সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অনলাইন ফলোয়ার

ইকবাল খন্দকার

অনলাইন ফলোয়ার

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, বুঝলাম না বিষয়টা। আমি তাড়া খেয়ে চলে আসতে বাধ্য হলাম, অথচ আমার প্রতিপক্ষ ঠিকই বুক ফুলিয়ে দাপট দেখিয়ে গেল। অথচ আমি ফলোয়ারের দিক থেকে তার চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। নাহ্, বিষয়টা একদমই মাথায় ঢুকছে না। আমি বললাম, তোর কথাও কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছে না। কী বলছিস, বুঝিয়ে বল। অর্ধেক বলবি আর অর্ধেক পেটে রাখবি, এটা হতে পারে না। হওয়া উচিত না। ছোটভাই বলল বিষয়টা হচ্ছে গিয়ে, পাশের পাড়ার একটা মেয়েকে আমিও পছন্দ করি, ওই পাড়ার আরেকটা ছেলেও পছন্দ করে। এদিকে মেয়েটার অবস্থা এমন, সে পারলে গেয়ে ওঠে, ‘বিধি তুমি বলে দাও আমি কার’। তো মেয়েটার কথা বাদ। আমার আর ওই ছেলেটার কথা বলি। আমাদের মধ্যে বিরাট গ-গোল লেগে গেল। যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। কিন্তু এই যুদ্ধে হারলে তো চলবে না। এজন্য আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলাম। লিখলাম আমার যত ফলোয়ার আছে, তারা যাতে চৌরাস্তার মোড়ে চলে আসে। স্ট্যাটাসটা আমি দিলাম এজন্য, যেহেতু আমার বিশ হাজারের মতো ফলোয়ার। এর মধ্যে থেকে দুই হাজারও যদি আমার পক্ষ নিয়ে মারামারি করতে আসে, তাহলে কী একটা অবস্থা হতে পারে! এদিকে আমার প্রতিপক্ষ ছেলেটার ফলোয়ার মাত্র দেড় হাজারের মতো। সে ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাসও দেয়নি। দেখলাম কয়েকজনকে ফোন করেছে। বিশ মিনিটের মধ্যে ত্রিশ-চল্লিশ জন লোক আমাকে ঘিরে ফেলল। তারপর মাইর কাকে বলে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ হাজারের মতো ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও আমার ডাকে যে কেউ সাড়া দিল না, আমাকে সেভ করতে এলো না। আমি পড়ে পড়ে মাইর খেলাম আর দিনশেষে আমাকে আমার বাপ আর ভাই-ই উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলেন, তাহলে এই ফলোয়ার লইয়া আমি কী করিব? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, মানুষের কথা শুনে তাজ্জব হই। কীভাবে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করে? আমি হলে তো পাগল হয়ে বনবাসে চলে যেতাম। আমি বললাম, চাইলেই আজকাল আপনি বনবাসে যেতে পারবেন না। কারণ, বনই নেই। প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, এটা তো একটা কথার কথা বললাম। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমি সত্যি সত্যি বুঝতে পারছি না মানুষ এত এত ফলোয়ার নিয়ে কীভাবে নরমাল থাকে। আমি হলে তো... এবার আমি থামালাম প্রতিবেশীকে। বললাম ঘটনা খুলে বলার জন্য। তিনি হালকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ভাইরে খুলে বলার কিছু নেই। আমার একমাত্র ফলোয়ার হচ্ছে আমার বউ। আমি কোথায় যাই, কী করি, কার সঙ্গে কথা বলি, সব ফলো করে। এই এক ফলোয়ারের যন্ত্রণায় আমার জীবন তেজপাতা। আর যাদের হাজার হাজার লাখ লাখ ফলোয়ার, তারা বেঁচে আছে কীভাবে? আমি বললাম, তারা বেঁচে আছে মানইজ্জতের সঙ্গে। কারণ, যার যত ফলোয়ার, তার তত ইজ্জত। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই ইজ্জত ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ। আপনার ফলোয়ারের আধিক্য দেখে যে পাড়ার মুদি দোকানদার আপনাকে ইজ্জত করবে, বাকিতে জিনিস দেবে বা স্পেশাল ডিসকাউন্ট দেবে, তা কিন্তু না। সুতরাং আপনিও বলতেই পারেন-এই ফলোয়ার লইয়া আমি কী করিব? আমার এক বন্ধু বলল, শুনলাম আজকাল নাকি ফলোয়ার এই আছে, এই নেই। ব্যাপারটা কী? আমি বললাম, মনে করেন এটা করোনার মতো একটা ব্যাপার। করোনার যেমন কিছুদিন পর পর একটা ঢেউ আসে, ফলোয়ারের বিষয়টাও হয়তো এখন থেকে এমনই হবে। কিছুদিন থাকবে, কিছুদিন থাকবে না। আবার এমনও হতে পারে, করোনা তাড়াতে যেমন টিকা দিতে হয়, তেমনি ফলোয়ারের জন্যও টিকা দিতে হতে পারে। তবে ফলোয়ার তাড়াতে নয়, বরং বাড়াতে। অথবা ধরে রাখতে। আমার এক বড়ভাই বললেন, অনলাইন ফলোয়ার নাকি কোনো কাজেই আসে না। তারপরও মানুষ ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য এমন ব্যতিব্যস্ত হয় কেন? আমি বললাম, ব্যতিব্যস্ত হওয়ার একটাই কারণ, ‘ফলোয়ার’ শব্দটা আজকাল এমন একটা জরুরি জিনিসের নামের পাশাপাশি উচ্চারিত হচ্ছে, সবাই ধরে নিচ্ছে, একদিন বুঝি ওই জরুরি জিনিসটার মতোই জরুরি হয়ে যাবে ‘ফলোয়ার’ জিনিসটা। বড়ভাই জানতে চাইলেন, সেই জরুরি জিনিসটা কী? আমি বললাম, সেই জিনিসটা হচ্ছে এমন এক জিনিস, যেটা ছাড়া গরমে আপনি বাঁচতেই পারবেন না। আরে ফ্যান। শোনেন না মানুষ বলে ‘ফ্যান-ফলোয়ার’। আমার ধারণা, সবাই মনে করে সিলিং ফ্যানের মতোই জরুরি জিনিস হচ্ছে ফলোয়ার। এজন্য এই জিনিস বাড়ানোর জন্য এত ব্যস্ততা আর কি। আমার এক ভাবি বললেন, শুনলাম ফলোয়ার নাকি কেনা যায়? আমি বললাম, কবি বলেছেন, টাকা হলে বাঘের চোখও কেনা যায়। আর ফলোয়ার কোন্ ছাই! তবে ফলোয়ার কেনার চেয়ে দুই বস্তা আলু কিনে রাখা ভালো। অফ সিজনে দ্বিগুণ দামে বেচতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর