎকার ভাপা পিঠা ও বানাতে পারে। মুখে দিয়ে অবাক! স্বাদ একদম ঠিকঠাক। মা তিনটে পিঠা শেষ করে চার নম্বরটা মুখে দিতে দিতে বললেন, ‘বল দেখি গোড়া থেকে কেমন করে করলি।’ নিরব বলতে শুরু করল। আমিও আগ্রহ নিয়ে শুনছি। ‘ভাপা পিঠা বানাতে যা যা লাগে বাজার থেকে সব কিনে আনলাম। ইউটিউবে দেখেছিলাম কি করে বানাতে হয়। তারপর মোড়ের দোকান থেকে একডজন ভাপা পিঠা কিনে আনলাম।’ কথা শুনে হাঁ হয়ে গেলাম। ও বলে যাচ্ছ, ‘তারপর ওখান থেকে দুটো পিঠা আমি খেয়ে দেখলাম। গুড় আর নারিকেল কম পরেছে বলে মনে হলো। তাই ওগুলোর ওপর একটু করে গুড় আর নারিকেল ছড়িয়ে দিয়ে ওভেনে একটু বেক করে নিলাম। এরপর আরেকটা খেয়ে দেখলাম। একদম পারফেক্ট।’ মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। ও বলল, ‘যেহেতু আমি আজ টেস্টটা ধরতে পেরেছি সুতরাং কাল আমি নিজে নিজে বানালে ঠিক এ রকম হবে।’ আমাদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ও সামনে থেকে পালাল। পরের দিন নিরব সত্যি সত্যি ওর নিজ হাতে তৈরি ভাপা পিঠা খাওয়াল। সেটা হয়েছিল পরিমাণমতো গুড় আর নারিকেল দিয়ে চালের গুঁড়ার ভর্তা। পরদিন আবার চেষ্টা করল। গুড় আর নারিকেলের পরিমাণ ঠিক থাকলেও চালের গুঁড়ার কোথায় একটা সমস্যা থেকেই যচ্ছে। তৃতীয় দিন নিরব বলল, ‘গুড়, নারিকেলের ভাপা পিঠা আসলে খুব কমন। মোড়ের দোকান থেকে কিনেই খাওয়া যায়। তাই এটা তার হাতে হবে না। তার হাতে হবে বিশেষ কিছু। বিশেষ কিছু হিসেবে সে বানাবে ইলিশ ভাপা। তবে মা কিছুতেই ওকে ফ্রিজে রাখা ইলিশটা দিতে রাজি হলেন না। ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে ইলিশের মতো দেখতে একটা মাছ নিয়ে এলো। সন্ধ্যায় তৈরি হলো ইলিশ ভাপা। কিন্তু কাঁটার কারণে ওই ভাপা পিঠা মুখে দেওয়া গেল না। সান্ত্বনা হিসেবে আমি একটু করে ভেঙে নিয়ে ফেলে দিয়ে এলাম। যেহেতু কাঁটার কারণে ইলিশ ভাপা হলো নয়, তাই পরের দিন নিরব একই রেসিপিতে বানিয়ে ফেলল পাঙ্গাশ ভাপা। দেখতে ভালোই হয়েছিল। ওপরে নারিকেলের পরিবর্তে পিঁয়াজের বেরেশতা দিয়েছিল। অনেক কষ্টে ও মাকে একটা পিঠা খাওয়াতে রাজি করল। আমি টিউশনির নাম করে আগেই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। এসে শুনি মা ওকে ওর সব ভাপা পিঠা এবং ভাপা পিঠার সব সরঞ্জামসহ বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। আমি অবশ্য জানি ওর দৌড় কতদূর। ছাদে গিয়ে দেখি ও চিলেকোঠায় মাকড়সার ঝুলের মধ্যে বসে প্ল্যান করছে সবজি ভাপা বানানোর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর