শিরোনাম
সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘরোয়া পরিবেশ

রাফিউজ্জামান সিফাত

ঘরোয়া পরিবেশ

মজনুর প্রতি শেফালির গুরুতর অভিযোগ। মজনু তাকে আগের মতো ভালোবাসে না। এমনকি সে সংসারের কোনো দায়িত্ব পালন করে না। অথচ বিয়ের আগে শেফালিকে পটানোর সময় বড় গলায় মজনু বলেছিল, ‘সংসারের সব দায়িত্ব আমার, তুমি রাজরানীর মতো শুধু হুকুম করবা।’ সে সরল মনে বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাস করে ধরা খেয়েছে। বাস্তবে দেখল মজনু অলস। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতেও তার অনীহা। মজনুর এমন অলসতা দেখে সে খুব রাগারাগি করল। দুইবেলা রান্না বন্ধ রাখল। এতে অবশ্য মজনুর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে অনলাইনে খাবার অর্ডার করে খেয়ে নিল। যে মজনু আগে সারা দিন শেফালির জন্য পাগলপ্রায় ছিল বিয়ের পর সেসব প্রেম ভালোবাসা উধাও। মজনু বলে, ‘প্রেম ভালোবাসা বাইরে দেখানোর জিনিস না।’ তার কথা শুনে শেফালি আরও রেগে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি করে। মজনু তখন ‘একটু হাওয়া খাইয়া আসতেছি’ বলে বাইরে বেরিয়ে যায়। পরে পরিবেশ ঠান্ডা হলে ঘরে ফিরে। চুপচাপ টিভি দেখতে বসে যায়। শেফালির সব অভিযোগ সে এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। এমন সময় চলে এলো লকডাউন। শেফালি পেয়ে গেল জীবনের সেরা সুযোগ। মজনু আর ‘একটু হাওয়া খাইয়া আসতেছি’ বলে ঘরের বাইরে যেতে পারত না। কয়েকবার বাইরে যেতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু পুলিশের দৌড়ানি খেয়ে ঘরে ফিরে আসতে হয়েছিল। মজনু ঘরের কাজে হাত লাগায়। সে প্রতিদিন ঝাড়ু হাতে পুরো ঘর পরিষ্কার করল। মাকড়সার জাল পরিষ্কার করল। প্রতিদিন রাতে শেফালিকে সে গান শোনায়। সকালে আগে আগে ওঠে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দেয়। ঘরে শান্তি আর শান্তি। তারপর এক দিন লকডাউন শেষ হলো। মজনুকে আর ঘরে খুঁজে পাওয়া গেল না। কোনো বিষয় নিয়ে শেফালি রাগারাগি করলে ‘একটু হাওয়া খাইয়া আসতেছি’ বলে মজনু আবার বাইরে চলে যায়। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শেফালি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিলে সে কুটকুট করে হাসে। সারা দিন টো-টো করে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। ঘরে ফিরে ফেসবুক স্ক্রল করে, টিভি দেখে। আর শেফালির কাছে এটা-সেটা খাওয়ার বায়না ধরে। শেফালির রাগ মান-অভিমানকে সে পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু হঠাৎ এক দিন শেফালি দেখে মজনু তার জন্য একগুচ্ছ লাল গোলাপ আর তাজা বেলি ফুলের মালা নিয়ে হাজির। বিয়ের আগে এমন কাজ সে করত। বিয়ের পর আর ফুল নিয়ে আসেনি। শিউলি তখন রান্নাঘরে। মজনু শিউলির খোঁপায় বেলি ফুলের তাজা মালা গুঁজে ওর হাতে এক বক্স নতুন কেনা কসমেটিকস উপহার তুলে দিল। তাকে জোর করে ঘরে নিয়ে এসে বলে, ‘সংসারের জন্য অনেক করেছ, এখন পালঙ্কে শুয়ে বিশ্রাম নাও। আজ থেকে আমি রান্না করব।’ মজনুর এমন আচরণে শেফালি অবাক হয়। সে বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চায়, ‘ঘটনা কী!’ মজনুর ততক্ষণে রান্নায় গভীর মনোযোগ, সে মুখে কিছু বলে না। কিন্তু শেফালির মনের সন্দেহ যায় না। সে গালে হাত দিয়ে মজনুর এমন পরিবর্তনের কারণ ভাবতে ভাবতে ফেসবুকে ঢুকে। আর তখনই নজরে আসে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি উপদেশমূলক পোস্ট, ‘আবারও লকডাউনের সম্ভাবনা, বউয়ের মন রক্ষা করে চলুন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর