শিরোনাম
সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অগ্রিম ভাবনা-চিন্তা

ইকবাল খন্দকার

অগ্রিম ভাবনা-চিন্তা

আমার এক বড়ভাই বললেন, করোনা বাড়ছে, বাড়তেই পারে। তবে যেভাবে বাড়ছে সেটা আসলে আমার পছন্দ না। মানে জ্যামিতিক হারে না বেড়ে যদি নরমাল হারে বাড়তো, খুবই ভালো হতো। প্রস্তুতি নেওয়ার একটা সময় পেতাম। আমি বললাম, রোগবালাই তো আর আপনার কথামতো চলবে না! রোগবালাই চলবে নিজের মর্জিমতো। তবে আপনার যেহেতু টিকা দেওয়া আছে অতএব এত টেনশন করার কিছু নেই। বড়ভাই বললেন, আমি সম্ভবত ব্যাপারটা তোকে বোঝাতে পারিনি। সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। করোনা দ্রুত বেড়ে গেলে বউকে ম্যানেজ করার মতো সময় পাওয়া যায় না। অথচ ধীরে-সুস্থে বাড়লে এক দিনে ম্যানেজ করতে না পারি, এক সপ্তাহে তো পারতাম! আমি অবাক হয়ে বললাম, কিন্তু বউকে ম্যানেজ করতে হবে কেন? বড়ভাই বললেন, কেন নয়? লকডাউন দিয়ে ফেললে তো সারা দিন বাসায়ই থাকতে হবে। তার মানে বউয়ের চোখে চোখে। যদি আগেভাগেই বউকে ম্যানেজ করতে না পারি তাহলে বাসায় থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাবে। আর এমনভাবে দম বন্ধ হয়ে আসে যে, মনে হয় আমার অসুখ হয়েছে। মানে শ্বাসকষ্ট আরকি।

আমার এক ছোটভাই বলল, যদি আবার লকডাউন দিয়ে দেয় তাহলে আমার বাড়িওয়ালা বিস্তর খুশি হবে। আমি জানতে চাইলাম, কারণ কী? ছোটভাই বলল, আমার বাড়িওয়ালার আসলে কোনো কাজকর্ম নেই। লুঙ্গি পরে সারা দিন ঘুরে আর পান খায়। অবশ্য আরেকটা কাজ করে। লোকজন পেলেই আড্ডায় মেতে ওঠার চেষ্টা করে। আমাদের রুমে যে কতবার ঢুকতে চেয়েছে আড্ডা মারার উদ্দেশ্যে! কিন্তু আমি এবং আমার বন্ধুরা সারা দিন ব্যস্ত থাকি বলে ঢোকার চান্স পায়নি। ভয়ে আছি, যদি লকডাউন দিয়ে দেয় তাহলে তো সারা দিন ঘরেই থাকতে হবে। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে নেবে বাড়িওয়ালা। যখন তখন ঢুকে পড়বে আড্ডা দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, লকডাউনের সময় তো তোরও বোরিং লাগবে। এ অবস্থায় আড্ডা দেওয়ার জন্য যদি একটা মানুষ পাওয়া যায়, মন্দ কি? ছোটভাই বলল, না, মন্দ কিছু না। তবে এইটাই মন্দ, এই লোক যখন কথা বলতে থাকে তখন তার মুখ থেকে পানের রসযুক্ত থুতু ছিটে। এবার বোঝ, তার সামনে বসে আড্ডা দেওয়াটা কী পরিমাণ যন্ত্রণার! এ যন্ত্রণা কি করোনার যন্ত্রণার চেয়ে কোনো অংশে কম?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আবার যদি লকডাউন দেয় তাহলে আর কিছু হোক বা না হোক, আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটা দেখা দেবেই দেবে। আমার উচিত এখন থেকেই বেশি করে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট কিনে রাখা। আমি বললাম, লকডাউনের সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের কী সম্পর্ক? প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, নরমাল টাইমে বাইরে থাকতে পারি, তাই যেখানে ইচ্ছা সেখানে, যখন ইচ্ছা তখন খেতে পারি। এ জন্য গ্যাস্ট্রিকের কোনো সমস্যাও হয় না। কিন্তু বাসায় থাকলে নানাবিধ সমস্যা। প্রথম সমস্যা, গ্যাস না থাকার অজুহাত দিয়ে আপনার ভাবী দুপুরের রান্না করে রাতে। তার মানে ততক্ষণ আমাকে উপোস থাকতে হয়। আর উপোস থাকলে তো গ্যাস্ট্রিক হবেই। আমি বললাম, ভাবীর উচিত কোনো অজুহাত না দিয়ে সময়ের রান্না সময়ে করা। প্রতিবেশী বললেন, তাতেও খুব বেশি লাভ নেই। কারণ, তার হাতের রান্নার যা টেস্ট! বাপরে বাপ, ভয়াবহ। মুখের কাছেই নেওয়া যায় না। তাহলে গ্যাস্ট্রিক হবে না তো হবেটা কী? আমি বললাম, লকডাউনের সময় আপনি নিজে তাকে রান্না শিখিয়ে দেবেন। প্রতিবেশী বললেন, আমি কী রান্না শেখাব? আমি তো আলুভর্তা ছাড়া কিছু বানাতে পারি না। তো তাকে এই আলুভর্তা বানানো শেখালে তো তিনবেলা আলুভর্তা খেয়ে গ্যাস্ট্রিক আরও বাড়বে। আমার এক বড়ভাই বললেন, স্বপ্নে দেখলাম আবার লকডাউন দিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই ভয়ে আছি। আমি জানতে চাইলাম, কীসের ভয়? বড়ভাই বললেন, বুয়া না আসার। কারণ, এর আগেরবার যখন লকডাউন দিল তখন আমাদের বিল্ডিংয়ের কমিটি বুয়া ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন মহাবিপদে পড়েছিলাম। এবার বোধহয় আবার সেই বিপদে পড়তে যাচ্ছি। আমি বললাম, বিপদটা কী? বাসার সব কাজ নিজ হাতে করার বিপদ? বড়ভাই বললেন, এ বিপদ তো আছেই। অন্য বিপদও আছে। আমি জানতে চাইলাম অন্য কী বিপদ। বড়ভাই বললেন- না, মানে বুয়া আসা- যাওয়ার মধ্যে থাকলে যেটা হয়, বাসার জিনিসপত্র গোছানো থাকে। এখানে-সেখানে কোনো জিনিস পড়ে থাকে না। তো বুয়া না আসলে যেহেতু এখানে-ওখানে এই জিনিস, সেই জিনিস পড়ে থাকে, তোর ভাবী খেপে গেলে আমার দিকে ছুড়ে মারার জন্য জিনিস খুঁজতে হয় না। হাতের কাছেই পেয়ে যায়। যেমন গত লকডাউনে বাচ্চার ক্রিকেট বল ছুড়ে মেরেছিল। এরপর পুরো লকডাউন আমি হেলমেট পরে বাসায় অবস্থান করেছি। এবারও যদি হেলমেট পরে থাকতে হয়, বিপদ না? আসলে হেলমেট পরে চা খাওয়াটা একটু কষ্টকর হয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর