সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গুড়ের লাভ লোভ

ইকবাল খন্দকার

গুড়ের লাভ লোভ

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড় ভাই চিরকুমার। তবে প্রেমের ব্যাপারে তিনি সাংঘাতিক আগ্রহী। কিছুদিন পরপরই তার প্রেমিকা পাল্টে যায়। গতকাল তিনি কথায় কথায় বললেন, সেই কলেজ জীবনে যাদের সঙ্গে প্রেম করতাম, তারা স্মার্ট ছিল। অনেক কিছু বুঝত। কিন্তু এখন যাদের সঙ্গে প্রেম করি, তারা কিচ্ছু বোঝে না। কিচ্ছু বোঝে না বলতে তাদের আউট নলেজ একদমই নেই। তাদের সঙ্গে যখন গ্রামের কোনো ব্যাপারে কথা হয়, তারা হাঁ করে থাকে। অনেক সময় উল্টাপাল্টা জবাব দেয়। আমি জানতে চাইলাম, কী রকম? বড় ভাই বললেন, কী রকম আবার। আমার এক আল্ট্রামডার্ন প্রেমিকাকে কথা প্রসঙ্গে বললাম, গুড়ের লাভ পিঁপড়ায়ই খেয়ে ফেললো। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিকার মুখ হাঁ হয়ে গেল। আমি জানতে চাইলাম, কী বিষয়? এভাবে হাঁ করে আছো কেন? প্রেমিকা বলল, তুমি কিসের লাভের কথা বললে? আমি বললাম, গুড়, গুড়। এবার প্রেমিকার বিস্ময় দেখে কে। সে বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, গুড় কী জিনিস। এটার আকার বা রং কেমন। এটা দিয়ে কী করে। এবার চিন্তা কর, যদি এদের আউট নলেজ থাকত, তাহলে কি বুঝতো না, গুড় হলো এক প্রকারের মিষ্টিজাতীয় জিনিস! বুঝতো কি না বল! আমি বললাম, তা তো বটেই। আপনি এক কাজ করেন। প্রেমিকার বাড়িতে এক দলা গুড় পাঠিয়ে দেন। বড়ভাই এবার হেসে উঠলেন। বললেন, তুই বলার আগেই গুড়ের একটা দলা আমি পাঠিয়েছিলাম। পরে শুনলাম প্যাকেটই নাকি খোলেনি ভয়ে। কারণ, ওরা মনে করেছিল কেউ কাগজে মুড়িয়ে বোমা টোমা পাঠিয়েছে। আমার এক বন্ধু বললো, এই যে মানুষ কথায় কথায় বলে গুড়ের লাভ নাকি পিঁপড়ায় খায়। সত্যিই কি এটা হয়? আমি বললাম, অবশ্যই হয়। না হলে মানুষ কথাটা বলবে কেন? বন্ধু বললো, তা তো বটেই। তবে আমার একটা প্রশ্ন। এই যে বলা হচ্ছে গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খায়, কোন কালারের পিঁপড়ায় খায়? পিঁপড়া তো সাধারণত দুই কালারের হয়ে থাকে। লাল এবং কালো। কোনটা? আমি বললাম, কোনটা, তা তো জানি না। তবে লালটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, গুড়ের কালারও লাল, পিঁপড়ার কালারও লাল। আমার ধারণা, বেশি বেশি গুড় খাওয়ার কারণেই পিঁপড়ার কালারটা লাল হয়েছে। আমার এক বন্ধু বললো, মানুষ যে বলে গুড়ের লাভ নাকি পিঁপড়ায় খায়, কথাটা একদম ঠিক না। কারণ, আমি খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছি, কোনটা গুড়ের লাভ আর কোনটা নরমাল জিনিস, সেটা পিঁপড়ারা বোঝে না। যদি বুঝতো, তাহলে বাসায় রোজ রোজ এত কীটনাশক ছিটাতে হতো না। আমি বললাম, তোর কথার আগামাথা বুঝতে পারিনি। একটু বুঝিয়ে বল। বন্ধু বললো, বোঝানোর আসলে কিছু নেই। আমার বাসার ডাইনিং টেবিলে সারা বছরই পিঁপড়া ওঠে। এই পিঁপড়ারা গুড়ের লাভও চেনে না, অন্য জিনিসপত্রও চেনে না। যদি চিনতো, তাহলে গতকাল চাম্পা কলা কিনে আনার পর টেবিলে পিঁপড়ার এই উৎসব বসতো না। তুই চিন্তা কর, কই গুড়ের লাভ আর কই চাম্পা কলা। আরে বেআক্কেলের দল পিঁপড়া, তোরা গুড়ের লাভ খাস ঠিক আছে, চাম্পা কলা খেতে হবে কেন? কলা কি কোনোভাবে গুড়ের শ্রেণিভুক্ত হয়? হওয়া সম্ভব? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খাওয়া মানে হচ্ছে, যার লাভ পাওয়ার কথা, সে না পেয়ে অন্য কেউ পাওয়া। আমি বললাম, এইটুকু বোঝার মতো জ্ঞান তো জনাব হয়েছে। আপনি মূলত কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা একটু বলেন। প্রতিবেশী বললেন, কী আর বোঝাবো বলেন! কষ্ট করে টাকা রোজগার করি আমি, আর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে শপিং করে আপনার ভাবি। অতএব বুঝতেই পারছেন গুড়ের লাভ কীভাবে পিঁপড়া খায়। ও হ্যাঁ, পিঁপড়া কিন্তু একা চলে না। দলে বলে চলে। না, মানে আমার শ্বশুরবাড়ির সদস্যসংখ্যা ম্যালা তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর