গত বছরের ঘটনা। তখন কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। অন্যদিকে আবুলের বিয়ের চার মাস পেরিয়েছে। সে সময় আবুল টের পেল শ্বশুর সাহেব কৃপণ স্বভাবের লোক। ছয় মাস পর সেই ভাবনা আরও গাঢ় হলো। শুধু কৃপণ স্বভাব না বলা চলে, এক নম্বরের কিপটা। কিপটামির একটা লিমিট থাকে, শ্বশুরের কোনো লিমিট নেই। শ্বশুরমশাই কিপটামির স্বভাব নিয়ে লিমিটের বাইরে বিচরণ করছেন। বিয়ের পর জামাইকে একদিনও দাওয়াত করেননি। ভেবেছিল করোনাকালের সময়টা যাক, তারপর হয়তো দাওয়াত করবেন। আর ঈদের সময়ে শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত এমনিতেই জামাইদের প্রাপ্য। কিন্তু যেরকম ভাবনা সেরকম কিছুই ঘটল না। ঈদের ৯ দিন হতে চলল শ্বশুর সাহেব একটিবারও ফোন দিয়ে আসার জন্য বলেননি। যখনই ফোন করেন করোনা নিয়ে প্যাঁচাল। সঙ্গে বিখ্যাত উপদেশ, ‘জামাই বাবাজি ঘরে থাক। বাড়ির বাইরে যেও না। দিনকাল খুব খারাপ, প্রতিদিন দুই হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে।’ ভেবে দেখল শ্বশুরের আশায় বসে থাকলে তার দিন চলবে না, শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিল শ্বশুরবাড়ি যাবে। দাওয়াত ছাড়াই। একদিন সকালে সে ফোন করল শ্বশুর সাহেবকে। জামাইয়ের আসার কথা শুনেই যেন আঁতকে উঠলেন। মুখের ওপর নিষেধ করতে পারলেন না। আবুলের মনে খুশি খুশি ভাব। বিয়ের পর প্রথম যাচ্ছে শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু মুশকিল হলো যাবে কীভাবে? চারদিকে লকডাউন। গাড়ি নেই রাস্তায়। না থাকুক, হেঁটে যাবে। মাত্র তো চল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার। এদিকে শ্বশুর সাহেব পড়েছেন মহাবিপদে। জামাইয়ের আসার কথা শুনেই বিচলিত হয়ে স্ত্রীকে জানালেন। কীভাবে ঠেকানো যায় পরামর্শ করলেন। তার স্ত্রী চালাক মানুষ। বললেন, ‘আপনি চিন্তা কইরেন না। জামাইরে আসতে দেন। দেখেন আমি কী ব্যবস্থা করি।’ বারো ঘণ্টা হেঁটে আবুল খুশিতে গদগদ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসে হাজির। জীবনে প্রথমবার এসেছে। কিন্তু গেটের কাছে আসতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। গেটে লেখা- ‘এই বাড়ি করোনা সন্দেহে লকডাউন করা হয়েছে। ভিতর প্রবেশ করা এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’ যে রাস্তা ধরে আবুল এসেছিল, সেই রাস্তা ধরে ভোঁ-দৌড়।
- নবাবগঞ্জ, ঢাকা।