সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

গরমের শিক্ষা

এ জন্যই কে জানি বলেছেন, পরের জন্য খুঁড়লে গর্ত, নিজেকেই পড়তে হয় সেই গর্তে। নাহ, ছন্দ মিলল না। ছন্দ না মিললেও সমস্যা নেই। গর্তে পড়লে ব্যথা ঠিকই পাবে...

ইকবাল খন্দকার

গরমের শিক্ষা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, ছাত্রজীবনে পড়েছি, ‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে...’। কিন্তু এখন দেখছি, উদার হওয়ার শিক্ষা আকাশ দেয়নি। বরং সূর্য দিয়েছে। যেহেতু সূর্যের উত্তাপের কারণেই গরমের এই বাড়াবাড়ি। আমি বললাম, বুঝলাম। কিন্তু সূর্য বা গরম কী ধরনের শিক্ষা দিল, তা বুঝতে পারলাম না। বুঝিয়ে বলা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোটভাই বলল, খুব সহজ ব্যাপার। কিছুদিন আগেও আমি লুঙ্গি পরা নিয়ে নানা ধরনের কথা শুনিয়ে বেড়াতাম। মানে যারা লুঙ্গি পরে, তাদের নিয়ে মজা নিতাম আরকি। কিন্তু এখন আমি লুঙ্গির ব্যাপারে এতটাই উদার হয়ে গেছি যে, নিজে তো একসঙ্গে তিন খানা লুঙ্গি কিনেছিই, ভাই-ভাতিজাকেও কয়েকটা কিনে দিয়েছি। বলি কী, গরম ইস্যুতে উদার হয়ে ভালোই হয়েছে। বিস্তর আরামে আছি।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, গরম কিন্তু ভালোই শিক্ষা দিল। আমার বউ একদম সোজা হয়ে গেছে। আমি জানতে চাইলাম গরম কী শিক্ষা দিয়েছে এবং কীভাবে তার বউকে সোজা বানিয়েছে। প্রতিবেশী বললেন, আমার বউ আমাকে বারান্দায় যেতে দিত না। কারণ, সে সন্দেহ করত, আমি পাশের বাসার বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকি। যে বারান্দায় সাধারণত ওই বাসার সুন্দরী মেয়ে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু এখন গরমের চোটে আমার বউই গিয়ে এই বারান্দায় দাঁড়ায়। আমি বললাম, কিন্তু আপনি যে বললেন উনি সোজা হয়ে গেছেন। সোজা হলেন কোথায়? গরমের চোটে মানুষ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানো মানেই কি সোজা হয়ে যাওয়া? প্রতিবেশী বললেন, আরে নারে ভাই, এখানে ঘটনা আরও আছে। গরমের চোটে আমার বউ এখন যখন-তখন বারান্দায় ছুটে গেলেও আরামে দাঁড়াতে পারে না। কারণ, ওই বারান্দার মালিক এসি লাগিয়েছে। আর ওই এসির গরম বাতাস এসে লাগে আমাদের বারান্দায়। এমনিতেই গরম, তার উপরে এসির বাতাসের গরম। মোটামুটি সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার দশা। আপনার ভাবি সিদ্ধ না হলেও সোজা হয়েছে। ‘স’তে ‘সিদ্ধ’, ‘স’তে সোজা। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ওই বারান্দার মালিককে এসি লাগানোর কুবুদ্ধিটা দিয়েছিল আমার বউই। যাতে গরম বাতাসটা এসে আমার গায়ে লাগে, আমি বারান্দায় দাঁড়াতে না পারি, সুন্দরীদের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পারি। আর এখন...

এ জন্যই কে জানি বলেছেন, পরের জন্য খুঁড়লে গর্ত, নিজেকেই পড়তে হয় সেই গর্তে। নাহ, ছন্দ মিলল না। ছন্দ না মিললেও সমস্যা নেই। গর্তে পড়লে ব্যথা ঠিকই পাবে। ছন্দ না মেলার কারণে ব্যথা যে কম পাবে, তা কিন্তু না। আমার এক বন্ধু বলল, আমার খুব দুঃখ ছিল, যেহেতু মাথায় টাক পড়ে গেছে। কিন্তু এই যে গরম, এই গরম আমাকে শিক্ষা দিয়েছে, কোনোরকম দুঃখ থাকা চলবে না। জীবনে যা আছে, তা নিয়েই সুখী থাকতে হবে। আমি বললাম, এটা খুবই ভালো একটা শিক্ষা। কিন্তু শিক্ষাটা কীভাবে দিল, কোন প্রক্রিয়ায় দিল, একটু ভেঙে বললে ভালো হতো। বন্ধু বলল, ভেঙে বলার আসলে কিছু নেই। বিষয়টা ভাঙা অবস্থায়ই আছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ বারবার মুখ ধোয়। এতে কিন্তু আরাম লাগে। আর আমার মাথায় সুবিশাল টাক থাকার কারণে শুধু মুখ না, আমি মাথাও ধুতে পারি। তার মানে আমার ডবল আরাম। সুতরাং টাক নিয়ে ভাবনা, আর না আর না। আমার এক ভাবি বললেন, যা বুঝলাম, গরম একেবারে উচিত শিক্ষা দিয়ে চলেছে। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? ভাবি বললেন, কীভাবে আবার? আগে আপনার ভাই সারা দিন আমার সঙ্গে চেঁচামেচি করত। কারণে অকারণে ধমকাধমকি করত। আর এখন ধমকাধমকি করবে দূরের কথা, গলা দিয়ে ভালো করে আওয়াজই বের হয় না। কী বলে, আমি বুঝব কী, সে নিজেও বুঝতে পারে না। একেই বলে গরমের উচিত শিক্ষা। আমি বললাম, ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন। ভাবি বললেন, অল্পতে শেষ করি। আপনার ভাই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সারা দিনই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খায়। পারলে সারা দিনই মাথায় বরফ দিয়ে রাখে। ব্যস, এতে তার স্থায়ী ঠান্ডা লেগে গেছে। গলা বসে গেছে। ফলে গলা দিয়ে স্বর বের হয় না। যা বের হয়, তাকে ‘বাতাস’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে। আমার এক ছোটভাই বলল, গরম আমার বাড়িওয়ালাকে ভালোই শিক্ষা দিয়েছে। এখন বেচারার প্রায় প্রতিদিনই ১০০ টাকা করে বাড়তি খরচ। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? ছোটভাই বলল, আগে এই লোক ছাদে উঠতে দিত না কাউকে। এখনো দেয় না। তালা মেরে রাখে। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা কেন তার এই নিয়ম মানতে যাবে? তাই প্রতিদিনই ছাদের গেটের তালা ভাঙে আর প্রতিদিনই ১০০ টাকা করে খরচ। সঙ্গে রিকশা ভাড়ার খরচটাও যোগ হয়ে থাকতে পারে। না, না, ছাদে উঠতে রিকশা লাগে না। তালা আনতে যেতে রিকশা লাগে আরকি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর