শিরোনাম
সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৃষ্টি এবং বৃষ্টি

ইকবাল খন্দকার

বৃষ্টি এবং বৃষ্টি

• আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর • কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, বৃষ্টি নিয়ে আর পারি না। খালি যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা। সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা কী জানেন? বৃষ্টি এলেই শুধু ভুনাখিচুড়ি খাওয়ার ইচ্ছা হয়। আমি বললাম, ভুনাখিচুড়ি খাওয়ার ইচ্ছা হতেই তো পারে। এখানে যন্ত্রণার কী আছে? এক কাজ করবি, বৃষ্টি এলেই ঝটপট খিচুড়ি রান্না করে ফেলবি। ব্যস, ল্যাঠা চুকে গেল। ছোটভাই বললো, ভাই, নিজে যদি খিচুড়ি রান্না করতে পারতাম, তাহলে তো কোনো সমস্যাই ছিল না। রান্না করতে পারি না, এটাই তো যন্ত্রণার মূল কারণ। আমি জানতে চাইলাম ছোটভাই যে মেসে থাকে, সেখানে বুয়া আছে নাকি নেই। ছোটভাই বলল, বুয়া ছাড়া কি চলে? বুয়া অবশ্যই আছে। আমি বললাম, তাহলে আর সমস্যা কী? বৃষ্টি নামলে বুয়াকে বলবি ভুনা খিচুড়ি রান্না করে দিতে। ছোটভাই আধাগাল হেসে বলল, এই তো আসল পয়েন্টে এসেছেন ভাই। বৃষ্টি নামলে যে বুয়াকে বলবো খিচুড়ি রান্না করে দিতে, সে তো বৃষ্টির পূর্বাভাস পেলে বাসা থেকেই বের হয় না। তখন আমাদের মেসে হাঁড়িই চড়ে না, আবার খিচুড়ি। আমি বললাম, তাহলে বুয়াকে একটা ছাতা কিনে দিস। যাতে বৃষ্টির মধ্যেও আসতে পারে। ছোটভাই বলল, তাকে গত তিন বছরে যে পরিমাণ ছাতা কিনে দেওয়া হয়েছে, সে ছাতার ব্যবসা দিতে পারবে। অথচ তার অজুহাত একটাই, ছাতা নাকি ‘ইন্দুরে’ কেটে ফেলে। আমি বললাম, তাহলে এক কাজ করিস। ছাতা কিনে দেওয়ার পাশাপাশি এক পোটলা ইঁদুরের বিষও কিনে দিস।

আমার এক বড় ভাই বলল, এই যে বৃষ্টি এলে আর থামতে চায় না, এটা থেকে মুক্তির উপায় কী? আমি বললাম, বৃষ্টি তো ভালো জিনিস। আর ভালো জিনিস বলেই বৃষ্টি নিয়ে কবিরা এত এত কবিতা লিখেছেন। বড় ভাই বললেন, এই তো আমার কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিটা দিয়ে দিলি। দুঃখের কথা কী আর বলল। বৃষ্টি শুরু হলেই তোর ভাবি আনমনা হয়ে যায়। আমার সঙ্গে আর কথা বলতে চায় না। আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি। ভাবি তাহলে ভিতরে ভিতরে কবি। বড়ভাই রেগে বললেন, ধুর, তোর ভাবি কবি না। আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে সে যার সঙ্গে প্রেম করে বেড়াতো, ওই বেটা মনে হয় ফেসবুক কবি ছিল। এই কারণে বৃষ্টি নামলেই ওই বেটার কথা স্মরণ করে। উফ! কবে যে বৃষ্টি থামবে! আমার এক বন্ধু ফোন করে জানতে চাইলো ভালো হেলমেট কোথায় পাওয়া যায়। আমি জানতে চাইলাম সে মোটরসাইকেল কিনেছে কি না। বন্ধু বলল, আরে না, বৃষ্টির দিন তো! এ জন্য কিনলাম। আমি বললাম, বৃষ্টির সঙ্গে হেলমেটের কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, বৃষ্টি পড়তে থাকলেও আমাকে তো বাইরে বের হতেই হয়। আর বৃষ্টির মধ্যে বাইরে বের হলে যেটা হয়, গাড়ির ছিটানো পানিতে সারা শরীর ভিজে যায়। আমি বললাম, গাড়ি ছিটানো পানিতে সারা শরীর ভিজে গেলে রেইনকোট কিনবি। হেলমেট কেন? বন্ধু বললে, শরীর ভিজলে শরীর শুকানো সহজ। চুল ভিজলে শুকানোটা কঠিন। যদি চুলটা হয় আলগা। আমি জানতে চাইলাম তার চুল আলগা কি না। বন্ধু এবার এই বলে ফোন কেটে দিল, নেটওয়ার্কে নাকি খুব সমস্যা।

আমার এক ছোটভাই বলল, বৃষ্টি জিনিসটা খুবই খারাপ। মানুষকে কষ্ট দেয়। বিশেষ করে আমাকে। আমি জানতে চাইলাম বৃষ্টি তাকে কীভাবে কষ্ট দেয়। ছোটভাই বললো, আমি আর আমার প্রেমিকা পাশাপাশি বিল্ডিংয়ে থাকি। জানালা দিয়ে একজন আরেকজনকে দেখি। কিন্তু বৃষ্টি নামলেই জানালা দিয়ে পানি ঢুকে বিছানা-বালিশ ভিজে যাওয়ার অজুহাত দিয়ে তারা জানালা বন্ধ করে দেয়। জানালা বন্ধ মানে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। কষ্ট আর কষ্ট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর